এখনও পর্যন্ত নিজস্ব কোনও ভবন নেই ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া কলেজের। ক্লাস স্থানীয় লোকপাড়া হাইস্কুলে। এরই মধ্যে লোকপাড়া কলেজকে ঘিরে উঠেছে বেনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। এই অবস্থায় বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথা আঁচ করে ‘ভয়ে’ কলেজেই আসা বন্ধ করে দিয়েছেন অধ্যক্ষ এবং কোষাধ্যক্ষ তথা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। এর ফলে টালবাহানা অবস্থায় চলছে ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া মহাবিদ্যালয়।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে প্রয়াত শিক্ষাবিদ নবকিশোর হাজরা-সহ এলাকার বেশ কিছু মানুষ মিলে লোকপাড়ায় একটি কলেজ তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালানোর পর ২০০৯ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন মেলে কলেজটির। গঙ্গাধর ঘোষকে অধ্যক্ষ এবং অনুকূল শীলকে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে শুরু হয় কলেজের যাত্রাপথ। অনুকূল শীলই কলেজের কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।
কলেজ পরিচালন কমিটির-সহ সম্পাদক সুভাষচন্দ্র ঘোষ বলেন, “কলেজ পরিচালন কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল শিক্ষক হিসেবে তাঁদেরই নিয়োগ করা হবে যাঁরা অন্যত্র শিক্ষকতা করছেন কিংবা অবসর নিয়েছেন। এ ছাড়া স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা সরকারি কর্মীদেরও নেওয়া যাবে।” তাঁর অভিযোগ, “কিন্তু অধ্যক্ষ এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে পরিচালন কমিটির অগোচরে তাঁর এক নিকট আত্মীয়াকে শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ করেছেন। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অনুকূল শীলও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেই এমন একজন আইনজীবীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছেন। এরপর বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁরা কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কলেজের গুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে যে আলমারিতে তার চাবিও রয়েছে তাঁদের কাছে।”
পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য তথা ময়ূরেশ্বর-২ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূল নেতা চন্দ্রনীল ঘোষের অভিযোগ, “শুধুমাত্র শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মই নয়, পরিচালন কমিটির অগোচরে অধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মিলে চতুর্থ শ্রেণীর দু’জন কর্মীকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করেছেন।” পরিচালন কমিটির সদস্য বামাপদ ভল্লা এবং স্বপন ভল্লা বলেন, “পারচেজিং কমিটি থাকলেও অধ্যক্ষ গোপন বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে বই, আসবাবপত্র-সহ বেশ কিছু জিনিস কিনেছেন।”
এই সব দুর্নীতির অভিযোগগুলি প্রকাশ্য আসার পরে এলাকার বাসিন্দারা কলেজে এসে বিক্ষোভও দেখান। তারপর থেকেই অধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে দাবি তাঁদের। এর ফলে শিক্ষকদের ভাতা-সহ ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন সবই এখন ফাইলবন্দি। তাঁদের আরও অভিযোগ, “পরিচালন কমিটির সভাপতিকে বার বার এই বিষয়ে জানালেও কোনও লাভ হয়নি। গোটা ঘটনাটি লিখিত ভাবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও ময়ূরেশ্বর-২ ব্লকের বিডিও-র কাছে পাঠানো হয়েছে।” জেলাশাসককে এই বিষয়ে অবহিত করা হয়েছ বলে জানিয়েছেন বিডিও (যিনি পরিচালন কমিটির সদস্যও) বাবুলাল মাহাতো। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক দেবকুমার পাঁজা বলেন, “ওই কলেজের ব্যাপারে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি অধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাজে অসঙ্গতি পাওয়া যায় তা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কিন্তু এত অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে সেই অধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কী বলছেন? অধ্যক্ষকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সবাইকে কলেজ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।” একই সুরে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অনুকূল শীল বলেন, “এ ব্যাপারে সব জায়গায় জবাবদিহি করতে বাধ্য নেই।” ঢেকা অঞ্চল কমিটির সভাপতি তৃণমূলের সুশান্ত পাল কলেজটির বর্তমান অচলাবস্থার জন্য সিপিএমকে দায়ী করেছেন। যদিও পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তপন চৌধুরী বলেন, “কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও মন্তব্য করব না।”
এই জটিলতার মধ্যে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০০ ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ। |