|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন ৩... |
|
মনোজ তিওয়ারি...অভিনেতা |
পর্দায় তিনি মানেই সামনের সারিতে সিটি,পয়সা ছোড়াছুড়ি। গানও ফাটিয়ে। ভোজপুরি ছবিতে
কুড়ি বছরের ওপর
রাজত্ব করে চলা সেই নায়ককে বোঝার চেষ্টা করলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
নামেই মুম্বই, কিন্তু কোথায় যেন এক টুকরো বিহার সারা বাড়ি জুড়ে। আন্ধেরির নতুন বাড়ি। একটা ঘরের নাম ‘মেরা গাঁও’, আর একটা ‘মেরা বেনারস’। মাটির কাছাকাছি না থাকলে মন ভরে না তাঁর, তাই এই জেট-সেট যুগেও ঘরের এমন নামকরণ।
মনোজ তিওয়ারি। জন্ম বিহারে। রোটি, লিট্টি, ভোজপুরি ছবি, বিগ বস, অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার... সব মিলিয়ে রঙিন। কিন্তু একেবারে মাটির গন্ধে ভরপুর। “আতরওয়ালিয়া গ্রামের ছেলে। গ্রামের ছোঁয়া না থাকলে মন ভরে!” বললেন মনোজ। মুম্বইয়ের বাড়ির নামকরণেও তাই মাটির ছোঁয়া।
পরনে সাধারণ ফেডেড জিন্স-টি শার্ট, চপ্পল। প্রথম দেখায় মনেই হবে না, তিনি ভোজপুরি সিনেমার শাহরুখ খান, প্রতি সিনেমার তাঁর ফিজ ৬০-৭০ লাখ।
কলকাতায় ঝটিকা সফরে এসে, টালিগঞ্জের পার্পল মুভি টাউনের মেকআপ রুমে সবার সঙ্গে বসে ফ্রায়েড রাইস, চিলি পনির খাওয়া দেখে ধারণাও করা যাবে না নামী অভিনেত্রীরা তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতে মুখিয়ে।
তাঁর জনপ্রিয়তা টের পাওয়া যায়, মেকআপ রুমের বাইরে। যেখানে তুমুল হুড়োহুড়ি।
কলকাতায় এসেছিলেন এক বিজ্ঞাপনী শু্যটিংয়ে। বাংলার সঙ্গে সম্পর্ক কিন্তু আজকের নয়। ওএনজিসিতে চাকরি করা এক দাদা থাকতেন সল্টলেকে। সেখানেই বছর চার কাটিয়েছেন তিনি। গানটাই প্রথম প্রেম। তবে সেই প্রেম করতে কম স্ট্রাগল করতে হয়নি। অনেক বছর কাটিয়েছেন গ্রাম-গঞ্জে পালা করে।
“প্রথম গান রেকর্ডের অফারটা আসে ১৯৯৩ সালে টি সিরিজ থেকে। ভবানীপুরের প্রসাদ স্টুডিওতে হয় রেকর্ডিং,” গানটা ভোজপুরি, আর হ্যান্ডসরা সবাই বাঙালি। তারা কেউ ভোজপুরি জানে না। অগত্যা তাঁকেই শিখে নিতে হয় বাংলা।
“এখনও টুকটাক বাংলা বলতে পারি।” কথার ফাঁকে গুনগুন করে ওঠেন ভোজপুরি সুর।
সেই গানের সুবাদেই এবার পা ফেলেছেন বলিউডে। অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এ গেয়েছেন ‘জয় হো বিহার কে লালা’। আর তাতেই শোরগোল বলিউডে। ফেসবুক থেকে টুইটার, চর্চা একটাই - মনোজ তিওয়ারি বলিউডে অভিনয় করবেন কবে?
“আমিও তো সেটাই চাই”, অকপট মনোজ তিওয়ারি, “তাই বলে কোনও ক্যারেকটার রোল হলে চলবে না ভাই, হিরোর রোলই আমার চাই।” নব্বইয়ের উপর সিনেমায় অভিনয় করা অভিনেতা বলতেই পারেন এ কথা।
তবে যত বং কানেকশানই থাক না কেন, বাঙালিরা কিন্তু তাঁকে গুলিয়ে ফেলে ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারির সঙ্গে!
