|
|
|
|
শনিবারের নিবন্ধ ২ |
আংটি বদল |
বালা নয়। চুড়ি নয়। রতনচূড়ও নয়। অষ্টমীর অঞ্জলির সময় আঙুলে একটা
বড় আংটি না থাকলে আপনি ফ্যাশনেবলই নন। লিখছেন সুচন্দ্রা ঘটক |
যত বড় আঙুল নয়, তত বড় আংটি!
অষ্টমীর শাড়ি হোক, বা নবমী রাতের জমকালো ইন্ডো-ওয়েস্টার্ন সঙ্গে একটা মস্ত বড় আংটি মাস্ট। হাতে, গলায় গয়না না হলেও ক্ষতি নেই।
‘স্লিক’ আংটির দিন গেছে। বদলে আঙুলকে সাজিয়ে তুলছে এখন বড়সড় আংটি। হরেক রকম নকশা। কোনওটা বরফির মতো, কোনওটা বা চাকতির আকার। কোনওটা গোল্লা গড়নের। অথবা রুপোর একটা বড় গোলাপ। নানা রঙের পাথরের প্রজাপতি বা অক্সিডাইজড মেটালের পেঁচা। আংটির গড় সাইজ তিন থেকে সাড়ে চার ইঞ্চি। তার চেয়ে বড়ও হতে পারে।
যত বড় আংটি, তত ট্রেন্ডি দেখাবে নাকি মেয়েদের।
কলেজ-ক্যান্টিনের আড্ডার মাঝে বিষয়টা ফেলতেই তো হইচই। পুজোর আগে নাকি বড় আংটি কিনতেই হবে সক্কলকে। কলেজ-সুন্দরীদের কাছে, বাকি সব গয়নাই প্রায় ব্যাকডেটেড এখন! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবলীনা আর প্রেসিডেন্সির সুলগ্না তো এখনই ঠিক করে ফেলেছে, লাল বা কালো পাথরের আংটি কিনবে। সুলগ্নার বয়ফ্রেন্ড রোহিত অবশ্য দিয়ে দিল এক্সপার্ট মন্তব্যটা। রুপোলি অথবা তামাটে রঙের আংটি সবচেয়ে কন্টেম্পোরারি। সব রকমের সাজের সঙ্গে চলে! |
|
হঠাৎ অফিস থেকে কোনও পার্টিতে যেতে হলে, চট করে বড় একটা আংটি পরে নিলেই হল। লুকটা বদলে যায় |
কাঠ, কাচ, পাথর, মেটাল যার তৈরিই হোক, একটা আংটি কাফি। “হঠাৎ অফিস থেকে কোনও পার্টিতে যেতে হলে, চট করে বড় একটা আংটি পরে নিই। অল্পেই লুকটা বদলে যায়। বেশি গয়নার ভার নিয়ে চলাফেরায় খুব অসুবিধে,” বললেন আইটি-কর্মী রোমিলা।
অ্যাড-এজেন্সিতে কর্মরতা মুসকান জানালেন, পুজোর সাউথ সিল্কের সঙ্গে একটা পল্কি কাজের জাম্বো আংটি কিনেছে। বললেন, “জমকালো শাড়ির সঙ্গে বেশি গয়না পরতে ভাল লাগে না।” শাড়ির সাবেক সাজে একটু নতুনত্বও আসবে।
বলিউডের বিদ্যা, সুস্মিতা, করিনাদের হাতে নানা রাত-পার্টিতে বেশ কিছু দিন ধরেই দেখা যাচ্ছিল বড়সড় ‘কক্টেল রিং’। শুধু বলিউড-ই বা কেন! টলিউডের ফ্যাশনেও হিট এই আংটি। “যে কোনও ধরনের পোশাকের সঙ্গে বড়সড় একটা আংটি আমার চা-ই চাই। তাতে খুব সহজেই ব্যক্তিত্বটা ফুটে ওঠে। ‘মুক্তধারা’তেও তো বড়-বড় আংটি পরেছি,” বললেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
