রবিবারটাকে পাখির চোখ করেছেন সুনীল ছেত্রীরা। নেহরু কাপ জয়ের হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে ওই দিনই ‘যুদ্ধে’ নামবে উইম কোভারম্যান্সের ভারত।
আজ, শুক্রবারটা কাপ-জয়ের ড্রেস রিহার্সাল মাত্র। উল্টো দিকে দু’দিনই প্রতিদ্বন্দ্বী এক ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে একশো নয় ধাপ এগিয়ে থাকা ক্যামেরুন। ফলে ফাইনালের মহড়া দিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ জাতীয় দলের সামনে।
যুবরাজ সিংহ-বিজয়কুমার-জয়দীপ কর্মকাররা রাষ্ট্রপতিভবনে বুধবার বিকেলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সম্মান নিতে গিয়েছিলেন। তার আগের দিন প্রথা মেনে সকালবেলা প্রত্যেককেই রাইসিনা হিলসে যেতে হয়েছিল। অনুষ্ঠানের ড্রেস রিহার্সাল দিতে। বাংলার জয়দীপ বা দীপিকা কুমারীদের মতো যাঁরা আগে কখনও ওই বিশাল বাড়িতে যাননি, তাঁরা প্রথম দিনই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ঝাড়বাতির রোশনাই আর আড়ম্বর দেখে। মূল অনুষ্ঠানের আগের প্রস্তুতি মঞ্চটাই তাঁরা উপভোগ করেছিলেন চেটেপুটে।
নেহরু স্টেডিয়ামের প্রস্তুতি মঞ্চে কিন্তু আজ নামার আগে উপভোগ দূরে থাক, তীব্র চাপে ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বীরা। ভারত এবং ক্যামেরুন দু’পক্ষই গোপনীয়তার খোলস ছেড়ে বেরোতে চাইছে না। একে অন্যকে মাপার চেষ্টা চলছে। প্রস্তুতি ম্যাচে কি পূর্ণ শক্তি নিয়েই নামবেন? না কি লুকিয়ে রাখবেন সব তাস? এই প্রশ্নে দু’দলের কোচই কেমন যেন ব্যাকফুটে। “সবাইকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলাব ভাবছি। কিন্তু এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। সিদ্ধান্ত নেব ম্যাচের দিন সকালে। সবার সঙ্গে কথা বলে,” জেপি গ্রিনের মাঠে অনুশীলনে নামার আগে বললেন কোভারম্যান্স। ক্যামেরুন কোচ আরও দৃঢ়! “আপনার কি মনে হয় দু’টো ম্যাচ আমরা জিততে চাই না? ক্যামেরুন তো জেতার জন্যই খেলে। কাল মাঠে নামার আগে সবাইকে জিজ্ঞাসা করব কেউ বিশ্রাম চায় কি না,” বলে দিলেন ইমানুয়েল বোসো।
কিন্তু কোচেরা যতই নিজেদের রণকৌশল ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন, তার কিছুটা তো চুঁইয়ে বেরিয়ে আসছেই। বিশেষ করে টিম মিটিং-এর পর। বুধবার নেহরু স্টেডিয়াম থেকে ফাইনালে যাওয়ার ছাড়পত্র নিয়ে ফিরে ডাচ কোচ সুনীল-সুব্রত-গৌরমাঙ্গীদের রাতেই ডেকে বলে দেন, “ক্যামেরুন শক্তিশালী দল। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেক ওপরে। এমন দলের বিরুদ্ধে খেলাটা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। জেতার জন্য সবাই মানসিক ভাবে প্রস্তুত হও। প্রথম ম্যাচটায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টিম গড়ব।”
কোভারম্যান্সের মনোভাব থেকেই পরিষ্কার, ফাইনালটাই সর্বশক্তি দিয়ে জিততে চাইছে ভারত। সে জন্যই সম্ভবত আজ ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলে তিন-চারটে পরিবর্তন হলেও হতে পারে। সুব্রত পাল, গৌরমাঙ্গী সিংহ, মেহতাব হোসেন, ক্লিফোর্ড মিরান্ডার মতো কয়েক জনকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে। এঁদের কয়েক জনের আবার একটা করে হলুদ কার্ড রয়েছে। ফলে কোভারম্যান্স ঝুঁকি নিতে নারাজ। নির্মল ছেত্রী এখনও ফিট নন। ফাইনালেও নামতে পারবেন কি না সন্দেহ। দলে কোনও লেফট ব্যাক নেই বলে রহিম নবির বিশ্রামের সম্ভাবনা কম। তবে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসাবে সুনীল ছেত্রীকে রাখা হবে বলে রাত পর্যন্ত টিম সূত্রের খবর। দলের অধিনায়ককে শুরু থেকেই রাখার পিছনে কারণ, ভারতের জাতীয় কোচ দেখে নিতে চান, কোন ট্যাকটিক্সে ক্যামেরুন ডিফেন্ডাররা আটকান সুনীলকে। সুনীল-রবিন সিংহ জুটি নামাতে পারে ভারত। রবিন আবার এ দিন বলে দিয়েছেন, “মাঠে ১১ বনাম ১১ খেলা হবে। কেউ এগিয়ে নেই।” ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে এই মনোভাব না হলে জেতা কঠিন জানেন ডাচ-কোচ। আজ শুরু থেকেই নামার সম্ভাবনা রয়েছে জুয়েল রাজা, সঞ্জু প্রধান, মননদীপ সিংহ, শুভাশিস রায় চৌধুরী বা করণজিৎ সিংহর।
শুক্রবারের মাচের সেই অর্থে গুরুত্ব নেই। তা সত্ত্বেও ক্যামেরুন কোচ এ দিন বারবার জিজ্ঞাসা করছিলেন ভারত দ্বিতীয় দল নামাবে কি না? বসো অবশ্য সেন্ট স্টিফেন্স মাঠে যা অনুশীলন করিয়েছেন তাতে মেকন থিওরি, কিংগুই পন্ড, মউন্ডি গুস্তাভের মতো টিমের মেরুদণ্ড যাঁরা, তাঁদের বিশ্রামে রাখবেন।
ভারত এবং ক্যামেরুণ দুটো দলের সঙ্গেই খেলেছে মলদ্বীপ। ফাইনালে উঠতে উঠতেও তারা বিদায় নিয়েছে বোসোর দলের শক্তির কাছে মাথা নুইয়ে। তাদের হাঙ্গেরিয়ান কোচ ইস্তাভন উরবানি অবশ্য দুই দলের যুদ্ধে এগিয়ে রাখছেন ক্যামেরুনকেই। বলে দিলেন, “ভারত শক্তিশালী। ক্যামেরুন তার চেয়েও বেশি শক্তিধর। বিশেষ করে শারীরিক গঠনে।”
দেখা যাক, রবিবার ইস্তাভনের ভবিষ্যৎবাণী মেলে কি না। লড়াইটা কেমন হবে তার আঁচ শুক্রবার পাওয়া যেতে পারে। |