রাজভবন থেকে মহাকরণের কাছে কিছু জানতে চাওয়া হলে যাতে পনেরো দিনের মধ্যে তার জবাব যায়, সেই মর্মে নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার সিপি, ডিএম-দের এই নির্দেশ পাঠাচ্ছে স্বরাষ্ট্র দফতর। শুক্রবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ এবং স্বরাষ্ট্র-সচিবকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে।
এবং মহাকরণে ফিরেই স্বরাষ্ট্রসচিব ওই নির্দেশ জারি করেছেন। কেন?
এক স্বরাষ্ট্রকর্তার ব্যাখ্যা, “রাজ্যপাল কিছু জানতে চাইলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা জানানো আমাদের কর্তব্য। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে রাজভবনকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও তদন্ত-রিপোর্ট দিতে দেরি হয়েছে। যা হওয়া উচিত নয়। তাই ঠিক হয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যপালের প্রশ্নের জবাব দেওয়া হবে।” উল্লেখ্য, শিশুমৃত্যু থেকে শুরু করে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি, কর আদায়ে সরকারের ভূমিকা কিংবা মানবাধিকার নতুন সরকার গঠনের পরে রাজভবন নানা বিষয়ে সরকারের কাছে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে। খুন-ধর্ষণ, রাজনৈতিক হানাহানি-সহ আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন দিকেও রাজ্যপালের সতর্ক নজর। সব ক্ষেত্রেই সরকারের কাছে ঘটনার বিবরণ ও গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে রিপোর্ট চেয়েছেন।
বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা প্রশ্নে সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়। বহু সংগঠন ও অত্যাচারিত বিভিন্ন বর্গের মানুষও প্রতিবিধানের আশায় তাঁর কাছে যায়। যে সব বিষয়ে প্রশাসনিক নজর দেওয়া দরকার, রাজ্যপাল সেগুলো সরকারকে পাঠান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চান। যেমন, রাজ্যের ৩ মন্ত্রীর অনুগামীরা কলকাতা শহরে বেআইনি ভাবে পার্কিং ফি আদায় করে থাকে সম্প্রতি এমন অভিযোগ পান রাজ্যপাল।
তিনি স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে রিপোর্ট চান। কিন্তু মহাকরণের খবর, স্বরাষ্ট্র দফতর এখনও এ নিয়ে রাজভবনকে কিছু জানায়নি। বস্তুত রাজভবনের ‘চিহ্নিত’ এমন বেশ কিছু ঘটনায় সরকার তদন্ত-রিপোর্ট পেশ করছে না বলে অভিযোগ। যা নিয়ে নারায়ণন একাধিক বার উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এ দিনও মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে ডেকে রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কথা বলেন। ধর্ষণ-ডাকাতির মতো অপরাধ রোধে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা-ও জানতে চান। প্রশাসনের দুই কর্তা ওঁকে বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানতে চান, তাঁর পাঠানো নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে সরকার ঢিলেমি করছে কেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নির্দিষ্ট ভাবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরও উল্লেখ করেন বলে সরকারি-সূত্রের দাবি। স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁকে জানিয়ে এসেছেন, রাজভবনের সমস্ত প্রশ্নে প্রত্যুত্তর দেওয়াটা প্রশাসনের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে, সরকার সে ভাবেই পদক্ষেপ করবে।
রাষ্ট্রপতির আসন্ন রাজ্য সফরের প্রস্তুতি নিয়ে এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দুই সচিবের আলোচনা হয়েছে। ‘বিদায়ী’ মুখ্যসচিব সমরবাবুকে এক দিন রাজভবনে ভোজনের আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছেন নারায়ণন। |