|
|
|
|
প্রৌঢ়ের সহৃদয়তায় মিলল আশ্রয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা |
প্রায় ন’মাস ধরে নিজের হাতে পরিচর্যা করার পরে অজ্ঞাতপরিচয় মূক ও বধির মহিলাকে হোমে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়ে মানবিকতার নজির গড়লেন এক প্রৌঢ়। মদনমোহন পাহাড়ি নামে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর ২ ব্লকের প্রতাপদিঘির ওই বাসিন্দা দোকানের কর্মী। তাঁর ভূমিকায় এখন উচ্ছ্বসিত পঞ্চায়েত-প্রশাসন। অনেক আগেই যে ভূমিকা নেওয়ার কথা
ছিল তাদের।
|
মদনমোহন পাহাড়ি |
প্রতাপদিঘি বাজারের একটি দোকানে কাজ করেন মদনমোহনবাবু। একদিন কাজে যাওয়ার পথে ললাট-জনকা রাস্তার ধারে বছর বত্রিশের এক মহিলাকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। স্থানীয়দের সাহায্যে তিনি ওই মহিলাকে রাস্তার ধারের একটি বিশ্রামাগারে নিয়ে আসেন। মূক ও বধির ওই মহিলা অসুস্থ ছিলেন। নিজেই উদ্যোগী হয়ে তাঁর চিকিৎসা ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ললাট-জনকা রোডের পাশে বিশ্রামাগারটিই হয়ে ওঠে ওই মহিলার ঠিকানা। মদনমোহনবাবু বলেন, “মেয়েটিকে বাঁচিয়ে রাখা আমার কাছে যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল। এলাকার মানুষরা অনেক কথা বললেও গুরুত্ব দিইনি। সাহায্য করার জন্য পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসন সবাইকে জানিয়েছি। কিন্তু কেউই চাল-গম ছাড়া অন্য কিছু সাহায্য করেনি। গত ২৬ অগস্ট প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জানালে অবশ্য সুরাহা হয়।” |
|
মূক ও বধির সেই মহিলা। |
মদনমোহনবাবুর স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী বলেন, “আমরা খুব গরিব। সামান্য উপার্জন। তাই ওই মহিলাকে বাড়িতে ঠাঁই দিতে পারিনি। কিন্তু স্বল্প সামর্থ্য নিয়েও ওই মহিলার কয়েক মাস ধরে খাওয়া, চিকিৎসা, পোশাক-আশাকের ব্যবস্থা করেছি।” স্থানীয় বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক সুভাষ ভুঁইয়া বলেন, “মদনমোহন প্রতি দিন নিজের হাতে ওই মহিলার হাত-পা ধুইয়ে দিতেন, জামা-কাপড় কেচে দিতেন।” কিন্তু প্রশাসন এতদিন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? স্থানীয় শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান মনোরঞ্জন গারু ও বিডিও ত্রিদিব সর বলেন, “প্রথম দিকে ওই বিষয়ে নজর দেওয়া যায়নি ঠিকই, কিন্তু লিখিত আবেদন পাওয়ার পর আমরা ওই মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছি। তবে, মদনমোহনবাবুর ভূমিকা প্রশংসার যোগ্য।” এগরার মহকুমাশাসক অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, “খবর পেয়েই আমি জেলাশাসক ও জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিককে জানাই। পরে স্থানীয় পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দিই ওই মহিলাকে কাঁথির একটি হোমে রাখার ব্যবস্থা করার জন্য।” ওই হোমের সুপার চন্দনা মাইতি বলেন, “আমরা চিকিৎসা ও পরিচর্যা করে ওই মহিলার নাম-ঠিকানা জানার চেষ্টা করব।” |
ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
|
|
|
|
|