এ-ও এক ‘পরিবর্তন’-এর হাওয়া।
অর্থ মন্ত্রকে এসেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেওয়া একাধিক নীতিগত সিদ্ধান্ত বদলে ফেলছেন চিদম্বরম। কিন্তু তাঁর ফেলে আসা মন্ত্রকে কী ঘটছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন সুশীলকুমার শিন্দে। এবং তার পরেই ভাটা পড়েছে চিদম্বরমের ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি)-তে। সদ্য সমাপ্ত ডিজি সম্মেলনে এই নিয়ে মুখ না খুলে শিন্দে নিজের মনোভাব কিছুটা হলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি হিমঘরেই চলে যাচ্ছে এনসিটিসি? ‘পরিবর্তন’ অবশ্য শুধু একটি ক্ষেত্রেই নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আরও কিছু সূক্ষ্ম বদল এনেছেন শিন্দে। যা চট করে চোখে পড়ে না ঠিকই, কিন্তু প্রশাসনের ঘাঘু কর্তাব্যক্তিরা ভাল ভাবেই তা বুঝতে পারছেন। সব থেকে বড় কথা, ডিজি সম্মেলনের মতো রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের মঞ্চে চিদম্বরম যে ভাবে তাঁদের দায়িত্ব মনে করিয়ে খোঁচা দিতেন, সেটা এ বার শিন্দের মধ্যে একেবারেই দেখা যায়নি। সযত্নেই তা এড়িয়ে গিয়েছেন নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অনেকেই এখন বলছেন, বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা ছিল চিদম্বরমের। শিন্দে ও পথে কোনও ভাবেই হাঁটতে চাইছেন না।
শিন্দে অবশ্য পূর্বসূরির একটা ধারা মেনে চলেছেন এখনও। মাস গেলে নিয়ম করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি বসতেন চিদম্বরম। সেই মতো এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করলেন শিন্দে। কিন্তু সেখানে বুঝিয়ে দিলেন, এনসিটিসি তাঁর অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই।
এনসিটিসি-র যে হিমঘরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা অবশ্য গত সপ্তাহেই টের পাওয়া গিয়েছিল। ডিজি সম্মেলনে এক বারের জন্যও এর উল্লেখ করেননি শিন্দে। চিদম্বরমের মস্তিষ্ক প্রসূত আর একটি প্রকল্প ন্যাটগ্রিড (ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স গ্রিড) নিয়েও বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি তিনি। বরঞ্চ সন্ত্রাস দমনে গোয়েন্দা ব্যবস্থার আদানপ্রদানের জন্য মাল্টি-এজেন্সি সেন্টার (ম্যাক)-এর মতো যে সব চালু ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলিকেই আরও মজবুত করার কথা বলেছেন শিন্দে। গোয়েন্দা ব্যবস্থা উন্নতি করার জন্য পৃথক বাহিনী তৈরির ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
অথচ এই এনসিটিসি নিয়েই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে চিদম্বরমের সংঘাত চরমে উঠেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এনসিটিসি-র বিরুদ্ধে যে অভিযোগটা করেছিলেন, তা হল: এই নতুন সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দেবে। কেন এই অভিযোগ? কারণ, রাজ্য পুলিশকে এড়িয়ে এনসিটিসি-কে গ্রেফতারি ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এই সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো-র অধীনে রাখা নিয়েও আপত্তি ওঠে। পরে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন চিদম্বরম। তবে এনসিটিসি গঠনের প্রস্তাব থেকে সরে আসেননি তিনি। বরং প্রস্তাব দেন, এই কেন্দ্রটিকে সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা হিসেবে গঠন করা হোক। যদিও গ্রেফতারি বা
তল্লাশি নিয়ে রাজ্যের আপত্তি পুরোপুরি মেনে নেওয়া হয়নি। বলা হয়েছিল, একমাত্র আপৎকালীন পরিস্থিতিতেই এনসিটিসি নিজে থেকে অভিযান চালাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, শিন্দে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েই এনসিটিসি নিয়ে চিদম্বরমের প্রস্তাব ক্যাবিনেট সচিবালয় থেকে ফেরত আনিয়েছেন। তা হলে এনসিটিসি গঠন কি আপাতত শিকেয় উঠল? এই প্রশ্নের জবাবে আজ শিন্দে বলেন, “আমি গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। রাজ্যগুলির সঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রীদের আলোচনা করার ইচ্ছে রয়েছে। প্রস্তাবটা খুবই ভাল ছিল, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।” তা হলে ডিজি সম্মেলনে কেন তিনি
বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন, সেই প্রশ্ন অবশ্য থাকছে।
শুধু কি এনসিটিসি বা ন্যাটগ্রিড? পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের কথা বলেও বিতর্ক ডেকে এনেছিলেন চিদম্বরম। সেই আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয় কেন্দ্রকে। অন্ধ্রপ্রদেশে রাজনৈতিক জোরও অনেকটাই কমে যায় দলের। সেই কাঁটা এখনও খোঁচা দিচ্ছে। শিন্দে কি তার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধান দিতে পারবেন? সে দিকেও নজর রাখছেন রাজনীতির কারবারিরা। |