নাইট-ক্লাবে ছোট্ট কক্টেল ড্রেসের সঙ্গে আঙুলে বড়সড় রঙিন পাথরই হোক বা কর্পোরেট পোশাকের সঙ্গে বড় সলিটেয়ার হিরে বাজার কাঁপাচ্ছে এই আংটি-ফ্যাশন। পুজোর শহরেও এ বার ওই অলঙ্কারই ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হবে বলে মনে করছেন সেলিব্রিটি, ডিজাইনারেরা।
“আঙুলে ওরকম বিশাল একটা আংটি থাকলে তো আর গয়নার দরকারই হয় না। হাতের চুড়ি, ব্রেসলেট তো অনায়াসেই বাদ দেওয়া যায়।” এমনটাই জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনার রাধিকা সিঙ্ঘি। অন্য দিকে ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্তের মতে গয়না কম পরে পোশাককে গুরুত্ব দিতেই এখন বড় আংটির স্টাইল এত বেড়ে গেছে। “র্যাপ অ্যারাউন্ড, গাউন, লেগিংস-কুর্তি, এ সবের সঙ্গে খুব ভাল যায় বড় আংটি। আমি তো আজকাল ফ্যাশন শো-এ হামেশাই বড় আংটি ব্যবহার করছি,” বললেন অভিষেক। |
অঙ্গুরীয় দক্ষিণা |
সোনা |
ওজন অনুসারে। ২০,০০০ টাকা থেকে শুরু |
রুপো |
ওজন অনুসারে। ৩০০০ টাকা থেকে শুরু |
সেমি প্রেশ্যাস স্টোন |
১৫০০ টাকা থেকে শুরু |
জাঙ্ক (তামা, পেতল, কাঠ, কাচ) |
৫০ টাকা থেকে শুরু |
|
নতুন না পুরনো?
শকুন্তলার আংটি-কেলেঙ্কারি আর কে ভুলতে পারে! সেটাও তো বেশ বড়সড়ই ছিল বলে শোনা যায়।
দেশে-বিদেশে সর্বত্র রীতিমতো ঐতিহ্য বহন করে এই ধরনের আংটি। রাজা-রানিদের আংটি তো মস্ত বড় হত। রাজস্থানে গেলে শোনা যায়, যোধা বাইয়ের বড়বড় আংটি নাকি খুব বিখ্যাত। অবশ্যই তাতে হিরে-মুক্তো-চুনি-পান্না বসানো থাকত। এখনকার মতো জাঙ্কের ফ্যাশন তো ছিল না!
বিলেতের রাজবাড়িতেও বরাবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বিশাল আকারের হিরের আংটি। প্রত্যেক রাজা বা রানির অভিষেকের সময়ে দেওয়া হত হিরে-জহরতে ভরা একটা বড়সড় আংটি। যাকে বলা হয় ‘করোনেশান রিং’। রানি ভিক্টোরিয়ার আংটির ওজন নাকি ছিল ৪৩ ক্যারাট। মাঝে একটা বিশাল বড় স্যাফায়ারের চারপাশ ঘিরে ছিল ৫১টা হিরে আর পাঁচটা চুনি!
ট্রেন্ডটা কেমন?
ফ্যাশন তো ঘুরে-ফিরে আসেই। সাবেক ডিজাইনের সঙ্গে সময়ের চাহিদাকে মিলিয়েই তাই তৈরি হচ্ছে এখনকার এই সব ঢাউস ঢাউস আংটি, মত ডিজাইনার রাধিকার।
আর এক জেন-এক্স জুয়েলারি ডিজাইনার তানিয়া সেনের মতে আবার এই গয়নাগুলো একেবারেই নতুন। বলেন, “নানা রকম ধাতুর আংটি তৈরি করছি এখন আমরা। এখন তো রুপোরও যা দাম! রীতিমতো ভাবতে হচ্ছে, কোন মেটালটা হাতের নাগালে মিলবে। দেখতেও তো ভাল হতে হবে!”
