ডেঙ্গি সংক্রমণ নিয়ে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানকেই এ বার চ্যালেঞ্জ করে বসলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ছাড়লেন না মেয়র পারিষদকেও। রোগ সংক্রমণের তথ্য ‘চাপা’ দেওয়ার ঐতিহ্য থেকে বেরোতে পারলেন না মেয়র।
কলকাতার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যখন ডেঙ্গি রোগীর ঠাঁই মেলা ভার, তখন মেয়র বৃহস্পতিবার ঘোষণা করে দিলেন, “অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার কলকাতা শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কম।” তবে নিজের দাবির সমর্থনে কোনও পরিসংখ্যান দেননি মেয়র। পরিসংখ্যান যাঁদের দেওয়ার কথা, পুর-স্বাস্থ্য বিভাগের সেই অফিসারেরা মেয়রের কথা শুনে বিস্মিত। পরিস্থিতি সামাল দিলেন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। তিনি বললেন, “গত বারের তুলনায় অবশ্যই এ বার শহরে ডেঙ্গির সংক্রমণ কম। এ বছর এখনও পর্যন্ত ২৫৬ জন এই রোগে আক্রান্ত হন। মারা গিয়েছেন এক জন।” অতীনবাবুর দেওয়া পরিসংখ্যানের সঙ্গে কিন্তু রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের ফারাক রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কলকাতায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা (অ্যান্টিবডি পজিটিভ) ৩২৩। মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। |
ডেঙ্গি-আতঙ্কের জেরে কপাল ফিরেছে মশারি বিক্রেতাদের। তেমনই একটি
দোকানে চলছে বিকিকিনি। বৃহস্পতিবার, শহরে। ছবি: সুমন বল্লভ |
পরজীবী-বিশেষজ্ঞেরা জানান, রোগের আসল পরিস্থিতি গোপন করলে রোগ প্রতিরোধের পরিকল্পনাই তৈরি করা যায় না। মানুষকে সতর্ক করা যায় না। কারণ, তাঁরা বিষয়টি হাল্কা ভাবে নেন। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া সংক্রমণের আসল সময় এখনও আসেনি বলেও মন্তব্য করেন ওই বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য, এখনই সচেতন না হলে পরে সমস্যার সৃষ্টি হবে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না।
দেরিতে হলেও তৃণমূল কাউন্সিলরদের অনেকে সরব হওয়ায় বিধাননগর পুরসভা ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়েছে। এ দিন চিৎপুর লকগেট থেকে গঙ্গার জল ঢোকানো হয় কেষ্টপুর খালে। বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু জানান, সেচ দফতরের সঙ্গে আলোচনার পরে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে জল আর স্থির থাকবে না। জলে স্রোত থাকলে সেখানে মশা আর ডিম পারবে না। মশার আঁতুড়ঘর ধ্বংস হবে। এতে বিধাননগর, দক্ষিণদাঁড়ি, গোলাঘাটা থেকে কেষ্টপুরের এলাকায় মশা কমবে বলেই আধিকারিকদের ধারণা।
বিধাননগর পুরসভা এলাকায় কামান দাগা, মশার তেল স্প্রে করার পাশাপাশি ঝোপঝাড়, জঙ্গল পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। অটো নিয়ে প্রচারও শুরু হয়েছে। ২০৬ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে সচেতনতামূলক প্রচারে ম্যাজিক শো-র আয়োজন করা হয়। সেখানে হাজির হয়ে চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী শহরবাসীদের আতঙ্কিত না হতে আবেদন জানান। তিনি স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি না করে সকলকে পথে নামতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “আমরা কাজ শুরু করেছি। ডেঙ্গি প্রতিরোধে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি।” |