মনোরঞ্জন ২...
রিয়্যালিটির সেরা রাঁধুনি
মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মীর।
চারজনের মধ্যে মিল কোথায়?
কেন? চারজনেই চারটে জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো-য়ের অ্যাঙ্কর।
হল না। আরেকটা মিলও আছে।
কী? সর্বঘটে তো একজনই। শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। বাংলা সেলিব্রিটি রিয়্যালিটি শো-এর অধুনা সেরা রাঁধুনি। যাঁর রান্নাঘরে মজুত হরেক মশলা। যেমন চান রেঁধে দেবেন।
তবে নিন্দুকেরা বলেন, মাংস ঘাস দিয়ে রাঁধলেও ভাল হতে বাধ্য। অর্থাৎ শুভঙ্কর যে শোগুলো করেন, সেগুলোয় আসল হলেন সেলিব্রিটিরা। শুভঙ্কর বলছেন, “একটা শো-কে ১০০ এপিসোড পর্যন্ত নিয়ে যেতে হলে কিন্তু সেলিব্রিটি ছাড়াও ওই শো-এর মালমশলা ভাল হতে হয়। না হলে কেউ সেটা দেখবেন না।”
‘দাদাগিরি’র জন্য এ বছর এক চ্যানেলের দেওয়া সেরা সঞ্চালকের পুরস্কার পাওয়া মহাগুরু বা এমজি, মিঠুন চক্রবর্তীর মন্তব্য, “ও-সব ওর বিনয়। আমরা স্রেফ একটা চারাগাছ ওর হাতে দিয়ে বলি, শুভঙ্কর বাগানের সেরা এবং সবচেয়ে বড় ফুলটা কিন্তু আমার চাই। ও সেটা করে দেবেই।”
এক কদম এগিয়ে গেলেন বুম্বাদা। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “আমি তো বলি, ছেলেটার মাথার ভিতরে একটা সুপারকম্পিউটার বসানো আছে।”
“শুধু কী মাথা, অত বড় শরীরটা?” মীর বলছিলেন শুভঙ্করের অমানুষিক পরিশ্রম করার ক্ষমতার কথা। “একসঙ্গে এতগুলো শো চাড্ডিখানি বিষয়? দিনরাত ভুলে কাজ করতে পারে ও।”
প্রসেনজিতের ব্যাখ্যায়, “এত ফোকাসড, ব্যালান্সড একটা দলের নেতৃত্ব দেয় শুভঙ্কর, যে কাজটা সফল হবেই।” মীর যোগ করলেন শুভঙ্করের ম্যান-ম্যানেজমেন্টের দিকটা। বলছেন, “ও মিঠুনদা’, বুম্বাদা’, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বড় বড় নাম নিয়ে কাজ করে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, ওর কোনও শো-এ কখনও কারও ইগো প্রবলেম হয় না।”
কী ভাবে এই সব বড় বড় মানুষের মন জুগিয়ে চলেন পরিচালক? শুভঙ্কর বললেন “এঁরা তো আলাদা মানুষ। কিছু পছন্দ না-হলে মিঠুনদা যেমন খুব জোরে চেঁচিয়ে বকেন আমাদের সবাইকে। বুম্বাদা আবার খুব নম্র, শান্ত। মীর বন্ধুর মতো। সৌরভদা অত্যন্ত ভদ্র, লাজুক। তবে এঁদের মধ্যে একটা মিল-এঁরা সকলেই খুব প্রফেশনাল।”
‘বাংলার সেরা পরিবার’-এর সেটে শুভঙ্কর ও প্রসেনজিৎ
