লোক-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত কৃষক পরিবারের সন্তান মুজফ্ফর হোসেনকে জঙ্গিপুর লোকসভা আসনে প্রার্থী করল সিপিএম। তিনি সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদকমণ্ডলী ও রাজ্য কমিটির সদস্যও।
জঙ্গিপুরের সাংসদ ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ায় জঙ্গিপুরে ১০ অক্টোবর উপ-নির্বাচন হচ্ছে। ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় সওয়া এক লক্ষ ভোটে জয়ী হন প্রণববাবু। সিপিএম প্রার্থী ছিলেন মৃগাঙ্কশেখর ভট্টাচার্য।
বাম প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গেলেও শাসক কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী কে হবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে, প্রণব-পুত্র ও নলহাটির বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় প্রার্থী হতে পারেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। দু’একদিনের মধ্যে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী দেশে ফিরবেন। তার পরে তাঁর কাছে অভিজিতবাবুর নাম পেশ করবেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। এ দিন প্রদীপবাবু বলেন,“জঙ্গিপুরের প্রার্থী ঠিক করবে হাইকম্যান্ড। সনিয়া গাঁধী বিদেশে। উনি ফিরলে সিদ্ধান্ত হবে।”
একদা কবিগানের সঙ্গে যুক্ত মুজফ্ফরকে প্রার্থী করার জন্য জেলা সিপিএম নেতৃত্বের প্রস্তাব আলিমুদ্দিন মেনে নেয়। শনিবার দিল্লিতে পলিটব্যুরোর বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে মুজফ্ফরের নাম ঘোষণা করেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। নবগ্রামের শিবপুরের বাসিন্দা মুজফ্ফর দীর্ঘ ১৩ বছর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তিনি বর্তমান কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। মুজফ্ফরকে প্রার্থী করার পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি সংখ্যালঘু এবং কৃষক পরিবারের সন্তান। জেলায় পরিচিত মুখ এই নেতা কোনও গোষ্ঠী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।
মুজফ্ফরের নিজের কথায়, “আমি দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছি। দর্শনে অনার্স নিয়ে পড়তাম। কংগ্রেসে আমলে আইন-আমান্য করতে গিয়ে গ্রেফতার হই। আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।” সংগঠনের পাশাপাশি লোক-সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা, তা নিয়ে পত্রিকা প্রকাশ, আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতি চর্চাও করেছেন।
জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিই (সুতি, জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, লালগোলা ও খরগ্রাম) কংগ্রেসের দখলে। একমাত্র নবগ্রাম সিপিএমের দখলে। তৃণমূলের দখলে রয়েছে সাগরদীঘি। কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করা নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেন, “দলীয় পর্যায়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে ২০০৯ লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূলে জোট হয়েছিল। তার পরে লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে দুই শরিকের যে যেখানে জয়ী হয়েছে, সেখানে সেই দলেরই প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।”
তৃণমূল প্রার্থী না দিলেও এ বারের লড়াই কিন্তু আগের মতো সহজ হবে বলে মনে করছে না কংগ্রেস। দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা, উপ-নির্বাচনে জোট শরিক তৃণমূল খুব বেশি সাহায্য করবে না। তা ছাড়া সংখ্যালঘু ভোট নিয়েও কংগ্রেসের চিন্তা রয়েছে। সর্বোপরি সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। তবে দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “সাংসদ হিসাবে প্রণববাবু জঙ্গিপুরের উন্নয়নের জন্য যে কাজ করেছেন সেটাই কংগ্রেসের বড় পুঁজি।” |