যান নিয়ন্ত্রণের চূড়ান্ত অব্যবস্থার ফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দক্ষিণ দিনাজপুর সফরে গিয়ে ছয় কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসনের এমন নজিরবিহীন গাফিলতির জন্য সফরের ছ’দিনের মাথায় সরিয়ে দেওয়া হল দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগকে। বহরমপুর সফরে মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চ ঘিরে যে-বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল, তারও তদন্ত শুরু করেছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর।
উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে গত ৩০ আগস্ট রাতে মুখ্যমন্ত্রী বালুরঘাটে পৌঁছন। পরের দিন ৬০ কিলোমিটার দূরে বুনিয়াদপুরে ছিল তাঁর সরকারি অনুষ্ঠান। ৩১ আগস্ট বালুরঘাট থেকে বুনিয়াদপুরের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা। সেখানকার রেলওয়ে স্টেডিয়ামে ছিল তাঁর অনুষ্ঠান। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলের ছয় কিলোমিটার আগে ডিটলহাটে যানজটে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আটকে যায়। অসংখ্য বাস-লরি কনভয়ের সামনে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে পড়েছিল যে, মমতার কনভয়ের আর এগোনোর উপায় ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। সোজা হাঁটতে শুরু করেন অনুষ্ঠানস্থলের দিকে। তখনও মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না যে, ডিটলহাট থেকে রেল ময়দানের দূরত্ব ছয় কিলোমিটার।
মুখ্যমন্ত্রী হাঁটতে থাকায় কনভয়ে উপস্থিত অফিসারেরাও সেই পথ ধরেন। কিন্তু রাস্তায় কোথাও পুলিশ নজরে পড়েনি। এমনকী জেলাশাসক যখন মমতার সঙ্গে হাঁটছিলেন, তখনও পুলিশ সুপারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ-সব দেখে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। জেলার পুলিশ-প্রশাসনের উপরে ক্ষোভ গোপন করেননি তিনি। অন্য প্রশাসনিক কর্তারাও এমন অপেশাদার পুলিশি ব্যবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেখা যায়, বৈঠক শেষ করে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব গাড়ি খুঁজছেন, অথচ তাঁদের সহযোগিতা করার জন্য সেখানে কেউ ছিল না। বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা একটি জেলায় জেড-প্লাস নিরাপত্তার অধিকারিণী মুখ্যমন্ত্রীকে যে-ভাবে ঝুঁকি নিয়ে এতটা পথ হাঁটতে হল, তার জন্য প্রশাসনের সকলেই অত্যন্ত বিরক্ত হন। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্তা বীরেন্দ্রের উপরও রুষ্ট হন মমতা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তনবাবু গত বছর অগস্টে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সাধারণ ভাবে তাঁর অন্তত দু’বছর ওই পদে থাকার কথা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় সে-দিন যে-গাফিলতি হয়েছিল, তাতে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা। আর পুলিশ সুপার বলেন, “সরকারি আদেশ পেয়েছি। বদলির ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।” সে-দিনের নিরাপত্তায় গাফিলতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা অধিকর্তা বীরেন্দ্রও কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “আমি অসুস্থ। কী হয়েছে জানি না। তাই কিছু বলা সম্ভব নয়।”
ওই সফরে বহরমপুরে মমতার সভামঞ্চ ঘিরে যে-বিশৃঙ্খলা হয়েছিল, তা নিয়েও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। তবে জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে-ঠিকাদার সংস্থা ওই মাঠের প্যান্ডেল ও মাইকের ভার পেয়েছিল, দোষটা তাদেরই। তা ছাড়া এত লোকের যে সমাগম হবে, তা আগাম বুঝে উঠতে পারেনি প্রশাসন। জেলার এই রিপোর্টে খুশি নন স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা। তাঁদের প্রশ্ন, ভিড় হলে তা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তো পুলিশের। শ্রোতারা বহরমপুরে যে-ভাবে মঞ্চ পর্যন্ত ধেয়ে গিয়েছিলেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর আঘাত লাগতে পারত। সেই গাফিলতির দায় কার, তদন্তে তা জানতে চায় মহাকরণ। |