তা হলে আর পুরনোর রইলটা কী? খালি সাইজটা?
কম দামি পাথর থেকে তার, তামা, পেতল সব দিয়েই তৈরি হচ্ছে গয়না। বাদ যাচ্ছে না প্লাস্টিক, কাঠ, কাচ, কাগজও। সদ্য কলেজ পার করা শ্রেয়া জানাল, গত মাসে হৃষীকেশ থেকে নাকি একটা মাটির তৈরি কক্টেল রিং কিনে এনেছে সে।
সোনা, রুপোর ক্ল্যাসিকাল লুক তো বেশি সাজগোজের দিনের জন্য। রোজ যেমন পোশাক পরে এখনকার আধুনিকারা, তার সঙ্গে এই ধরনের জিনিসই মানায় বলে মত তানিয়ার। কারও কারও আঙুলে দেখা যাচ্ছে কাপড়ের আংটিও।
বিভিন্ন কস্টিউম জুয়েলারির বিপণিতেও এখন রমরমিয়ে বিকোচ্ছে ছোট-বড় পাথর আর মেটালের জাম্বো আংটি। তামাটে বা অক্সিডাইজড ধাতুর ওপরে একটা মস্ত সেমি প্রেশ্যাস স্টোন বসানো আংটিতেও ভরেছে শো-কেস।
তবু যদি পরতে হয় সোনা...
বিয়ের সাজগোজে অবশ্য সাবেক ডিজাইনও তাল মিলিয়েই চলছে, জানালেন শহরের এক বিখ্যাত অলঙ্কার বিপণির ডিজাইনার শর্মিলি রায়চৌধুরী। সোনা আর হিরেতে তৈরি রানি আংটি তাদের দোকানে আবার নতুন করে জায়গা করছে। বললেন, “আগেও গোল বা বরফি আকারের রানি আংটি থাকত। তবে এখন আরও অনেকে চাইছেন। তাই কম সোনা দিয়েও বড় আংটির ডিজাইনে নতুনত্ব আনা হচ্ছে।”
জমিদার গিন্নিদের পাশা আংটিও খুব বিকোচ্ছে নতুন করে। সোনা যতই দর বাড়াক, তা-ও ১৮-১৯ গ্রামের আংটি রাখতে হচ্ছে দোকানে। আর এক নামী সোনা বিপণির তরফে জানা গেল, চুড়ি-বালা-ব্রেসলেট বাদ দিয়ে নাকি বড়সড় ব্রিজ আংটি, স্পাইরাল আংটিতেও মন দিচ্ছেন আধুনিকারা। ও রকম একটা আংটি কিনলেই তো বিয়েবাড়ি থেকে অষ্টমীর সাজ সবের স্টেটমেন্ট তৈরি। দক্ষিণ কলকাতার এক বিখ্যাত অলঙ্কার বিপণির তরফে দীপঙ্কর নাথ জানালেন, ছাতার মতো দেখতে একটা মস্ত সোনার আংটির ওপরে মিনাকারি এখন খুব জনপ্রিয়। টিভি সিরিয়ালে দেখে অনেকেই তেমন গয়না চাইছেন। হিরে-চুনি-পান্নায় একটু বড় ডিজাইনও বেশ চলছে।
তবে আর দেরি কীসের? বাজারে স্টক হাল্কা হওয়ার আগেই গুছিয়ে নেওয়া যাক পুজোর অ্যাক্সেসারি! বড় আংটি। আংটি দিয়েই চোখ টানুন প্রিয়তমর।
পুনশ্চ: এ বছর কলার দেওয়া ফুল হাতা ব্লাউজ খুব চলছে—তার সঙ্গে বড় আংটি কিন্তু দারুণ মানাবে বলছেন সব ডিজাইনাররাই। |
|
|
|
|
|