মুর্শিদাবাদের রেশ রইল উত্তরবঙ্গের তিন জেলাতেও! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে কংগ্রেসের ‘বিশেষ’ একাংশকে আমন্ত্রণ না জানানোকে ঘিরে তৈরি হল বিতর্ক।
মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী ও বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীকে বুধবার মুর্শিদাবাদে মমতার অনুষ্ঠানে না ডাকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। একই ভাবে বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ডাক পেলেন না বিভিন্ন সময়ে মমতার ‘কঠোর সমালোচক’ রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। বরং রায়গঞ্জে প্রস্তাবিত এইমস ধাঁচের হাসপাতাল নিয়ে এ দিনও দীপা-মমতা তীব্র তরজায় জড়িয়েছেন। |
মালদহ এবং দুই দিনাজপুরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে দলীয় সাংসদ ও জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের ডাকা হয়নি অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। মালদহ কলেজ অডিটরিয়ামে উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী এবং জেলা সভাধিপতি উজ্জ্বল চৌধুরী আমন্ত্রণ পাননি। তেমনই উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানে দীপা দাশমুন্সি ও জেলা পরিষদের কংগ্রেস সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দারকেও ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ। দীপা অবশ্য এ দিন দিল্লিতে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “এখানেও রাজনীতি করা হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার ও গোয়ালপোখরের বিধায়ক মহম্মদ গোলাম রব্বানিকে কেন ডাকা হয়নি?” সন্ধ্যায় বালুরঘাটে উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকেও তাঁদের ডাকা হয়নি হয়নি বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগ করেছেন। আবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সিপিএম সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মু এবং বালুরঘাটের আরএসপি সাংসদ প্রশান্ত মজুমদারকেও ডাকা হয়নি। |
মালদহের বৈঠকে ইংরেজবাজারের কংগ্রেস বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, গাজলের কংগ্রেস বিধায়ক সুশীল রায়, মালদহের কংগ্রেস বিধায়ক অজুর্ন হালদার, রতুয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যাকে অবশ্য দেখা গিয়েছে। আবার রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি উত্তর দিনাজপুরের উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে যাননি। কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “জেলায় মুখ্যমন্ত্রী আসছেন বলে আমাকে কেউ আমন্ত্রণ জানাননি। এমনকী ফোন করেও কেউ কিছু বলেননি। পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় কংগ্রেস একা লড়াই করার কথা বলেছে। সে জন্যই বোধ হয় আমাকে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ডাকা হয়নি।”
মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি উজ্জ্বলবাবুর ক্ষোভ, “আমাকেও কেউ আমন্ত্রণ জানাননি। অথচ জেলা পরিষদের মাধ্যমেই এলাকায় বেশির ভাগ উন্নয়নের কাজ হয়।” তাঁর বক্তব্য, “বৈঠকে না ডেকে আমাদের অপমান করা হয়েছে!” উত্তর দিনাজপুরের কংগ্রেস সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দারও বলেন, “জেলা পরিষদ কি প্রশাসনের বাইরে? জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক করলেন অথচ আমাদের ডাকা হল না কেন বুঝতে পারছি না।” |
মালদহে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়। |
যদিও নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী তথা মালদহ জেলা তৃণমূল সভাপতি সাবিত্রী মিত্রের দাবি, “সাংসদের সবাইকে ডাকা হয়েছিল। সবাই আসেননি কেন, তা জানি না। আর কোনও জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে সভাধিপতিরদের ডাকা হয়নি।” বিধবা ভাতা, মোয়াজ্জেম ভাতা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের ভাতা বিলি করার জন্য এ দিন মালদহ জেলা প্রশাসন ইংরেজবাজারে বৃন্দাবনী মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সভার আয়োজন করেছিল। ওই সভা বাতিল করা হয়। সাবিত্রীদেবী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ওই সভা করতে রাজি হয়নি। তাই ওই সভা শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়েছে।”
|
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি
ইটাহারে গামারি নদীর ওপর সেতু, পাঞ্জিপাড়ায় আইটিআই কলেজ, চোপড়ায় বারাং নদীর সেতু, ইটাহারে সুঁই নদীর সেতু, হেমতাবাদে বাস টার্মিনাস, করণদিঘিতে মডেল স্কুল, হেমতাবাদের বাঙালবাড়িতে কস্তুরবা গাঁধী গার্লস স্কুলের ছাত্রী হস্টেল, গোয়ালপোখরে সিরিয়ানি নদীর সেতু, হেমতাবাদে ছাত্রী হস্টেল, হেমতাবাদে কাহাইল সেতু। বংশীহারি এবং কুমারগঞ্জে মুসলিম গার্লস হস্টেল। বালুরঘাটে মুসলিম ছাত্রদের হস্টেল। হরিরামপুরে বাসস্ট্যান্ড এবং মার্কেট কমপ্লেক্স। বুনিয়াদপুরে বাস টার্মিনাস। কুমারগঞ্জে ডিগ্রি কলেজ। পাগলীগঞ্জে আত্রেয়ী নদীর উপর সেতু। গঙ্গারামপুরে হ্যান্ডলুম হাব। তপন এবং হরিরামপুরে আইটিআই। বালুরঘাটে রবীন্দ্র-নজরুল নাট্য অ্যকাদেমি। গঙ্গারামপুরে মার্কেট কমপ্লেক্স।
উদ্বোধন
ইসলামপুর কলেজের সংখ্যালঘু ছাত্রীদের হস্টেল। ইসলামপুর শিল্পতালুক। বংশীহারীতে একলব্য স্কুল। বালুরঘাটে আদিবাসী আশ্রম হস্টেল। আলিপুরে জল সরবরাহ। হরিগ্রামে পানীয় জল প্রকল্প।
ঘোষণা
মালদহে ৫ এক জমিতে একটি আইটি হাব। ১৬ কোটি টাকায় মেডিক্যাল কলেজে মাদার ও চাইল্ড হাব। চাঁচলে মাল্টি ফেসিলিটি হাসপাতাল। মালদহে ১৭টি নতুন প্রাথমিক স্কুল, ৭২টি স্কুলকে আপার প্রাইমারি, ৪৫টি মাধ্যমিক স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত। মালদহ জেলার ১৩টি ব্লকে একটি করে পলিটেকনিক।
বিতরণ
১০১০ জনকে তফসিলি শংসাপত্র বিলি। ১৮৭ জনকে পাট্টা বিলি। ২৫৮ জনকে নিজ গৃহ নিজ ভূমি দান। (সবই দক্ষিণ দিনাজপুরে) রেল প্রকল্প ইটাহার-রায়গঞ্জ এবং ইটাহার-বুনিয়াদপুর রেলপথ তৈরির কাজের শিলান্যাস। বুনিয়াদপুরে রেল ওয়াগন ফ্যাক্টরির শিলান্যাস।
রেল প্রকল্প
ইটাহার-রায়গঞ্জ এবং ইটাহার-বুনিয়াদপুর রেলপথ তৈরির কাজের শিলান্যাস। বুনিয়াদপুরে রেল ওয়াগন ফ্যাক্টরির শিলান্যাস।
|
(সহ প্রতিবেদন: গৌর আচার্য) |