ধর্ষিতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত রয়েছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় বিরোধী বামেরা তো বটেই, শরিক কংগ্রেসও সরব। পাল্টা সমালোচনা করতে ছাড়েনি শাসক তৃণমূল নেতৃত্বও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণার পরেই বৃহস্পতিবার সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি প্রশ্নও তুলেছিলেন। এই প্রসঙ্গে শুক্রবার বর্ধমানের টাউন হলের এক সভায় আরও এক ধাপ এগিয়ে সূর্যবাবু বলেন, “এখন তো শুনছি খুন, ধর্ষণ, সংঘর্ষে গুরুতর আহতদের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে সরকার। খুন হলে শুনছি ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। নাবালিকা ধর্ষণের জন্য ৩০ হাজার টাকা। রাজনৈতিক দলের কেউ আহত হলে তাঁদের ১০ হাজার টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”
প্রায় বামেদের সুরেই কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী এ দিন দিল্লিতে বলেন, “ধর্ষণের দর-তালিকা হয় বলে শুনিনি। আধা ধর্ষণে অর্ধেক ক্ষতিপূরণ বা পুরো ধর্ষণে পুরো ক্ষতিপূরণ, এমন হয় নাকি!” ধর্ষিতাদের এ ভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়ে প্রকারান্তরে ‘অপরাধী’দের প্রশ্রয় দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অধীরবাবুর অভিমত, “ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে যারা লড়বে, তাদের বা তাদের পরিবারকে দেখার প্রতিশ্রুতি যদি সরকার দিত তা হলে খুশি হতাম।” |
অধীরবাবুর মন্তব্যের পাল্টা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “মহিলারা অত্যাচারিত হলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা মানবিকতার প্রশ্ন। এতে অধীরবাবু কেন চিৎকার করছেন?” অধীরবাবুর বক্তব্যকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “এ তো বাংলায় প্রবাদের মতো শোনাচ্ছে, ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি তো কলা খাইনি! এ সব উনি যত বলবেন, তত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ভিড় বাড়বে। সেই কারণেই যত দিন যাচ্ছে অধীরবাবুরা ছোট হয়ে যাচ্ছেন।” তাঁর দাবি, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এ রাজ্যে মেয়েদের সম্মান-সুরক্ষা বেড়েছে।”
অধীরবাবু বিরোধিতা করলেও, কংগ্রেসেরই আর এক সাংসদ মৌসম বেনজির নূর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন। তবে পুলিশ-প্রশাসনকে আরও ‘তৎপর’ হওয়ার আবেদন জানান তিনি। তাঁর কথায়, “ধর্ষিতাদের আর্থিক সাহায্য ভাল উদ্যোগ। তবে অপরাধ দমনে পুলিশ-প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।” ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মৌসম বলেন, “প্রয়োজনে পুলিশের কাউন্সেলিং করাতে হবে। যাতে তারা এই ধরণের অভিযোগ এলেই অভিযুক্তকে ধরতে তৎপর হন।”
এ দিন বর্ধমানে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সূর্যবাবু অভিযোগ করেন, “প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ তা খুনের পরেও আট অভিযুক্ত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের ধরছে না। এই রাজ্যে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপত্তাহীন, তা এতেই প্রমাণিত।” ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে দেওয়ানদিঘিতে খুন হন প্রদীপবাবু এবং সিপিএম নেতা কমল গায়েন। সূর্যবাবু বলেন, “হয়তো কোনও দিন কেউ দু’লক্ষ টাকা নিয়ে প্রদীপবাবুর পরিবারের কাছে গিয়ে বলবে, এই টাকা নিয়ে চুপ করুন।” পাশাপাশি তাঁর সন্দেহ, “সরকার ক্ষতিপূরণের টাকার কথা বলছে বটে, কিন্তু কাগজপত্র চালাচালির পরে টাকা আক্রান্তদের হাতে পৌঁছবে কি না, কে জানে!” এ দিন জামালপুরের নবগ্রামে খুন হওয়া বামপন্থী খেতমজুর রাধানাথ সরেনের বাড়িতেও যান সূর্যবাবু। |