|
|
|
|
সজলধারা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ |
সভাধিপতির সঙ্গে ‘বিরোধ’, বদলি চাইলেন এইও |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
‘সজলধারা’ প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি সহ নানা অভিযোগ নিয়ে সভাধিপতি পাসকেল মিন্জের সঙ্গে অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক (এইও) সুবল রায়ের মতবিরোধের জেরে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে অচলাবস্থার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিষদ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সভাধিপতির বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের কাছে বদলির আর্জি জানিয়েছেন সংস্থার সুবলবাবু। তাঁর বদলির আবেদনপত্র মহকুমা পরিষদের এগজিকিউটিভ অফিসার তথা দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত সচিবের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি, ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের দার্জিলিং শাখার পক্ষ থেকেও ওই বিষয়টি জানিয়ে জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। জেলাশাসক বলেছেন, “অভিযোগপত্র ও বদলির আর্জি পেয়েছি। এটা প্রশাসনের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলব। যা জানানোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”
পক্ষান্তরে, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অভিযোগ করেছেন, সুবলবাবু প্রতি পদে উন্নয়নের কাজে বাধার সৃষ্টি করছেন। সভাধিপতির দাবি, “শিলিগুড়ির ২২ জন প্রধানই এইও-র কাজে বিপাকে পড়েছেন। বরাদ্দ টাকা পাচ্ছেন না। ফলে, উন্নয়নমূলক কাজ আটকে থাকছে। প্রধানরা আমার কাছে অভিযোগ করায় আমি ওঁকে একটু বকাবকি করেছি। কাজ না-হলে ভর্ৎসনা করার অধিকার আমার রয়েছে। এতে অন্যায় কোথায়?” পাশাপাশি, সভাধিপতির কটাক্ষ, “প্রধানদের কজন ওঁকে এইও হিসেবে চান সেটা রাজ্য সরকার খোঁজ নিয়ে দেখুক।” সুবলবাবু অবশ্য সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পরিষদের একাধিক অফিসার জানা, সুবলবাবু সজলধারা প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করানোর জেরেই সভাধিপতির রোষের মুখে পড়েছেন। এক অফিসারের কথায়, “সুবলবাবু একজন দক্ষ অফিসার। |
পাসকেল মিনজ |
সুবল রায় |
|
নিজস্ব চিত্র। |
অনেকদিন ধরে কাজ করছেন। কেন্দ্রের কাছে সজলধারা প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে বলে অবিযোগ জমা পড়লে সেটি রাজ্যের কাছে পৌঁছয়। ফাটাপুকুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে সজলধারার টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে সন্দেহ করা হয়েছে। তা নিয়ে বিডিও দের তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেন এইও। ওই তদন্ত রিপোর্ট না-পেলে সজলধারা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের যে ১০ শতাংশ পরিষদের কাছে রয়েছে তা দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন।”
সভাধিপতি জানান, কোনও অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে বলে বরাদ্দ টাকা আটকে রাখার কোনও এক্তিয়ার কিংবা আইন নেই। তিনি বলেন, “যেখানে ২০টির বেশি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। সব টাকা দেওয়া হয়েছে। মাত্র ১০ শতাংশ টাকা দিলেই ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে। সেই টাকা না-দিলে সার্টিফিকেট আসবে না। সার্টিফিকেট কেন্দ্রের কাছে না-পাঠালে আগামী বছরের বরাদ্দ মিলবে না। সে জন্যই এইও কে ভর্ৎসনা করে দ্রুত টাকা দিতে বলেছি।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ইতিমধেই ওই অভিযোগ পৌঁছেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরেও। পঞ্চায়েত দফতর থেকে দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে বিশদে জানতে চেয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক বলেছেন, “এমন ঘটনা কখনও কাম্য নয়। গ্রামোন্নয়নের কাজ সকলে মিলেমিশে করতে হবে। মতানৈক্য থাকলে আলোচনায় মেটাতে হবে। তর্ক করা, হুমকি দেওয়া, সতর্ক করার অভিযোগ ওঠার কথা নয়। আমি বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখে যা বলার বলব।” সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমাদের সভাধিপতিকে কাজ করতে প্রতি পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগ আমরা আগেই নানা স্তরে জানিয়েছি। এখনও আমলাদের একাংশ নানা ভাবে পরিষদের উন্নয়নের কাজে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |
|
|
|
|
|