ডেঙ্গির মোকাবিলা করতে তাঁরা যে সময়ে কাজ শুরু করেননি, কার্যত তা মেনে নিলেন কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষ। ডেঙ্গি নিয়ে শুক্রবার মহাকরণে ডাকা এক বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও তা স্পষ্ট হয়েছে। তবে দেরিতে শুরু হলেও কলকাতা পুরসভা ভাল কাজ করেছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “গোড়ার দিকে কলকাতা পুরসভার কিছু গাফিলতি ছিল। তবে বর্তমানে পুরসভা ভাল কাজ করছে।” এ দিন ডেঙ্গির পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে হাজির ছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। কলকাতা-সহ রাজ্যে ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ আরও আগে থেকে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মেয়র বলেন, “এ বার থেকে শীতের পরেই মশা নিধনের কাজ শুরু করবে পুরসভা।”
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস মশা প্রজনন কেন্দ্র বদলানোয় এ বার বেশ বেগ পেতে হয়েছে। যে সব এলাকায় ওই মশা বংশবৃদ্ধি করে থাকে, সেখানে মশা মারার সব রকম ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ওদের স্থান পরিবর্তনে অন্য এলাকায় এডিস মশার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে। তার উপরে এ বার কম বৃষ্টি হওয়ায় বেড়েছে মশার প্রজননও। তবে পুরসভা সতর্ক হওয়ায় দেরিতে হলেও তা রোখা গিয়েছে। |
ডেঙ্গির ভয়ে ফুটপাথেও মশারির নীচে ঘুম। শুক্রবার, শহরে। —নিজস্ব চিত্র |
পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য-আধিকারিক তপন মুখোপাধ্যায় শুক্রবার জানান, এখনও পর্যন্ত শহরে অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় (আইজিএম) ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৮ এবং এনএস ১-এ আক্রান্ত হয়েছেন ১৪১৫ জন। মারা গিয়েছেন দু’জন। পুরসভা ইতিমধ্যেই শহরের ডেঙ্গি কবলিত বেশ কিছু এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে। তিনি জানান, ১২ অগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ১৫টি বরোর ১২ লক্ষ ৬০ হাজার বাড়ি ঘুরেছে। এর মধ্যে অনেক বাড়িতে একাধিক বারও যাওয়া হয়েছে। ১ লক্ষ ৩৯ হাজার জায়গায় মশার প্রজনন কেন্দ্র পাওয়া গিয়েছে। রাসায়নিক প্রয়োগ করে ওই সব জায়গায় মশার লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে।
শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি দেখতে কলকাতায় এসেছেন ‘ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ (এনভিবিডিসিপি)-এর তিন জনের এক প্রতিনিধিদল। গত দু’দিন ধরে তাঁরা দক্ষিণ কলকাতা ও উত্তর-পূর্ব কলকাতার কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। এ দিন তাঁরা কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে একটি রিপোর্ট জমা দেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপনবাবু জানান, ডেঙ্গি প্রতিরোধে কলকাতা পুরসভার কাজে ‘সন্তোষ প্রকাশ’ করেছেন এনভিবিডিসিপি-র প্রতিনিধিরা। তাঁদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডেঙ্গি হয়েছে কি না, তা জানার জন্য এলাইজা পদ্ধতিতে এনএস-১ পরীক্ষা করতে হবে। এটিই কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা স্বীকৃত পরীক্ষা। আর র্যাপিড পদ্ধতিতে এনএস-১ পরীক্ষা যে স্বীকৃত নয়, তা-ও ওই রিপোর্টে তাঁরা উল্লেখ করেছেন বলে জানিয়েছেন তপনবাবু।
একই সঙ্গে তাঁরা বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলিতে বেপরোয়া ভাবে র্যাপিড টেস্ট চলছে। ওই বিশেষজ্ঞ দলের নির্দেশ, অবিলম্বে তা বন্ধ করা দরকার। তাঁদের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ছোট পাত্রে জল জমলে লার্ভা-নাশক কোনও রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তবে বড় পাত্র কিংবা বড় জলাশয়ে লার্ভা মারতে রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে। |