তা বলে যখনই সেলিব্রিটি শো, তখনই কেন তলব করা হয় শুভঙ্করকে? উনি ছাড়া করিতকর্মা পরিচালক নেই নাকি ইন্ডাস্ট্রিতে? একমাত্র যে চ্যানেলের জন্য কাজ করেন, সেই জি-বাংলার সুজয় কুট্টির কথায়, “থাকতে পারে। জানা নেই। ও আগে এই চ্যানেলে চাকরি করত। আমাদের সঙ্গে ওর সমীকরণটা দারুণ। আমরা জানি, শুভঙ্করকে ভরসা করলে পস্তাব না।” তিনি জানাচ্ছেন, শুভঙ্কর দর্শকদের খুব ভাল বোঝেন, তাঁরা কী চান সেটাও জানেন। তাই মীরাক্কেল সারা দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি দিন ধরে চলা স্ট্যান্ড-আপ কমেডি শো হতে পেরেছে।
ভরসা করেছেন প্রসেনজিৎও। তিনি বললেন,“ আমার স্ত্রী অর্পিতা আমাকে বলত, ‘‘তুমি যে ভাবে কাজ করতে ভালবাসো, শুভঙ্কররা ঠিক তেমন। এখন ‘সেরা পরিবার’ করতে গিয়ে দেখছি, কতটা ডিসিপ্লিনড, কতটা গোছানো ও।”
তাঁর সঙ্গে কাজ করা সেলিব্রিটিরা তাঁকে একশোয় তিনশো দিচ্ছেন। কিন্তু শুভঙ্করের এই সাফল্যের আলোর নীচে ব্যর্থতার অন্ধকারও যে আছে!
কয়েক বছর আগে-পরে যাত্রা শুরু করেছিলেন দুই বন্ধু রাজ চক্রবর্তী আর শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। বন্ধুত্ব এখনও আছে। কিন্তু রাজ আজ মেনস্ট্রিম বাংলা ছবির সফল পরিচালক হিসেবে হিট। আর শুভঙ্কর রিয়্যালিটির দুনিয়ার টি-টোয়েন্টির মাঠেই রাজত্ব করছেন। সিনেমার জগতের টেস্ট ম্যাচে তাঁর অস্তিত্ব বড়ই ঝাপসা।
টলিউডের প্রথম সারির প্রযোজকরা কি রাজ চক্রবর্তীর ছবি প্রযোজনা করতে দু’বার ভাববেন? কিন্তু শুভঙ্করের কোনও ছবি প্রযোজনার প্রসঙ্গ উঠলে কী হবে তাঁদের উত্তর? এক ডাকসাইটে প্রযোজক বললেন, “দু’বারের বেশি ভাবব। তবে স্ক্রিপ্ট ভাল লাগলে রাজি হয়ে যেতেও পারি।”
বছর পাঁচেক আগের সিনেমা, মিঠুন আর অরিত্রকে নিয়ে শুভঙ্করের তৈরি ‘হাঁদা আর ভোঁদা’ বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। শুভঙ্করের ভাঁড়ারে এত সেঞ্চুরি, সবই রিয়্যালিটির টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। ছবির টেস্টে তাঁর অভিষেক সে ভাবে হল কোথায়?
“ব্যর্থতা না বলে এটাকে ব্যথার একটা জায়গা হিসেবে দেখি আমি,” শুভঙ্কর নস্টালজিক। “তখন আমি আনকোরা। ইন্ডাস্ট্রিতে কৌলিন্য পাইনি। ছবি বানানো, পরিচালনা, সংলাপ, চিত্রনাট্য ছাড়া আরও অনেক ধাপ রয়েছে। প্রচার, ডিস্ট্রিবিশন, ছবি রিলিজের সময়, কোন হলে রিলিজ করছে-অনেক প্যারামিটার। ‘হাঁদা আর ভোঁদা’ সে ভাবে প্রচার পায়নি। কাজে খুঁত ছিল, মানছি। তবু যদি সিনেমাটা ঠিক ভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছত, সিনেমা চলত কি না, প্রমাণ হয়ে যেত। ঔদ্ধত্য নয়, অত্যন্ত বিনয় করেই বলছি কথাটা। টিভিতে ‘হাঁদা আর ভোঁদা’ দেখানো হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, আজ পর্যন্ত ওই চ্যানেলে যত সিনেমা দেখানো হয়েছে, তার মধ্যে এখনও সেরা টিআরপি-র রেকর্ড আমার ছবির।”