এ কথা শুনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বন্ধু একটুও রাগলেন না, বরং হাসলেন। “মনোজের সঙ্গে তো আমার আলাপ ও ক্রিকেটার হওয়ার আগে থেকে,” মাথার মিলিটারি প্রিন্টের টুপিটা নামিয়ে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন অধিনায়ক বললেন, “এখনও ক্রিকেটটা ভালই খেলি। শিলিগুড়িতে বলিউড বনাম টলিউডের ম্যাচে অনেককে শূন্য রানে আউট করেছি।” |
|
এতটাই প্যাশনেট ছিলেন ক্রিকেট নিয়ে, ক্যাচ ধরতে গিয়ে ডান হাতের আঙুলটাই কেটে ফেলেছিলেন একবার।
তবে এখন তাঁর প্যাশন সিনেমা। ১৫ অগস্ট রিলিজ করেছিল ‘গঙ্গা যমুনা সরস্বতী’। “সিনেমার স্টান্টগুলোও কিন্তু আমার করা।” কুড়ি তলা বাড়ির জানালা থেকে ঝাঁপ দেওয়াটাই সব থেকে আশ্চর্যের ছিল না। সে সিনেমায় আবার তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী রবি কিষান। তার মানে কি, ভোজপুরি সিনেমার শাহরুখ-সলমনের মিল হয়ে গেল?
“ঝগড়া কোনও কালেই ছিল না আমাদের। একই প্রোফেশনের দু’জনের মধ্যে রেষারেষি তো থাকবেই!” সাফাই তাঁর, “আমার নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশেও তো এসেছিল রবি।”
দু’ দশক ধরে ভোজপুরি টিনসেল টাউনের সিংহাসন দখল করে থাকলেও, বলিউডে প্রথম পা দেওয়ার অভিজ্ঞতাটা মোটেই সুখকর ছিল না। বিগ বসের চতুর্থ সিজনে ছিলেন তিনি। অস্মিত পটেল আর বীণা মালিকের সঙ্গে ঝগড়া, আরবাজ খানের তাঁর বিরুদ্ধে ভোটের আবেদন জানানো, উত্তর ভারতের বিশাল ফ্যান বেস থাকা সত্ত্বেও ভোট আউট হয়ে যাওয়া-মানতে পারেননি তিনি।
তবে দমে যাননি। তাঁর মতে স্ট্রাগলটাই আসল। “তবে শেষ হাসি কে হাসবে, সেটা পুরোটাই নির্ভর করে উপরওয়ালার উপর।” ভোজপুরি সংস্কৃতি নিয়ে খুবই সচেতন তিনি। তাই বাণিজ্যিক সাফল্যের পরেও একটা খচখচানি থেকেই গেছে। “দোষটা আমাদেরই। আমরা সিনেমা করি সামনের সারির দর্শকদের কথা মাথায় রেখে।”
শুধু সেলুলয়েড নয়, সংগীতের উপরও কড়া নজর তাঁর। তাই ‘সুর সংগ্রাম’-এর মতো রিয়্যালিটি শোয়ে উপস্থাপক হওয়ার অফার লুফে নিয়েছেন। “নতুন প্রজন্মকে ওঠার একটা প্ল্যাটফর্ম তো দিতে হবেই।”
নিজে দশ বছর কাটিয়েছেন গায়ক হিসাবে। ২০০৪-এ প্রথম ছবি। যদিও গানের ব্যাপারে এখনও সমান সিরিয়াস তিনি। নিয়মিত রিলিজ হয় তাঁর অ্যালবাম। শেষ অ্যালবাম ‘হে মহাদেব’-এর বিক্রি ছাড়িয়ে গেছে এক লাখ।
লোকজনের ভালবাসা তো অনেক পেয়েছেন। কিন্তু এত দিন বাংলায় কাটানো মনোজ তিওয়ারি বাংলায় কিছু করবেন না? “এখানকার পরিকাঠামো খুব ভাল লাগল। সামনের কিছু ছবির শু্যট এখানে করার ইচ্ছা আছে।”
আর বাংলায় অভিনয়? “ইচ্ছে তো আছে। অফার পেলে অবশ্যই করব। তবে যত দিন না হয়, অ্যাড শু্যট করেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই।” |
|
|
|
|
|