এইমস ধাঁচের হাসপাতাল
কংগ্রেসকে জমি জোগাড়ের ‘বার্তা’ মমতার
পাখির চোখ পঞ্চায়েত ভোট। উত্তরবঙ্গে কংগ্রেস-তৃণমূল তরজার কেন্দ্রে তাই আরও একবার রায়গঞ্জের এইমস ধাঁচের প্রস্তাবিত হাসপাতাল।
জমি থাকা সত্ত্বেও রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল গড়তে রাজ্য সরকার টালবাহানা করছে, এই অভিযোগে উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। দিলেন এমন দিনে, যে দিন রায়গঞ্জেরই অদূরে ইটাহারের প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এইমস নিয়ে ‘রাজনীতি’-র অভিযোগ তুলেছেন এবং নাম না করে দীপাদেবীকেই কার্যত ‘জমি জোগাড় করার’ বার্তা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ইটাহারে হাইস্কুল মাঠে সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এইমস ধাঁচের হাসপাতাল তৈরি নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। ১০০ একর জমি দরকার। যাঁরা এ সব রাজনীতি করছেন, তাঁদের বলছি, জমি জোগাড় করে দিন। আমরা হাসপাতাল তৈরি করে দেব। তবে কৃষকদের বুকে বন্দুক ধরে জোর করে জমি নেব না। কৃষকদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আমি ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। যাঁরা আমার সমালোচনা করছেন, তাঁদের বলছি, আমার মৃত্যু হলেও আমি জোর করে কারও কাছ থেকে জমি নেব না!”
যা শুনে দীপাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “রাজনীতি হচ্ছে কি না, জানি না। রাজনীতি তো মুখ্যমন্ত্রীই করে গেলেন! তা ছাড়া, এখানে সিঙ্গুরের মতো ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক চাষিদের প্রশ্ন আসছে কী করে? এইমস ধাঁচের হাসপাতাল গড়তে তো রায়গঞ্জের পানিশালায় সব চাষিই জমি দিতে ইচ্ছুক! আর একলপ্তে ১০০ একর অকৃষি জমি উনি পাবেন কোথায়?”
স্নেহের পরশ। এক প্রতিবন্ধী ছাত্রীকে ক্রাচ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার ইটাহারে। ছবি: তরুণ দেবনাথ
পাশাপাশি দীপাদেবীর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রীর এই হাসপাতাল গড়ার কোনও এক্তিয়ারই নেই! এটা গড়বে কেন্দ্র। উনি কেন্দ্রকে জমি দিতে পারেন।” কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রশ্ন, যেখানে এ রাজ্যেরই রেল প্রকল্পের (ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ রেললাইন) জন্য রাজ্য জমি অধিগ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে, সেখানে এইমসের মতো জনস্বার্থের প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন রাজ্য জমি নিতে উদ্যোগী হবে না? বস্তুত, এই একই প্রশ্ন উঠেছে কাটোয়ায় এনটিপিসি-র প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণকে ঘিরেও।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির উদ্যোগেই রায়গঞ্জে এইমসের (অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস) ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার রায়গঞ্জে ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ একর জমিতে ৯৬০ শয্যার এইমসের ধাঁচের একটি হাসপাতাল গড়ার অনুমোদন দেয়। হাসপাতাল তৈরির জন্য রাজ্য সরকারকে বিনামূল্যে জমি দিতে হবে বলেও কেন্দ্র জানিয়ে দেয়। ২০১২ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসন পানিশালায় ১২৫ একর জমি চিহ্নিত করে।
২০১০ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করে সবুজ সঙ্কেতও দেয়। গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, বর্তমানে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে চিঠি দিয়ে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করার অনুরোধ করেন। পরে বিধানসভা ভোট ঘোষণা হওয়ায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে যায়।
রাজ্যে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকার গঠন হওয়ার পরে এইমসের ধাঁচে হাসপাতালটি কল্যাণীতে গড়ার বিষয়ে সরকারি তরফে আলোচনা শুরু হয়। তখনই আন্দোলনে নামে কংগ্রেস। উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এমনিতেই মালদহ, উত্তর দিনাজপুর-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় কংগ্রেস এখনও অন্যতম শক্তিশালী দল। এইমসের ধাঁচে ওই হাসপাতাল রায়গঞ্জে গড়া হলে সেই ‘সাফল্য’ সামনে রেখে কংগ্রেস আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা তৃণমূলকে ‘দুশ্চিন্তায়’ রাখবে।
স্বাভাবিক ভাবেই এইমস নিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগের জবাব দিতে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেন, রাজ্য সরকার উত্তর দিনাজপুরে দুটি ‘সুপার মাল্টি স্পেশালিটি’ হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি হবে ইসলামপুরে, অন্যটি রায়গঞ্জে। এ ছাড়াও ইটাহারে একটি গ্রামীণ হাসপাতাল হবে। ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য ৭৫ লক্ষ টাকা ও রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের জন্য ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হবে।
তৃণমূল নেত্রী এ দিন ইটাহারে বলেছেন, “শুধু আমাদের গালাগালি দিয়ে রাজনীতি করে কোনও লাভ নেই। নির্বাচনের আগে এলাকায় গেলাম, ভোটে জিতলাম, তার পর আর দেখা নেই!”
কংগ্রেস সাংসদ দীপাদেবী পাল্টা বলেছেন, “রায়গঞ্জে একটা এইমস হলেই যথেষ্ট। দু’টি মাল্টি স্পেশালিটি হসপিটাল করার দরকার নেই! আসলে মুখ্যমন্ত্রী এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত চালানোর চেষ্টা করছেন।” তাঁর দাবি, উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলী ও রায়গঞ্জে এইএমস ধাঁচের হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত একসঙ্গে হয়েছিল। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব জমি দিয়েছেন কেন্দ্রকে। এখানে তা হল না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েও তাঁরা ডাক পাননি বলেও দীপাদেবীর অভিযোগ।
উত্তর দিনাজপুরের কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “চাষিরা স্বেচ্ছায় জমি দিতে প্রস্তুত। চাষিরা আমাদের ও জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছেন।” জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “রাজ্য সরকার নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ সম্ভব নয়। কেউ স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন কি না তা খোঁজ নিয়ে দেখব।”
সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব পাল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তিনি বেঁচে থাকতে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য চাষিদের কাছ থেকে জোর করে জমি নেবেন না। যেখানে চাষিরা জমি দিতে চান, সেখানে জবরদস্তি অধিগ্রহণের প্রসঙ্গ তোলা মানে পরিস্থিতিটা গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.