কিন্তু শুভঙ্কর, মাঠে রান করতে না-পারলে কেউ শুনবে না আপনার কথা। “জানি। তাই অজুহাত দিচ্ছি না। সত্যিই, আমি তো সিনেমার মাঠে এখনও রানই করিনি।” বললেন শুভঙ্কর।
এখন তো নাম-টাম হয়েছে। প্রযোজকরা আপনার কথা শুনবে না? জমি তো তৈরি... শুভঙ্কর মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “আমি ফ্রিলান্স পরিচালক, চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। আমার মনে হল বলে দুম করে কোনও শো বন্ধ করতে পারি না। সেটা চুক্তিভঙ্গ। তার চেয়েও বড় কথা, এখন আমার একটা টিম আছে। তারা আমার ওপর নির্ভরশীল। প্রতি মাসের পয়লা তারিখে সকলের হাতে তাঁদের প্রাপ্য টাকাপয়সা তুলে দেওয়াটা আমার কর্তব্য। সেটা অবহেলা করতে পারি না। ফিল্ম করব বলে হাত গুটিয়ে দু-তিন মাস চিত্রনাট্য ভাবার অবকাশ ছিল না।”
এ বার চাপ কমছে। আগামিকাল শেষ হচ্ছে ‘মীরাক্কেল’। শুধু ‘বাংলার সেরা পরিবার’ চলবে প্রসেনজিতের সঙ্গে। এখন তিনটি ছবির চিত্রনাট্যের কাজ করছেন শুভঙ্কর। ভিন্ন ধরনের গল্প, কোনওটা কমেডি, কোনওটা থ্রিলার। “যেটায় নিজেকে মনে হবে সব থেকে স্বচ্ছন্দ, সেই গল্প নিয়ে ছবি করব। এ বার আর আপস নয়,” তাঁর বক্তব্য।
শুভঙ্কর সিনেমায় অফার দিলে করবেন?
মিঠুন বললেন, “আলবাৎ। ওর সঙ্গে কাজ করতে আমি সব সময় এক পায়ে খাড়া।”
আর প্রসেনজিৎ? বলছেন, “ওর আগের ছবিটা বেশ ভাল। বাজারে চলেনি, সেটা আলাদা। কিন্তু ও যে ভাল পরিচালক, সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই।” প্রসেনজিৎ-এর যুক্তি, “ও যে ভাল পরিচালক, তার প্রধান উদাহরণ সৌরভ। আমরা না হয় অভিনেতা। অ্যাঙ্কারিংটা করে দিতে পারব। যদিও ভাল অভিনেতা হলেই ভাল অ্যাঙ্কর হয় না। আমার এখনও ভীষণ টেনশন হচ্ছে শ্যুটিংয়ে। কিন্তু ভাবুন, সৌরভের মতো একজনকে দিয়ে অত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজ তো শুভঙ্করই করিয়ে নিয়েছে। নন-অ্যাক্টরকে দিয়ে ভাল কাজ ভাল পরিচালকই করাতে পারে। আমি তো শুভঙ্করকে বলেছি, ভাল স্ক্রিপ্ট কর, আমি আছি।”
শুভঙ্করের জন্য আশার খবর, ফিল্মে প্রাথমিক ব্যর্থতার পরেও তাঁর ওপর ভরসা রাখছেন টলিউডের মহারথীরা।
কিম কি-দুক বা পিয়ের-পাওলো পাসোলিনির ভক্ত তাতে আত্মতুষ্ট না-হয়ে ২০১২ সালে দাঁড়িয়ে শপথ নিচ্ছেন, “ফিল্ম পরিচালনার পাহাড়-চূড়ায় এক বার অন্তত আমার পতাকাটা পুঁতে আসতেই হবে। সব সমালোচনার জবাব দিয়ে নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে হবেই।”
বাস্তবের শো-এ জিতেও রুপোলি পর্দায় হেরে যেতে রাজি নন বারুইপুরের এই ব্রাহ্মণ-সন্তান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.