দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় • নবদ্বীপ |
পহেলে দর্শনধারী!
শ্বেতশুভ্র পোশাক, পক্ক কেশ, দীর্ঘ শিখা, গলায় তুলসীর মালা, মুখে হরিনামস্বামী বংশীবদন ও স্বামী মদনমোহন। ‘বিরিঞ্চি বাবা’র মতোই জাঁকিয়ে বসেছিলেন দু’জনে। দক্ষিণা বাবদ হাজার হাজার টাকা আয়ও হচ্ছিল নিয়মিত। ফুলেফেঁপে উঠছিল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। বাড়ছিল সম্পত্তির বহর। কিন্তু অভিযোগ, ফাঁকতালে ইটভাটা-সহ মঠের যাবতীয় সম্পত্তি বেআইনি ভাবে নিজেদের নামেও করিয়ে নিয়েছিলেন এই দু’জন। তবে শেষরক্ষা হল না। এক ভক্তের অভিযোগের ভিত্তিতেই আপাতত শ্রীঘরে দুই বাবাজি। হলদিয়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অমিতাভ
|
স্বামী বংশীবদন |
মাইতি বলেন, “ওই দু’জনের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, জালিয়াতি ও সম্পত্তি তছরুপের অভিযোগ আনা হয়েছে।”
এই দু’জনের মূল আস্তানা নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জে এক মঠে। ওই মঠের অধ্যক্ষ ছিলেন ভক্তিভূষণ ভারতী মহারাজ। তাঁর আমলেই মঠে এসেছিলেন বংশীবদন ও মদনমোহন। বংশীবদন ওরফে বংশী দাস পূর্ব মেদিনীপুরের বাজকুলের বাসিন্দা। মদনমোহন ওরফে মদন দাসও বাজকুলেই থাকতেন। তবে তাঁর বাড়ি ওড়িশায়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও এই মঠের শাখা রয়েছে ওড়িশা, এমনকী বৃন্দাবনেও। সেই সূত্রেই পূর্ব মেদিনীপুরের বাজকুল, কাঁথি, নন্দীগ্রামে যাতায়াত ছিল বংশীবদন ও মদনমোহনের। বছর পাঁচেক আগে মঠাধ্যক্ষ ভারতী মহারাজের মৃত্যু হয়। অভিযোগ, তারপরই ক্রমে জালিয়াতির জাল বিস্তার করেন বংশীবদন। আর তাঁর ডান হাত ছিলেন মদনমোহন।
নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জে প্রায় ৬ বিঘে জমির উপরে এই মঠ ও রাধা-কৃষ্ণের মন্দির। হাওড়ার কুর্চিবেড়িয়াতে ইটভাটা ছাড়াও ছিল অনেক সম্পত্তি। ওই ইটভাটার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন বংশীবদন। মঠের প্রাক্তন সম্পাদক কৃষ্ণকিশোর দাস বলেন, “ভারতী মহারাজের মৃত্যুর পরে বংশীবদনই মঠের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন।” কিন্তু সম্প্রতি মঠের পুজোআচ্চা এক রকম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিক্রি হতে শুরু করে মঠের কিছু সম্পত্তি। গত ২৩ অগস্ট হলদিয়ার বাসিন্দা অর্ধেন্দুবিকাশ দাস বংশীবদন ও মদনমোহনের বিরুদ্ধে থানায় তছরূপের অভিযোগ দায়ের করেন। অর্ধেন্দুবাবু বলেন, “ভারতী মহারাজের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেই মঠের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। নানা সময়ে প্রচুর অর্থ, এমনকী জমিও দান করেছি। কিন্তু বংশীবদনের আমলে মঠের কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তখনই সন্দেহ হয়। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি জালিয়াতি চলছে।”
গত শনিবার বাজকুলের মঠ থেকে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করে হলদিয়া থানার পুলিশ। হলদিয়া এসিজেএম আদালতের নির্দেশে আপাতত ৭ দিন তাঁরা পুলিশ হেফাজতে। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ধৃতদের। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অমিতাভবাবু বলেন, “তদন্তে অনেক তথ্যই উঠে এসেছে। এদের সঙ্গে আরও বড় কোনও চক্র জড়িত কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |