খাওয়া-পরার অভাবই মহিলাদের ভিন্ রাজ্যে চলে যাওয়া বা পাচারের অন্যতম মূল কারণ। তাই শুধু পুলিশি নজরদারি এবং ধরপাকড় চালিয়ে নারী পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে কলকাতা হাইকোর্টের অভিমত। ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, এটা বন্ধ করার জন্য চাই রাজ্যের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, চাই দরিদ্র মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা।
নারী পাচার রোধে জেলা পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় নয় এবং পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদের উদ্ধারেও তারা তেমন উদ্যোগী নয় বলে হাইকোর্ট আগেই একাধিক বার পুলিশের তীব্র সমালোচনা করেছে। এই বিষয়ে কয়েকটি মামলায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ কিছু দিন আগে তিন জেলার পুলিশ সুপারদের তলব করেছিল।
বৃহস্পতিবার ওই তিন পুলিশ সুপার হাইকোর্টে হাজির হন। মেয়ে পাচার প্রতিরোধ এবং উদ্ধারের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশ কী করছে, সেই বিষয়ে রিপোর্টও দেন তাঁরা।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারেরা জানান, সমন্বয়ের অভাবের জন্যই হাইকোর্টের কাছে প্রকৃত তথ্য দেওয়া যায়নি। সন্দেশখালি থেকে নিখোঁজ মেয়েদের মধ্যে চার জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
রাজ্যের তরফে জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ সুপারদের রিপোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের কাছে পেশ করেন। তিনি বলেন, পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদের পরিবারের লোকেরাও অনেক সময় পুলিশের সঙ্গে যথাযথ ভাবে সহায়তা করেন না। অভাব-অনটনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা জেনেশুনেই মেয়েদের দিল্লি, মুম্বই বা অন্য শহরে কাজ করতে পাঠিয়ে দেন। কোথায়, কোন পরিবারে তাদের কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে, তার প্রকৃত কোনও তথ্য না-জেনেই মেয়েদের পাঠানো হয়।
জিপি-র এই বক্তব্যের সূত্র ধরে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, সুন্দরবন এলাকা এবং বিভিন্ন সীমান্ত জেলায় এই সমস্যা বেশি। পরিবারের লোকেরা মোটেই সাধ করে মেয়েদের অজানা, অচেনা জায়গায় পাঠান না।
নিরুপায় হয়েই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সবটাই বাঁচার জন্য, সবটাই খাদ্যের জন্য। রুজিরোজগারের অন্য ব্যবস্থা নেই বলেই অনেক সময় সম্ভাব্য বিপদের কথা জেনেও মেয়েদের অন্যত্র পাঠাতে বাধ্য হন অভিভাবকেরা। তাই রাজ্য সরকারের দায়িত্ব, ওই সব গরিব পরিবারের জীবিকার ব্যবস্থা করা। সরকার রুজিরোজগারের বন্দোবস্ত না-করলে উপার্জনের অন্য পথ না-পেয়ে মেয়েদের ওই পথে পা দিতে হবে।
গরিবদের জীবনধারণের ন্যূনতম ব্যবস্থা করতে না-পারলে নারী পাচার সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতিও। পুলিশ যাতে পাচার হওয়া মেয়েদের উদ্ধারে মনোযোগী হয়, তার ব্যবস্থা করার জন্য জিপি-কে পরামর্শ দেন তিনি। গরিব পরিবারের মেয়েদের যাতে অন্য পথে পা বাড়াতে না-হয়, সেই জন্য তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করার উপরে সরকারকে জোর দিতে বলেন। |