আইসিসি-র বর্ষসেরা টেস্ট দলে ভারতের কেউ নেই খুব অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার কী? গত এক বছরে ভারতের যা পারফরম্যান্স, তাতে এ রকম কিছু তো প্রত্যাশিতই ছিল। শেষ ন’টা টেস্টে আমরা মাত্র একটা জিতেছি। তা-ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে। তার আগের ০-৮ বিপর্যয় নিশ্চয়ই এত তাড়াতাড়ি কেউ ভুলে যাননি। গত এক বছরে ভারতীয় টেস্ট দলের গল্পটা খুব সংক্ষেপে জানতে হলে আইসিসির টিমটা দেখে নিলেই চলে।
বর্ষসেরা টেস্ট দলে সচিন-দ্রাবিড়রা নেই বলে ভারতীয় ক্রিকেটপাগলরা যতই হা-হুতাশ করুন, টিমটা কিন্তু মোটেই খারাপ হয়নি। আমলা, কুক, কালিস, ফিল্যান্ডার, স্টেইন এদের নাম তো প্রত্যাশিতই ছিল। একমাত্র ম্যাট প্রায়রের নামটা নিয়ে একটু খুঁতখুঁত করার জায়গা থাকে। প্রায়রের জায়গায় ধোনি বা বাউচারকে ভেবে দেখাই যেত।
যা-ই হোক, আইসিসি টিম নিয়ে আলোচনার চেয়েও এখন বেশি জরুরি হল বৃহত্তর ছবিটা নিয়ে ভাবা। অবশ্যই ভারতের টেস্ট ভবিষ্যতের কথা বলছি। গত বছর আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার হয়েছিল গৌতম গম্ভীর। আর আজ প্রথম বারো জনের মধ্যে একটাও ভারতীয় নাম নেই। ব্যাপারটা আমাদের মতো ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে দুঃখের ঠিকই, কিন্তু ক্রিকেটারদের জন্য একটা বাড়তি তাগিদও। এই যে সেরা টেস্ট টিমে ভারতের কেউ নেই, এটাই কোহলি-পূজারা-রায়নাদের তাতাবে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের আরও উন্নত করার জন্য। এরাই তো ভারতের আগামী টিমের নিউক্লিয়াস।
লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়রা নেই, এই পরিস্থিতিতে ভারতের টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। আমি কিন্তু আশাবাদী। গাওস্কর-কপিল দেব অবসর নেওয়ার পরেও ভারতীয় দল নিয়ে দেশ জুড়ে এ রকম আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তারপর তো টিমটা দাঁড়িয়েও গিয়েছিল। আর এখনকার তরুণ প্রজন্ম যথেষ্ট প্রতিভাবান। আর মনে রাখবেন, ভারতের পরের ন’টা টেস্টই ঘরের মাঠে। তাই বিদেশ সফরের আগে তরুণ ক্রিকেটাররা যথেষ্ট টেস্ট অভিজ্ঞতা পাবে। পূজারা তো আছেই। তা ছাড়া অজিঙ্ক রাহানে, মনোজ তিওয়ারি-ও টেস্টের রগড়ানির জন্য তৈরি। বোলিং বিভাগেও উমেশ-ওঝা-অশ্বিনদের পাশাপাশি অশোক দিন্দা, হরমিত সিংহ, বাবা অপরাজিতদের মতো তরুণ প্রতিভা উঠে আসছে। আমার বিশ্বাস, বছর দুয়েকের মধ্যে টেস্ট দলটা আবার তৈরি হয়ে যাবে।
এই তরুণদের ঠিকঠাক ট্রেনিং দরকার। একই সঙ্গে সিনিয়রদেরও সঠিক ভাবে সামলাতে হবে। বিদেশে শুধু একটা-দুটো টেস্ট নয়, সিরিজ জিততে হবে। গোটা ব্যাপারটাই কিন্তু আমাদের হাতে। কাজগুলো ঠিকঠাক ভাবে করতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটে নিশ্চয়ই কর্তৃত্বের জায়গা ফিরে পাবে ভারত।
বারো জনের দল
অ্যালিস্টার কুক (ইংল্যান্ড), হাসিম আমলা (দ.আফ্রিকা), কুমার সঙ্গকারা (শ্রীলঙ্কা),জাক কালিস (দ.আফ্রিকা), মাইকেল ক্লার্ক (অস্ট্রেলিয়া, অধিনায়ক), শিবনারায়ণ চন্দ্রপল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), ম্যাট প্রায়র (ইংল্যান্ড, উইকেটকিপার), স্টুয়ার্ট ব্রড (ইংল্যান্ড), সঈদ আজমল (পাকিস্তান), ভার্নন ফিলান্ডার (দ. আফ্রিকা), ডেল স্টেইন (দ.আফ্রিকা), দ্বাদশ ব্যক্তি: এবি ডে’ভিলিয়ার্স (দ.আফ্রিকা)। |