হুগলিতে বেহাল পরিষেবা
শ্রীরামপুর থেকে চণ্ডীতলা, ক্ষোভের আঁচ প্রকাশ পেল সর্বত্র
বিধানসভার স্ট্যাডিং কমিটির সদস্যেরা হাসপাতালে ঢুকতে না ঢুকতেই ফুঁসে উঠলেন রোগীর আত্মীয়-স্বজন। এত দিনের জমে থাকা ক্ষোভের আঁচটা টের পেলেন বিধায়কেরা। তাঁদের নাগালে পেয়ে একের পর এক অভিযোগ জানাতে লাগলেন সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ কেঁদে ফেললেন। কোথাও গিয়ে পাওয়া গেল মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ। শুক্রবার দিনভর হুগলি জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে পরিষেবা প্রদানের যে নমুনা নিয়ে ফিরলেন বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যেরা, তাতে জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘বে-আব্রু’ চিত্রটা পরিস্কার ফুটে উঠল। চণ্ডীতলা, শ্রীরামপুর, চন্দননগর, সিঙ্গুর চিত্রটা সর্বত্রই একই।
সকাল ৯টা নাগাদ চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ঢোকে বিধায়কদের দলটি। দলে ছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, নির্মল মাঝি, শশি পাঁজা, সুনীল মণ্ডল, সুদীপ্ত রায়। ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তনিমা মণ্ডল এবং স্থানীয় বিধায়ক স্বাতী খোন্দকার। ওষুধের স্টোররুমে গিয়ে চোখ কপালে উঠে যায় নির্মলবাবুদের। দেখা যায়, সাপে কাটার প্রতিষেধক, প্রসূতিদের আয়রন ট্যাবলেট, কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক প্রভৃতি বেশ কিছু ওষুধ পড়ে রয়েছে, যেগুলির মেয়াদ কবেই উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। ওষুধগুলি নমুনা হিসেবে সঙ্গে নিয়ে নেন তাঁরা। ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় না বলে অনেকেই অনুযোগ করেন। সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ ওঠে।
ছবি: প্রকাশ পাল।
শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে বিধায়ক-দলে আসার খবর কয়েক দিন আগেই ছিল। এ দিন সকাল থেকেই হাসপাতাল চত্ত্বরের আপাত অপরিচ্ছন্ন চেহারা উধাও। দেওয়ালের ধারে ধারে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো।
এখানেও অনেকে অভিযোগ করেন, হাসপাতালে মজুত থাকা সত্ত্বেও অনেক ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা হয়। আউটডোরে সময়মতো বসেন না বেশ কিছু চিকিৎসক। নার্সদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্বব্যহারের অভিযোগে ফেটে পড়েন অনেকে। প্রসূতি বিভাগে ভর্তি এক মহিলার স্বামী জানালেন, এ দিনই শয্যায় নতুন চাদর পাতা হয়েছে। এক বৃদ্ধাকে দেখা গেল, অভিজ্ঞতার কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে নির্মলবাবুকে জড়িয়ে ধরেছেন। এ দিকে, তৃণমূলের বিভিন্ন মাপের নেতা বিধায়কদের সঙ্গে হাসপাতালে ঢুকে পড়ায় হট্টগোল হয়।
দোতলায় ৫ মহিলাকে শৌচাগারের এক কোণে পড়ে থাকতে দেখে তাঁদের শয্যায় রেখে চিকিৎসার নির্দেশ দেন নির্মলবাবুরা। খাবারের মান পরীক্ষা করেন তাঁরা। দোতলায় লিফ্টের ধারে এক কোণে উচ্ছিষ্ট খাবার পড়ে থাকতে দেখে সুপারিন্টেন্ডেন্টকে কার্যত ‘ধমক’ দেন নির্মলবাবু। সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেই নিয়েও তাঁকে ভর্ৎসনা করেন কমিটির সদস্যেরা। ভুরি ভুরি অভিযোগ ওঠে স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে। জননী সুরক্ষা যোজনার টাকা সময়ে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ।
নির্মলবাবু পরে বলেন, “হুগলির সব থেকে ঐতিহ্যমণ্ডিত হাসপাতাল এ’টি। কিন্তু বাম জমানায় পরিষেবা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি সাধন করতে হবে।” তিনি বলেন, “একশ্রেণির চিকিৎসক এখনও রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত অন্য নার্সিংহোমে বিক্রি করে দেওয়া হয়। রেডিওলজি বিভাগে খুবই কম কাজ হয়। দু’জন নার্স বাইরের ডাক্তারের কাছে সার্টিফিকেট এনে অনৈতিক ভাবে নাইট-ডিউটি করেন না দিনের পর দিন। যা দেখে গেলাম, সবটাই লিখিত ভাবে বিধানসভায় জানাব।”
কয়েক ঘণ্টা ওয়ালশে কাটিয়ে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে যায় বিধায়ক-দলটি। পরে কমিটির সদস্যেরা জানান, এখানেও সুপারিন্টেন্ডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মানুষের। সুপারিন্টেন্ডেন্ট অবিনাশ প্রামাণিককে ভর্ৎসনা করা হয়। চিকিৎসকেরা নিয়মিত আসেন না বলে তাঁরা জানান। কমিটির তরফে জানানো হয়, সুপারের বদলির সুপারিশ করা হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সন্ধ্যায় সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসক-নার্সদের আরও ‘মানবিক’ হওয়ার পরামর্শ দেন রুদ্রনাথবাবুরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.