নবদ্বীপ অনেকটা কড়াইয়ের মত।
বর্ষাকালে নিকাশির সমস্যা নিয়ে ফি বছরই ভুগতে হয় শহরবাসীকে। শহরের পূর্বদিক দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গার জলতল যতদিন শহরের সবচেয়ে নিচু এলাকার নিকাশি নালার নিচে থাকে তত দিন সমস্যা নেই, কিন্তু বর্ষার জলে নদীর ফেঁপে ওঠা শুরু হলেই জল নিকাশির সমস্যা শুরু হয়ে যায়। বর্ষা যত বাড়তে থাকে ততই বৃষ্টির জল, নিকাশির জল এই দুই বেরনোর পথ পায়না।
প্রাচীন শহর নবদ্বীপ সতেরো শতক থেকে বারবার গঙ্গার ভাঙনের কবলে পড়েছে। ফলে শহরের চতুর্দিকে নদীর সেইসব পরিত্যক্ত খাত ছড়ানো রয়েছে যেগুলি সারাবছর ধরে নিকাশি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন শহরের দক্ষিণে মরিগঙ্গা বা পলতা খাল, উত্তর পশ্চিমে ছাড়া গঙ্গার খাল এবং পূর্বদিকে বইছে গঙ্গা। তাই আকাশে মেঘ জমলেই আঁতকে ওঠে নবদ্বীপ আর তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন। বিশেষ করে প্লাস্টিকের আবর্জনায় আটকে থাকা নিকাশি নালার মুখ সাফাই, জমা জল বের করার পাম্প বসানো এবং শহরের সবথেকে নিচু এলাকাগুলোতে জল জমার বিষয়ে আগাম সতর্কতা নিয়ে ইতিমধ্যে পুরসভা , সেচ দফতর এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর মাঠে নেমে পড়েছে।
এ বারে তেমন ধারাবাহিক বর্ষা না হওয়ায় নিকাশি সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের সাম্প্রতিক নিম্নচাপের ফলে বৃষ্টি স্বস্তির পাশাপাশি অস্বস্তিও বাড়িয়েছে। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘গঙ্গার থেকে নিচু এই শহরে নদীর জলস্তর যখন বেড়ে যায় তখন অতিরিক্ত জল বের করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ বারে তাই বর্ষার আর আগে থেকেই পুরসভা এবং সেচ দফতর যৌথভাবে আগে থেকেই পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করে দিয়েছে শহরের যেসব এলাকায় আগে থেকে নিকাশি নালা ছিল না সেসব অঞ্চলে নতুন করে প্রচুর নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। শহরের পূর্বদিকে গঙ্গার পার বরাবর গার্ডওয়ালটির উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে।’’
পুর চেয়ারম্যান জানান, বর্ষার জলে নদীর জলস্তর বাড়লে শহরের বিভিন্ন নিকাশির পথ দিয়ে সেই জল তখন শহরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। যার ফলে নিকাশি সমস্যা আরও জটিল হয়ে যায়। এ বারে তেমন দশটি কারণ চিহ্নিত করে সেচ দফতরকে লক গেট বসানোর কথা বলা হয়েছে। এতে করে শহরের ভিতরে জল ঢোকা ও বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
নবদ্বীপ পুরসভার ৫, ৬, ৭, ৮, ২১ এই ওয়ার্ডগুলি গঙ্গার পূর্ব পার বরাবর ফলে বর্ষায় নিকাশির সমস্যা এই ওয়ার্ডগুলিতেই সব থেকে বেশি। ২১ নম্বরের কাউন্সিলর সুকুমার রাজবংশী বলেন, ‘‘আমাদের এখানে বৃষ্টি তেমন হয়নি বটে কিন্তু উত্তরবঙ্গে এবার গোটা মরসুম জুড়েই ভারী বর্ষণ হয়েছে। ফলে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ নদীর জল গঙ্গা, অজয় দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই গঙ্গার জলস্তরও এখন বেশ উচুঁতে। প্রাচীন মায়াপুরের যেসব অঞ্চলে নিকাশির সমস্যা তীব্র সেসব অঞ্চলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি পাশাপাশি প্রতিবছর বর্ষায় গঙ্গার একটা ভাঙন হয় সেই ভাঙন রোধের কাজও ইতিমধ্যে সেচ দফতর শেষ করেছে।’’
নদিয়ার সেচ দফতরের এসডিও সুবীর রায় বলেন,‘‘ নবদ্বীপের জন্য বর্ষা মরসুমের কাজ প্রায় শেষ শহরের পূর্বদিকের গার্ডওয়ালের উচ্চতা দশ ইঞ্চি বাড়ানো হয়েছে। প্রাচীন মায়াপুরে চৈতন্য জন্মস্থান সহ বিভিন্ন মন্দিরের পিছনে গঙ্গার পার বরাবর যে মাটির বাঁধ আছে সেখানে ইতিমধ্যে মাটি ও বালির বস্তা দিয়ে পোক্ত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে নবদ্বীপ নিয়ে সেচ দফতর সতর্ক রয়েছে।’’ |