আগাম প্রতিরোধ আগামী বছর, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
ডেঙ্গি প্রতিরোধ কর্মসূচিতে নামতে এ বার যে দেরি হয়ে গিয়েছে, তা স্বীকার করে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারের ভুল থেকে ‘শিক্ষা নিয়ে’ আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চেই মশাবাহিত রোগটির মোকাবিলায় তৎপরতা শুরু করতে শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের ডেঙ্গি-পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে পরিদর্শকদল পাঠিয়েছিল, তাদের পর্যবেক্ষণ-রিপোর্ট রাজ্য সরকার হাতে পেয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন স্বীকার করেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে কলকাতা পুরসভা গোড়ায় ঢিলেমি দেখিয়েছে। অন্য দিকে পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও হাওড়া পুরসভা ‘যথাযথ ভূমিকা পালন না-করায়’ মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ। ওই পুরসভা টাকা নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে হাওড়া পুরসভার কমিশনারকে এ দিন তলব করেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-সচিবও।
এ দিন মহাকরণে ডেঙ্গি-পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বৈঠকের পরে মমতা বলেন, “গোড়ার দিকে কলকাতা পুরসভার কিছু গাফিলতি ছিল। তখন আমি কলকাতায় ছিলাম না, জেলা সফরে গিয়েছিলাম। তবে বর্তমানে ওরা ভাল কাজ করছে। তিন বার করে রাস্তা পরিষ্কার করছে। জঞ্জাল সাফ করছে।” যদিও হাওড়া পুরসভার কাজে মুখ্যমন্ত্রী আদৌ সন্তুষ্ট নন। তাঁর কথায়, “ওদের পরিকাঠামো রয়েছে, তা-ও কাজ করছে না। কিন্তু মানুষকে তো বাঁচাতে হবে! গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই বাঁচাতে হবে। এ নিয়ে রাজনীতি করা চলবে না। কেন্দ্রীয় দলও ওদের সম্পর্কে খুব খারাপ মন্তব্য করেছে।”
এ বছরের ডেঙ্গি সংক্রমণ থেকে রাজ্য সরকার যে ঠেকে শিখেছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই পরিষ্কার। তাঁর বক্তব্য, “রোগ হওয়ার পরে প্রতিরোধ শুরু করে লাভ নেই। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস থেকেই তৎপর হতে হবে। পুরসভার পাশাপাশি সচেতন হতে হবে সাধারণ মানুষকেও।” রোগমুক্তির জন্য ‘ঠিকঠাক’ ওষুধ খাওয়ায় জোর দিয়ে মমতা বলেন, “সবাই তো সব জানেন না! ওঁদের জানাতে হবে, কোন ওষুধ ভাল, কোনটা ক্ষতিকর। সেটা আমাদের দায়িত্ব।” গত দু’দিন ধরে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদল কলকাতা ও আশপাশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছে। কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্টের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৯৪ জনের শরীরে ডেঙ্গি মিলেছে। এবং র্যাপিড কিট দিয়ে পরীক্ষার কারণেই যে সংখ্যাটা অনেক বেশি দেখানো হচ্ছে, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরাও রিপোর্টে তা জানিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। “এনএস-১ পজিটিভ হলেই ডেঙ্গি ভেবে নেওয়ার কারণ নেই। ম্যাক এলাইজা টেস্টও করতে হবে।” মন্তব্য মমতার।
ডেঙ্গি-যুদ্ধ
কী বলছে কেন্দ্রীয় দল
• এন্টেমোলজিস্ট বাড়ন্ত সর্বত্র
• এনএস-১ রিপোর্ট তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না
• তাড়াহুড়োয় বহু জায়গায় ভুল রিপোর্ট
• হাওড়া পুরসভায় টাকা নিয়ে রক্ত পরীক্ষা
• লার্ভাঘাতী ওষুধ সরাসরি ব্যবহার*
• জমা জলের বিপদ নিয়ে প্রচার তলানিতে
• কলকাতা-হাওড়ায় সাফাই অনিয়মিত
বৃষ্টি ছাড়ল, এ বার
• পুর-স্বাস্থ্য দফতরের ভরসায় থাকা নয়
• নিজেরাই পড়শিদের নিয়ে নেমে পড়ুন
• জঞ্জাল সাফ করুন, ব্লিচিং ছড়ান
• ছাদ-সহ সর্বত্র জমা জল ফেলে দিন
• পাড়ায় নির্মাণকাজ চললে নজর রাখুন
• নির্মাণস্থলে জমা জলের উৎস বন্ধ করুন
• অফিস, স্কুল থাকলেও নজরদারি জরুরি
• তেল ছড়াতে পুর-পঞ্চায়েতকে ডাকুন
* জল মিশিয়ে প্রয়োগের কথা
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দাবি করেন, ডেঙ্গি নির্ণয় ও চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতাল ও পুরসভার ক্লিনিকই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। সাধারণ মানুষকে সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এবং জানিয়েছেন, সচেতনতা বাড়াতে ও রোগীর দেখভাল সম্পর্কে পরামর্শ দিতে প্রশিক্ষিত নার্সদের সরকার কাজে লাগাচ্ছে। “সল্টলেকে প্রায় আড়াই হাজার বাড়িতে প্রশিক্ষিত নার্সরা গিয়েছেন। কলকাতা পুর-এলাকায় ১২ লক্ষ বাড়িতে। সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিলি হচ্ছে।” বলেন তিনি। এ দিনও মানুষকে নুন-চিনির জল বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধু জ্বর নয়, এখন পেট খারাপও বেশি হচ্ছে। জয় বাংলা হচ্ছে। সাবধানে থাকুন।” বৃষ্টিতে ডেঙ্গির প্রকোপ খানিকটা কমলেও অক্টোবর পর্যন্ত আশঙ্কা থেকেই যায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে ডেঙ্গি মোকাবিলায় সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, কী কী পরিকল্পনা রয়েছে, কিংবা সরকারি হাসপাতালে কত ওষুধ মজুত এ সব সম্পর্কে রাজ্যের কাছে দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ দিন আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরীর দায়ের করা জনস্বার্থ-মামলার প্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ।
প্রধান বিচারপতি জেএন পটেল ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বর্তমানে রাজ্যে ডেঙ্গির দাপট গত দশ বছরের ইতিহাসকে ম্লান করে দিয়েছে। তবু রাজ্য সরকার উপযুক্ত ভূমিকা পালন করছে না। বরং অনেকটা দায়সারা ভাবে ‘কিছুই হয়নি’ গোছের মনোভাব দেখাচ্ছে।”
এমতাবস্থায় সুব্রতবাবুর আশঙ্কা, হাইকোর্ট এখনই হস্তক্ষেপ না-করলে মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা অনুমানের বাইরে। অন্য দিকে রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, তাঁর কাছে সরকারি কোনও নির্দেশ না-থাকায় এ দিন তিনি তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করতে পারছেন না। অবশ্য তাঁর দাবি, কেরল-কর্নাটকেও যথেষ্ট ডেঙ্গির আক্রমণ দেখা গিয়েছে।
সরকারি তরফের কৌঁসুলির এ হেন মন্তব্যে আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে। বিচারপতি বাগচি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা কী, তা জানাতে কেরল-কর্নাটকের তুলনা টানার দরকার নেই। এ রাজ্যের অবস্থাটাই আদালত জানতে চায়।” বিচারালয়কে অন্য কোনও মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করায় বিরত থাকতেও বলেন তিনি।
আর এর পরেই ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, রাজ্যকে দু’সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ে সবিস্তার রিপোর্ট হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানাতে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.