বাড়ি-গাড়ি ভাড়ার কথা হামেশাই শোনা যায়। কিন্তু তা বলে পুকুর ভাড়া? তা-ও আবার গ্রামে? হ্যাঁ, দু’দিনের সামান্য বৃষ্টির পরে আকাশ আবার পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় পাট পচানোর জন্য গ্রামের পুকুর কেন এঁদো ডোবাগুলিরও চাহিদা তুঙ্গে। এমনকি বাড়ির সামনের সরকারি নাবাল জমিতে জমা সামান্য জলটুকুর জন্য এবেলা ওবেলা ঘুর ঘুর করছেন প্রতিবেশীরা। অগত্যা পাট পচাতে ডোবা থেকে এঁদো পুকুর ভাড়া নিচ্ছেন অসহায় চাষি। সুযোগ বুঝে ডোবার মালিকেরা ভাড়ার জন্য চড়া দাম হাঁকছেন। এক বিঘা পাট পচানোর জন্য চাষিকে গুনতে হবে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এক জায়গায় একবারই পাট পচানো যাবে। বিপাকে পড়ে বেচারা চাষিরা সব শর্ত মেনে তাতেই রাজি হচ্ছেন।
এর আগেও পাট পচানোকে কেন্দ্র করে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। কিন্তু সে সঙ্কট এ বারের মতো এত তীব্রও ছিল না। এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে পাট চাষির একেবারে নাজেহাল অবস্থা। অনেকে পচানোর জায়গার অভাবে পাট কাটতেই ভয় পাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার জমিতেই গর্ত করে ত্রিপল বিছিয়ে পাম্পসেটের সাহায্যে জল দিয়ে কোনওক্রমে ব্যবস্থা করছেন পাট পচানোর।
ডোমকলের চাষি ইমান আলির কথায়, “এলাকার নদী-নালাতে এক ফোঁটা জলও নেই। জলঙ্গি নদীতে গর্ত করে সেচ দিয়ে পাট পচাতে হচ্ছে আমাদের। সেখানে যাদের জায়গা নেই, তাঁরা চড়া দামে পুকুর ভাড়া নিচ্ছেন।” বাড়ির পিছনে দশ কাঠা জায়গা জুড়ে শরিকি পুকুর রানিনগরের মালিপাড়ার বাসিন্দা তেতুল পালদের। মাছ চাষ হয় না সেখানে। বাড়ির আবর্জনা ফেলে কিছুটা বুজেও গিয়েছে সেই পুকুর। এই মরসুমে ওই শুকনো পুকুরের কদর তুঙ্গে। তেতুলের কথায়, “অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম পুকুরটা বুজিয়ে ফেলব। এ বার দেখছি ওটাকে নতুন করে ঝালিয়ে নিতে হবে।”
মালি পাড়ার সেন্টু রহমানের আট কাঠার একটি ডোবা রয়েছে। সুযোগ বুঝে দর হেঁকেছেন বিঘা প্রতি ৪০০ টাকা। তিনি বলেন, “আট কাঠার ওই ডোবাতে প্রায় ১০ বিঘা জমির পাট পচানো যাবে। ফলে একবিঘা পাট চাষ করে চাষি যা লাভ করবে, তার থেকে বেশি লাভ আমার। তবে জল কম থাকায় মাঝে মাঝে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে করে হাজার খানেক টাকা খরচ হবে।”
সব মিলিয়ে পুকুর বা ডোবার মালিকদের পোয়াবারো অবস্থা। অনেকে মাছ বিক্রি করে দিয়ে পাট পচাতে পুকুর ভাড়া দিচ্ছেন। কেউ আবার চরম অবহেলায় পড়ে থাকা ডোবাটার চারপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করছেন ভাড়া খাটানোর তাগিদে।
এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে চাষির খরচ হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। অনাবৃষ্টির ফলে এ বছর বিঘা প্রতি ৩ কুইন্টালের বেশি ফসল পাওয়া যাবে না। যার বর্তমান বাজার মূল্য সাড়ে ৭ হাজার টাকা। ফলে বিঘা প্রতি চাষির লাভ মেরেকেটে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এর উপর যদি পাচ পচানোর জন্য চড়া দামে পুকুর ভাড়া নিতে হয় তাহলে চাষির কিছুই লাভ হবে না।
বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু তা এত কম যে, নদীতে জমছে না। আসলে নদীতে ক্রমাগত আবর্জনা ফেলার কারণে নদী বুজে গিয়েছে। জল ধারণের ক্ষমতা গেছে নষ্ট হয়ে। তাই নদীতে পাট পচানো এখন স্বপ্নের ব্যাপার। রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের জান মহম্মদ মণ্ডল বলেন, “সরকারি প্রকল্পে নদী খননের কথা ভাবা হচ্ছে।” |