|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
দর্শকদের ছবি দেখা শেখাতে হবে |
সত্যজিৎ রায় ‘জলসাঘর’ ছবি করার পর মুর্শিদাবাদের নিমতিতা গ্রামের জমিদার চৌধুরী পরিবারের বসতবাড়ি ‘নিমতিতা ভবন’টি জলসাঘরের রাজবাড়ি বলে বিশেষ পরিচিতি পায়। সত্যজিৎ অবশ্য নিমতিতায় ‘জলসাঘর’-এর পরে ‘দেবী’ এবং ‘তিনকন্যা’রও শুটিং করেন। সেই শুটিংয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের অন্যতম ছিলেন রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী, নিমতিতার জমিদার পরিবারেরই একজন। ওই শুটিংপর্বে (১৯৫৭-১৯৬০) সত্যজিতের সঙ্গে রবীন্দ্রনারায়ণের যে ঘনিষ্ঠতা হয় সেই সূত্রেই তিনি সত্যজিতের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এ সহকারী পরিচালক হন। তাঁর তোলা শুটিংপর্বের সেই সব দুর্লভ ছবি ও তাঁর লেখা স্মৃতি নিয়ে সম্প্রতি বেরল নিমতিতায় সত্যজিৎ/ জলসাঘর দেবী সমাপ্তি (কোডেক্স, ১২৫.০০)। ‘যা লিখেছি তা আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার এবং প্রকৃত ঘটনার বিবরণ। এতে বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জন নেই।’— শুরুতেই জানিয়েছেন রবীন্দ্রনারায়ণ। এমনই একটি ঘটনা: ‘একদিন সন্ধ্যায় আমাদের বাইরে বাড়ির সামনে গঙ্গার ধারে একজন গাইছিলেন— শ্যামা মা কি আমার কালো রে... । দোতলার প্রশস্ত বারান্দায় বসে মানিকদা শুনছিলেন। আমি মানিকদার পিছনেই ছিলাম। তখন অন্য কেউ ছিলেন না। হঠাৎ শুনলাম গম্ভীর ভরা গলায় মানিকদা নিখুঁত সুরে গেয়ে উঠলেন— ‘শ্যামা মা কি আমার কালো রে...’। সেই প্রথম মানিকদার গলায় গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল।’
দেবীপ্রসাদ ঘোষের সংকলন ও সম্পাদনায় বেরিয়েছে সাক্ষাৎকার ২৬ (প্রতিভাস, ১৫০.০০)। নীতীন বসু দেবকীকুমার বসু থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায় হরিদাস ভট্টাচার্য বিকাশ রায় পর্যন্ত ছাব্বিশ জন চলচ্চিত্রকারের সাক্ষাৎকার। নির্বাক যুগ থেকে স্বাধীনতার প্রথম দশক অবধি বাংলা ছবির একটা ইতিহাস ঠাওর করা যাবে সাক্ষাৎকারগুলি পড়তে-পড়তে। সঙ্গে রয়েছে প্রত্যেক চলচ্চিত্রকারের চলচ্চিত্রপঞ্জিও। তবে চিত্র-সমালোচকদের প্রতি প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটি মন্তব্য এখানে অবশ্য উল্লেখ্য, ‘আমাদের দর্শকদের ছবি দেখা শেখাতে হবে সুষ্ঠু সমালোচনার মাধ্যমে। পরিবেশিত রসের গুণাগুণ বিচারের ক্ষমতা জাগিয়ে তুলতে হবে দর্শকের মনে। শুধু হুজুগে কল্যাণসাধন সম্ভব নয়।’ ‘সততা থাকলে, প্রতিভা থাকলে, অভিনয় ক্ষমতা থাকলে, গলিতে প্রবেশের কোনও প্রয়োজনই হয় না। মাথা উঁচু করে রাজপথ দিয়ে হাঁটা যায় এবং সফল হওয়া যায়। যেমন হয়েছেন, কানন দেবী। যেমন হয়েছি, আমি।’— মাধবী মুখোপাধ্যায়ের আশ্চর্য আত্মকথন মাধবীকানন (সম্পা: সুপর্ণা ভট্টাচার্য। চর্চাপদ, ৩৫০.০০)। তাঁর অভিনয়-জীবনে সান্নিধ্যে আসা মানুষজনেরও উন্মোচন। শুরুতে মৃণাল সেন ‘মাধবীর জন্য দু-চার কথা’য় তাঁর ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিতে মাধবীর অভিনয়ের সূত্রে লিখেছেন ‘‘ঋত্বিক এবং তার পরেই সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে মাধবী দুর্দান্ত অভিনয় করল। আমার প্রযোজক যেমন নাম রেখেছিল মাধবী, বিদেশে কেউ কেউ নামকরণ করেন ‘চারুলতা’।” |
|
|
|
|
|