নাগরির কৃষিজমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসায় রাজ্য সরকারের ‘কালক্ষেপে’ ক্রমেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন এলাকার কৃষকরা। আজ সকালে চাষের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে নাগরির প্রায় দুশো কৃষক পরিবার রাঁচিতে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বাসভবন ঘেরাও করে। ‘পেটের ভাত কেড়ে নেওয়া চলবে না’—স্লোগান তুলে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন লাগোয়া রাস্তায় স্ত্রী এবং ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে বসে পড়ে কৃষকরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বাসভবনের প্রবেশদ্বার আগলে বিক্ষোভকারীদের সামনে দ্রুত মানব প্রাচীর তৈরি করে বিশাল পুলিশ বাহিনী। উপ-মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, “এত দিন ওই জমিতে চাষ-আবাদ করে আমাদের পরিবারের দুবেলা পেট চলেছে। এ বার রাজ্য সরকার ওই জমিতে চাষটাও বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা কী খাব!” |
তবে এ দিন বিক্ষোভকারী এবং পুলিশ উভয়েরই আচরণ ছিল সংযত। রাঁচির পুলিশ সুপার (শহর) বিপুল শুক্ল জানান, নাগরির কৃষকদের পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল উপ-মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের কাছে জমি ফেরতের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করেছেন। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নাগরির কৃষিজমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী দয়ামণি বারলা জানিয়েছেন, তাদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভুতিশীল কথাবার্তাই বলেছেন হেমন্ত সোরেন। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রধান শিবু সোরেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এ দিন নাগরির জমি আন্দোলনের সমর্থনে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিবু-পুত্র হেমন্ত।
সরকারি সূত্রের খবর, নাগরির জমি বিরোধ মীমাংসার কোনও সূত্র এখনও মেলেনি। আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে রাজ্য সরকার গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তিন বার বৈঠকে বসেছে। কিন্তু উভয়পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য কোনও সমাধান সূত্র এখনও মেলেনি। বৈঠকে জমি ফেরত পাওয়ার দাবিতে অনড় থেকেছে আন্দোলনকারীরা। ওই বৈঠকের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনেক দিন আগেই পেশ করেছেন কমিটির প্রধান তথা রাজ্যের ভূমি সংস্কারমন্ত্রী মথুরাপ্রসাদ মাহাত। নাগরির অধিগৃহীত জমিতে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত তিনটি শিক্ষা প্রকল্পের কাজও আন্দোলনের জেরে বন্ধ। সরকারি সূত্রের খবর, ওই নির্মাণ প্রকল্প-সহ নাগরির জমি সংক্রান্ত সবিস্তার রিপোর্ট তাদের কাছে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে রাঁচি হাইকোর্ট। কিন্তু তিন দফায় সময় চেয়ে নিয়েও এখনও আদালতের আদেশ কার্যকর করতে পারেনি রাজ্য সরকার। এরই প্রেক্ষিতেই নাগরির জমি সমস্যা সমাধানে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ এবং প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারী কৃষক নেতারা। |