‘ইট্স টাইম টু বি ব্যাক ইন দ্য জার্সি...বহুত হুয়া ইন্তেজার...।’
মুখ নিচু করে বসে। কথাগুলো বলতে বলতে ধীরে ধীরে মুখ তুলছেন। চোখেমুখে ধরা পড়ছে কাঠিন্য। টিভিতে যাঁরা ভারত-নিউজিল্যান্ড সিরিজের দিকে নিয়মিত চোখ রাখছেন, ছবিটা নিশ্চয়ই তাঁদের অপরিচিত নয়।
শনিবারের বিশাখাপত্তনমের সঙ্গে সঙ্গে টিভির পর্দায় গোটা ক্রিকেটদুনিয়া দেখবে ওই মুখ, ওই চোয়ালচাপা কাঠিন্যর প্রত্যাবর্তন। তিনি যুবরাজ সিংহ নামের এক ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’র দেশের জার্সিতে দ্বিতীয় অভিষেক। অত্যাশ্চর্য ‘ইন্তেজার’-এর হিসেবটা কত? গত নভেম্বরে ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে শেষ বার নেমেছিলেন যুবরাজ। তার পর তাঁকে আর ভারতীয় ক্রিকেট দেখেনি ন’মাস, তিন সপ্তাহ। ক্যানসারকে হারিয়ে কী ভাবে বাইশ গজের চেনা ময়দানে ফিরছেন যুবি, সেই কাহিনি ভারতীয় খোলাধুলোরই লোকগাথায় ঢুকে গিয়েছে। শনিবারের বিশাখাপত্তনমে যুবি নামার আগে তাই তাঁকে ঘিরে যে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটবে, তাতে আর আশ্চর্য কী?
ক্যানসারকে হারিয়ে মাইকেল ক্লার্কও ক্রিকেটে ফিরেছেন। ফিরেছেন সাইমন ও’ডনেল। ডেভ কালাঘান। কিন্তু জীবনযুদ্ধে তাঁদের জয় নিয়ে বাঁধনছাড়া এমন আবেগ তৈরি হয়নি নিজের দেশে। শুক্রবারের প্র্যাক্টিসেই যুবির হাঁটাচলা থেকে ফুটবলে নেমে পড়া ক্যামেরার লেন্স থেকে নিষ্কৃতি পায়নি কিছুই। আবেগে ইন্ধন যুগিয়েছে যুবরাজের দায়বদ্ধতা। টিম ইন্ডিয়া প্র্যাক্টিস সেরে ফিরে গিয়েছে, তিনি মাঠে পড়ে থেকেছেন ‘হাই ক্যাচ’ প্র্যাক্টিসের জন্য। নেটে অশোক দিন্দাকে মারা দু’টো গ্লান্সে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর ‘টাচ’-এর মৃত্যু হয়নি। অশ্বিনকে যে ভাবে সোজা মাঠ পার করে জাতীয় সড়কে ফেললেন, তাতেও তো বোঝা গেল যুবির ‘ছয়-ছক্কা’-র কাহিনি কোনও প্রাগৈতিহাসিক ব্যাপার নয়। আর মাঠে ফেরার জন্য তাঁর আকুতির নমুনা? সন্ধেতে বৃষ্টি নামল বিশাখাপত্তনমে আর সঙ্গে সঙ্গে যুবি-র টুইট, ‘হে ঈশ্বর, কাল যেন বৃষ্টি না হয়।’
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন যুবি-আবেগের ঝড় সামলাতে। বলছেন, “প্লিজ, ওকে নিয়ে হইচই করবেন না। গোটা বিশ্ব ওর কামব্যাক নিয়ে এমন করছে যেন এতে যুবির খুব সাহায্য হচ্ছে। কিন্তু এতে ওর ওপর চাপের পাহাড়ও তৈরি হচ্ছে।” সঙ্গে ভারত অধিনায়কের আবেদন, “যুবির জীবনে যা ঘটেছে, সে সব ওকে মনে করিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। ওকে ক্রিকেট থেকে আনন্দটা পেতে দিন। ওকে ওর মতো থাকতে দিন।” |
‘যুবিকে যুবির মতো থাকতে দাও’-এর আওয়াজ ধোনি তুলছেন। কিন্তু শুনছে কে? টুইটারে আছড়ে পড়ছে একের পর এক মন্তব্য। ওয়ার্ন লিখছেন, ‘তোমাকে মাঠে ফিরতে দেখে গর্ব হচ্ছে।” প্র্যাক্টিস করে উঠে ওয়ার্নের টুইটের পাল্টা টুইট করেছেন স্বয়ং যুবরাজ, ‘মাঠে নামার জন্য আর তর সইছে না আমার।’ যুবরাজের মা শবনমকে ধরে ফেলছে টিভি চ্যানেল। মা তুলে আনছেন, এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল নির্বাচনের দিনটার কথা। “সে দিন যুবি, আমি দু’জনেই কাঁদছিলাম।” বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, প্রত্যাবর্তনে যদি ‘সিংহ’-গর্জন শোনা যায়, তা হলে জীবনের পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হয়ে যাবেন যুবি। কারও আবার প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত যুবরাজ পারবেন তো? তিনি কতটা ফিট? কিন্তু টিমমেট বাংলার মনোজ তিওয়ারি সেসব পাত্তাই দিতে নারাজ। ফোনে বলে দিলেন, “কেমোথেরাপি শব্দটা খুব সহজ শোনায়। ওর ফিরে আসার গল্পটা বাইরে বসে শুনলে হয়তো তেমন আশ্চর্য লাগবে না। ওকে কাছ থেকে দেখছি বলেই বুঝতে পারছি, অবিশ্বাস্য পরিশ্রম আর মনের জোর থাকলে কোথায় যাওয়া যায়! যুবরাজই এখন আমার প্রেরণা।”
শনিবার টিভির সামনে বসে কেউ তাঁর চেনা ‘টাচ’ খুঁজবেন। যুবরাজকে দেখে অনেকেই মনে মনে বলবেন, ‘ও পারলে আমিও পারব’। তালেগোলে সবাই মোটামুটি ভুলেই গিয়েছে, শনিবার একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচও আছে। যেখানে ভারতের মুখোমুখি নিউজিল্যান্ড। কী করা যাবে? এমন কালজয়ী প্রত্যাবর্তন তো রোজ রোজ ঘটে না!
|