গোপাল দোলই। গ্রাম মণিদহ। শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিএ, বিপিএড। চাকরির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিচ্ছেন।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন পলাশিয়ার সুভাষ দোলই। হোমগার্ড ও এনভিএফের পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিলেন। সফল না হওয়ায় চাকরি মেলেনি।
পাঁচখুরির রফিকুল খান মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। এই শিক্ষাগত যোগ্যতায় চাকরি মেলা কঠিন জানেন তিনি। তবু রোজগারের একটা পথ তো চাই।
নিজের পায়ে দাঁড়াতে এঁরা সকলেই এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কী ভাবে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করতে হয় সেই প্রশিক্ষণ। জঙ্গলমহলের বহু যুবক-যুবতীই গোপাল, সুভাষ, রফিকুলের মতো প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কেউ টেপ-রেকর্ডার, টিভি, রেডিও সারানো শিখছেন, কেউ বা শিখছেন সেলাইয়ের কাজ। মোবাইল সারানো, মোটর সাইকেল মেরামত, শালপাতার থালা তৈরি নানা ধরনের প্রশিক্ষণই দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে সরকারি উদ্যোগে বিএসকেপি-র (বাংলা স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প) মাধ্যমে ঋণও দেওয়া হবে। প্রাথমিক ভাবে জঙ্গলমহলের তিন জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় ৪০টি বিষয়ে অন্তত আড়াই হাজার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁদের পারিবারিক আয় বছরে দশ হাজার টাকার কম, বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে, শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ, তাঁরাই প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে ব্লক রয়েছে ১১টি। তার মধ্যে ৬টি ব্লকে ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায়। |
চলতি মাসেই বাকি ৫টি ব্লকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে বলে তিনি জানান। জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অরিন্দম দত্ত বলেন, “বেকার যুবক-যুবতীদের হাতেকলমে কাজ শেখানোর পাশাপাশি স্বনির্ভর হতে সব ধরনের সাহায্য করবে সরকার। সেই লক্ষ্যেই এই প্রশিক্ষণ।” জঙ্গলমহলে উন্নয়নমূলক নানা কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। স্কুল তৈরি, হস্টেল নির্মাণ, রাস্তা, পানীয় জল, সেচের উন্নয়ন-সহ একাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে। এ বার বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করতে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হল সরকার। কাঠের কাজ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সারানো, মোটর সাইকেল, অটো রিকশা সারানো, জৈব সার তৈরি, বিউটিশিয়ান, বাবুই ঘাসের পণ্য উৎপাদন, বাতানকূল যন্ত্র সারানো, কাগজের ব্যাগ তৈরি, মাশরুম চাষ, নিরাপত্তারক্ষীর কাজ-সহ একাধিক বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, বর্তমানে বন্দুকের লাইসেন্স না থাকলে সহজে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজে কাউকে নেয় না। তাই যে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে তাঁদের উপরেই কাজ দেওয়ার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থার প্রশিক্ষক বি মনোহর রাও বলেন, “আমরা আর ৫টি বিষয়ের সঙ্গে বন্দুক চালানোরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমরাই কাজের ব্যবস্থা করার জন্যও চেষ্টা করব।” এই প্রশিক্ষণ হচ্ছে মেদিনীপুর সদর ব্লকে। ব্লক অফিসেই থিওরি ও অফিস সংলগ্ন মাঠে প্র্যাকটিক্যাল। সুভাষ দোলই, গোপাল দোলইদের কথায়, “এমনিতে তো চাকরি হচ্ছে না। যদি প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু একটা কাজ পাই। সেই আশাতেই এসেছি।” |