ট্রেনের শৌচাগারের বর্জ্য পড়ে রেললাইন আর নোংরা হবে না। দূষণ কমাতে এবং রেললাইনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ট্রেনে পুরনো শৌচাগার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করছে রেল। দূরপাল্লার ট্রেনে প্রচলিত শৌচাগার পরিবর্তন করে এ বার ‘গ্রিন টয়লেট’ বা জৈব শৌচাগার চালু করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সারা দেশে ন’টি দূরপাল্লার ট্রেনে জৈব শৌচাগারের ব্যবস্থা হয়েছে। পাঁচ-ছ’বছরের মধ্যে বেশির ভাগ ট্রেনেই এই শৌচাগার লাগানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে রেল বোর্ড।
‘গ্রিন টয়লেট’ কী?
সাধারণত বাড়ির ‘স্যানিটারি সিস্টেম’ বা শৌচাগারের বন্দোবস্তে যা হয়ে থাকে, এটা সে-রকমই। ট্রেনে এখন যে-শৌচাগার আছে, তাতে বর্জ্য গিয়ে পড়ে রেললাইনে। গ্রিন টয়লেট চালু হলে বর্জ্য আর বাইরে বেরোবে না। তা জমা হবে ট্রেনের নীচে অত্যাধুনিক ট্যাঙ্কে। সেই ট্যাঙ্কে রাখা বিশেষ ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণু ওই বর্জ্য ভেঙে দেবে। তার পরে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় কিছুটা গ্যাস ও কিছুটা পরিস্রুত জল হয়ে বেরিয়ে যাবে। এই পদ্ধতিতে পরিবেশে কোনও রকম দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা নেই।
ওই বিশেষ ব্যাক্টেরিয়া আসবে কোথা থেকে? |
গ্রিন টয়লেট। —নিজস্ব চিত্র |
রেল সূত্রের খবর, জৈব শৌচাগারে দু’ধরনের ব্যাক্টেরিয়া দরকার। ‘অ্যারোবিক’ আর ‘অ্যান্যারোবিক’। অ্যান্যারোবিক ব্যাক্টেরিয়া দেশে তৈরি হলেও অ্যারোবিক ব্যাক্টেরিয়া বিদেশ থেকে আমদারি করতে হয়। অ্যারোবিক ব্যক্টেরিয়া খুব তাড়াতাড়ি বর্জ্যকে ভেঙে ফেলতে পারে। তাই আপাতত গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের গ্রিন টয়লেটে এই ব্যাক্টেরিয়াই ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যান্য ট্রেনে দেওয়া হচ্ছে অ্যান্যারোবিক ব্যাক্টেরিয়া।
২০১০-’১১ সালে ট্রেনে নতুন ধরনের এই শৌচাগার লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়। রেলে নতুন প্রযুক্তির যে-সব কামরা (এলএইচবি) এসেছে, তাতেই প্রথম জৈব শৌচাগার লাগানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। ২০১০-’১১ সালে ৫৭টি এবং ২০১১-’১২ সালে ১৬৯টি এবং চলতি আর্থিক বছরে এ-পর্যন্ত ২১০টি জৈব শৌচাগার দিয়ে সম্পূর্ণ করা হয়েছে দূরপাল্লার ন’টি ট্রেন। তার মধ্যে আছে নয়াদিল্লি-রেওয়া রুটের রেওয়া এক্সপ্রেস, বারাণসী-গ্বালিয়র রুটের বুন্দেলখণ্ড এক্সপ্রেস প্রভৃতি।
মূলত ট্রেনের শৌচাগারের বর্জ্য লাইনে পড়ে দূষণ ছড়ানো এবং রেললাইনের ক্ষতি এড়াতেই নতুন শৌচাগারের ব্যবস্থা হচ্ছে। বর্তমান ব্যবস্থায় বর্জ্য পড়ে রেললাইনের ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে। লাইনের তলার মাটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা বাড়ছে দুর্ঘটনার।
সম্প্রতি রেল পরিষেবার উন্নতির ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য কাকোদকর কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। তাদের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ট্রেনের শৌচাগারের বর্জ্য লাইনে তো পড়ছেই। সেই সঙ্গে বর্জ্য ছড়াচ্ছেন রেললাইনের ধারের বাসিন্দারাও। গ্যাংম্যানেরা লাইন সারাতে চাইছেন না। এর মোকাবিলায় ওই কমিটি রেলকে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেছে। তার মধ্যে আছে জৈব শৌচাগার তৈরি, স্টেশন এলাকায় লাইন বরাবর অন্তত দু’তিন কিলোমিটার বেড়া দেওয়া ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশও সম্প্রতি রেলকে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের সঙ্গে মিলিত ভাবে কম খরচে জৈব শৌচাগার তৈরি করতে অনুরোধ করেছিলেন। রেল সেই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। ৫০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে রেল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রক যৌথ ভাবে ব্যয় বহন করবে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে রেলকে একটি ‘নির্মল ভারত এক্সপ্রেস’ চালাতেও অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
রেল বোর্ডের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (তথ্য) চন্দ্রলেখা মুখোপাধ্যায় জানান, ইতিমধ্যে বিভিন্ন ট্রেনে লাগানো জৈব শৌচাগার কেমন কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। তিনি বলেন, “এর পরে প্রয়োজনে শৌচাগারের নকশা পাল্টানো হবে।”
কিন্তু লাইনের পাশের বাসিন্দাদের ঠেকানো যাবে কী ভাবে?
সেটাই এখন রেলের বড় চিন্তা। |