বালুরঘাটে আত্রেয়ীর উপর পাগলিগঞ্জ সেতু এবং বুনিয়াদপুরে রেলের কামরা তৈরির কারখানা। একদিকে সহজ যোগাযোগ। অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই এক জোড়া প্রকল্পের সুবাদেই আগামী পঞ্চায়েত ভোটের আগে দক্ষিণ দিনাজপুরের মন জয়ের কাজটা সহজ হবে বলে বলে মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। আজ, শুক্রবার বুনিয়াদপুরের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর একগুচ্ছ জনমুখী প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। হবে একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস ও ঘোষণাও। তবে সেতু ও রেলের কামরা তৈরির কারখানা তৈরির প্রকল্পের শিলান্যাসের খবরে দক্ষিণ দিনাজপুরের দুই প্রান্ত, বালুরঘাট এবং বুনিয়াদপুরে খুশির হাওয়া। কিছুটা উযসবের আমেজও দেখা যাচ্ছে। ওই দুটি প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে বড় ভূমিকা নেওয়ার সুবাদে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বিপ্লব মিত্রও। পাঁচ-ছয় মাস অচিরাচরিত শক্তি মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েও নিজের এলাকায় কোনও প্রকল্প করে উঠতে পারেননি বলে অভিযোগ বালুরঘাটের কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। বিধায়ক হয়ে বিপ্লববাবু তার এলাকায় ওয়াগান তৈরির মতো জেলায় একমাত্র বৃহৎ শিল্প স্থাপনের সূচনা করাতে পেরেছেন। তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্র হরিরামপুর এলাকার বুনিয়াদপুরে ওয়াগান ফ্যাক্টরি তৈরির অনুমোদন হয় গত মার্চের রেল বাজেটে। বছরে এক হাজার ওয়াগান তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রকল্পে প্রথম দফায় ১৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এর পরে রেলমন্ত্রী বদল সহ নানা কারণে প্রকল্পটি ঝুলে যায়। জেলায় উন্নয়নের নিরিখে অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা বংশীহীরী ও হরিরামপুরের মতো ওই এলাকার উন্নতিতে রেলকেই ‘পাখির চোখ’ করেন বিপ্লববাবু। রেলমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নড়ে বসেন রেলের কর্তারা। বুনিয়াদপুরে রেলের নিজস্ব প্রায় ৩০ একর জমিতে সমীক্ষা করে নির্দিষ্ট হয় কারখানা তৈরির সিদ্ধান্ত। বিপ্লববাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা খুব চিন্তাভাবনা করেই জেলার গেটওয়ে বুনিয়াদপুরকে ওয়াগান শিল্পের জন্য বেছে নিয়েছেন। এই কারখানায় যে সমস্ত দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন, তা এ জেলার আইটিআই এবং পলিটেকনিক কলেজ থেকেই প্রশিক্ষিত ছাত্রছাত্রীদের পাওয়া যাবে। সে কারণে গঙ্গারামপুরে পলিটেকনিক কলেজ তৈরি হবে। পাশাপাশি জেলার ৮টি ব্লকেই আইটিআই কেন্দ্র গড়ার উপর জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।” বিপ্লববাবুর দাবি, বুনিয়াদপুরের এই ওয়াগান তৈরির কারখানায় অন্তত ৮ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হবে। তৃণমূল সভাপতি বিপ্লববাবু জানান, ওই কারখানাকে কেন্দ্র করে বহু অনুসারী শিল্প গড়ে উঠবে। বহু কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। বাম আমলে বালুরঘাট ব্লকের পতিরাম অঞ্চলের এপারে পাগলিগঞ্জের সঙ্গে ওপারে খাসপুরকে যুক্ত করে আত্রেয়ী নদীর উপর একটি সেতু তৈরির দাবি ছিল। দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদের দাবি মেনে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী উদ্যোগী হন। শুরু হয় আত্রেয়ী নদীর ওপারে থাকা খাসপুরে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ডাকঘর, হাইস্কুল, গার্লস হাইস্কুল স্থাপন। নদী অববাহিকা জুড়ে খাসপুর, বদলপুর, ফুলঘরা, মদনগঞ্জ, পার্বতীপুর, বোয়ালদার, কালিকাপুর সহ গোটা একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১২ টি গ্রামের মানুষ জেলা সদর বালুরঘাট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন। ২০১১ সালে পাগলিগঞ্জ খাসপুর এলাকার সেতুটি অনুমোদন হয়। খরচ ধরা হয় ১৭ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু বালুরঘাটে তৃণমূলের এক জেলা নেতার ভাই তথা শিক্ষক নদীর ধারে খেলার মাঠ নষ্ট হবে অজুহাতে সেতু নির্মাণে আপত্তি তোলেন। কিন্তু, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ও তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সী সহ একাধিক তৃণমূল নেতার উদ্যোগে তা বাধা মুক্ত হয়ে প্রকল্পের সূচনা হতে চলেছে। |