সরকারি ভাবে ছুটি ঘোষণা করা হলে সেটা যে নির্ভেজাল ছুটিই এবং সে-দিন যে হাজিরা খাতায় সই করার কোনও প্রয়োজন নেই, পরিষ্কার ভাবে তা জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
রাজ্যপালের ঘোষণা করা সরকারি ছুটির দিনে শিক্ষকেরা স্কুলে আসা সত্ত্বেও কেন হাজিরা খাতায় সই করেননি, সেই প্রশ্ন তুলে ছ’জন শিক্ষককে ‘শো-কজ’ বা কারণ দর্শানোর নোটিস দেন তার জন্য স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি তরুণ দাসের ডিভিশন বেঞ্চ।
বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতা দিবসে অনেক বিচারপতি হাইকোর্টে পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। তা হলে কি সে-দিনটাকে ছুটি বলে গণ্য করা হবে না? হাজিরা খাতায় সই করতে হবে? প্রজাতন্ত্র দিবসে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী যান, কিছু অফিসারেরাও যান। তা হলে কি সে-দিনও তাঁরা হাজিরা খাতায় সই করবেন?
সেটা যে হতে পারে না, তা জানিয়ে মধ্যমগ্রামের উদয়রাজপুর-হরিহরপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের ওই কারণ দর্শানোর নোটিস খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১১ সালের ৮ অগস্ট অর্থাৎ বাইশে শ্রাবণ রবীন্দ্র-প্রয়াণ দিবসকে কেন্দ্র করে। এই মামলার আবেদনকারী প্রশান্ত কর্মকার, অমলদাস-সহ ছয় শিক্ষকের আইনজীবী এক্রামুল বারি আদালতে বলেন, ২০১১ সালের ৮ অগস্ট রাজ্যপাল স্বাক্ষর করে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সর্বত্র বাইশে শ্রাবণ পালন করতে হবে।
২৮ জুলাই রাজ্যের স্কুলশিক্ষা কর্তা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে জানান, ৮, ৯ এবং ১০ অগস্ট প্রতিটি স্কুলে বাইশে শ্রাবণ পালন করতে হবে আলোচনা, নাচগান, আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে। উদয়রাজপুর স্কুলেও ওই দিন নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়।
প্রধান শিক্ষক অনুষ্ঠানের শেষে সহশিক্ষকদের হাজিরা খাতায় সই করতে বলেন। ছয় শিক্ষক অনুষ্ঠানে হাজির থাকলেও ছুটির দিন হাজিরা খাতায় সই করার ব্যাপারে আপত্তি জানান। প্রধান শিক্ষক তাঁদের জানান, ম্যানেজিং কমিটি এ দিন কোনও ছুটি নেই বলে জানিয়েছে। এটা কাজের দিন। তাই সই করতে হবে। ৯ অগস্ট ওই শিক্ষকেরা স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক তাঁদের ৮ অগস্ট ছুটির জন্য আবেদন করতে বলেন। শিক্ষকেরা বলেন ঘোষিত ছুটির দিনে তাঁরা আবার ছুটির জন্য আবেদন করবেন কেন? ছুটির দিনে সই বা ছুটির জন্য আবেদন না-করায় প্রধান শিক্ষক তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। এক্রামুল বারি বলেন, সরকারের ঘোষিত ছুটির দিনে হাজিরা খাতায় সই করতে হয়, এমন কথা এর আগে কখনও শোনা যায়নি। ছুটির দিনের অনুষ্ঠানে শিক্ষকেরা স্কুলে আসেন ঠিকই। কিন্তু তাতেই সেটা কাজের দিন হয়ে যেতে পারে না।
প্রধান শিক্ষকের আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য বলেন, স্কুলের পরিচালন সমিতি আমার মক্কেলকে জানায়, ওটাকে কাজের দিন বলেই ধরতে হবে। ছুটির দিন নয়। প্রধান শিক্ষক সেই জন্যই সহশিক্ষকদের হাজিরা খাতায় সই করতে বলেছিলেন।
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ঘোষিত ছুটির দিনে হাজিরা খাতায় সই করার কোনও প্রয়োজন নেই। |