ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে আজকের দিনটা ঐতিহাসিক। জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যানসারকে হারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছে যুবরাজ সিংহ।
দিনটা শুধু এই কারণে ঐতিহাসিক নয় যে, এক জন ক্রিকেটার দুরূহ রোগের কবল থেকে বেরিয়ে মাঠে ফিরছে। যুবরাজের ব্যাট হাতে নামার দৃশ্য আসলে আরও লক্ষ লক্ষ ক্যানসার রোগীর লড়াইয়ের প্রেরণা। প্রতিদিন চেম্বারে রোগী দেখার সময় এমন অনেককে পাই, যাঁরা বলছেন যুবরাজকে দেখেই তাঁরা নতুন করে বাঁচার উদ্যম পাচ্ছেন। তাই আজ হয়তো তাঁরাও টিভি খুলে বসবেন যাঁরা কোনও দিন ক্রিকেট দেখেননি। এ দিন দেখবেন বছর তিরিশের যুবকের জীবন-যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করতে।
আবেগ মনের মধ্যে কিছুটা জায়গা পেলেও ডাক্তার হিসেবে কয়েকটা সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলতে চাই। মনে রাখতে হবে কেমোথেরাপির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি’ হয়। যাতে শরীরের প্রান্তীয় ভাগের স্নায়ুগুলির দুর্বলতার জন্য হাত-পা ঝিনঝিন করতে পারে। আবার আর একটা কথা ক্যানসার চিকিৎসকদের মধ্যে চালু আছে‘ফেটিগ সিনড্রোম’। এর ফলে দীর্ঘ দিন কেমোথেরাপি করানো রোগীর ‘লাং ক্যাপাসিটি’ বা ফুসফুসের বায়ুধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে কেমোথেরাপি করে সুস্থ হলেও অন্যান্য সুস্থ ক্রিকেটারদের তুলনায় তাড়াতাড়ি হাঁফিয়ে যেতে পারে যুবরাজ।
এই অসুবিধাগুলোর কথা নিশ্চয়ই টিমের ডাক্তার থেকে অধিনায়ক সবাই এতদিনে জেনে গিয়েছে। অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নিশ্চয়ই সে সব কথা মাথায় রেখেই ঠিক করবে যুবরাজকে কী করে ব্যবহার করবে। এখন যুবরাজের উচিত ক্লোস-ইন ফিল্ডিং করা। যেমন, স্লিপ ফিল্ডিং এই অবস্থায় ওর জন্য আদর্শ। আউটফিল্ড কখনওই নয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে অনেক বেশি দৌড়তে হবে যুবরাজকে। এমনকী ফিল্ডিংয়ের সময় কিছুক্ষণ মাঠের বাইরে এসেও বিশ্রাম নিতে পারে।
ব্যাটিংয়ের সময়েও যুবরাজকে একই কথা মনে রাখতে হবে। বেশি দৌড়ঝাঁপ করা যাবে না। সুস্থ অবস্থায় যুবরাজের রানিং বিটুইন দ্য উইকেটস আমরা দেখেছি। ও ভালই জোরে দৌড়য়। ক্যানসার সারিয়ে ফেরার পর এটা ওর প্রথম ম্যাচ। তাই উত্তেজনার বশে যেন প্রথমেই পুরনো ফর্মে দৌড়তে না যায়। ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা কম থাকে বলেই সাবধানতা নেওয়া উচিত।
ভারতের প্রতিটা মানুষ আজ যুবরাজকে শুধু মাঠে নামতে দেখতে চায়। তাতে ও কম রান করলেও কিছু যায় আসে না। এক-আধটা ক্যাচ মিস করলেও না। আসল লড়াইটা ও ইতিমধ্যেই জিতে গিয়েছে। ক্যানসার রোগীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে রোগটা সারানো যায়। সাধারণ জীবনেও ফেরা যায়।
(লেখক বিশিষ্ট ক্যানসার শল্য চিকিৎসক) |