|
|
|
|
জেলা প্রশাসনকেই দুষছে জেলা পরিষদ |
বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পড়ে, ‘সমন্বয়ের অভাবে’র নালিশ বৈঠকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, “প্রশাসনিক সহযোগিতা মিলছে না বলেই বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পড়ে থাকছে। সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।” সভাধিপতির কথায়, “গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের এড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে। অনেক জায়গায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে আলোচনাই করছেন না বিডিও। ফলে, কাজ পড়ে থাকছে।”
জেলা সভাধিপতির এই বক্তব্য নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। তবে জেলা প্রশাসনেরই এক আধিকারিক বলেন, “বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আগে পড়ে থাকত না? প্রশাসনিক কর্তাদের দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই।” সব মিলিয়ে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের মধ্যে ‘চাপানউতোর’ শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি। |
|
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
সকাল ১১টা নাগাদ জেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের ‘শহিদ ক্ষুদিরাম পরিকল্পনা ভবনে’র মিটিং হলে ওই বৈঠক শুরু হয়। জেলার ২৯ জন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মধ্যে ২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অরুণ মুখোপাধ্যায় সহ কর্মাধ্যক্ষরাও। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ একে ‘রিভিউ মিটিং’ বলে দাবি করেছেন। কোন কোন প্রকল্পে টাকা পড়ে রয়েছে, ঠিক কী কারণে সময়ের মধ্যে প্রকল্প রূপায়িত করা যাচ্ছে না, এই সব খতিয়ে দেখতেই এই বৈঠক। বৈঠকে কয়েকজন সিপিএম সভাপতি অভিযোগ করেন, তৃণমূলের লোকজন প্রধানদের উপর চাপ সৃষ্টি করে ‘অবৈধ’ কাজে বাধ্য করছেন। সব দফতরের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করা গেলে যে এই সময়ের মধ্যে আরও ভাল কাজ হত, তা-ও জানান একাংশ সভাপতি।
বৈঠক শেষে সভাধিপতি বলেন, “কয়েকজন সভাপতি জানালেন, কোথায় কোথায় বিডিওরা আলাদা ভাবে স্থানীয় প্রধানদের নিয়ে মিটিং করছেন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মধ্যে থেকে সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা করছেন না কেন? সমস্যার কথা জেলাশাসককেও জানিয়েছি।” এখন অতিরিক্ত জেলাশাসকের (জেলা পরিষদ) দায়িত্বে রয়েছেন অরিন্দম দত্ত। তিনি জেলা পরিষদে সে ভাবে সময় দিচ্ছেন না- বলেও এদিন অভিযোগ করেন জেলা সভাধিপতি। তাঁর বক্তব্য,“ উনি অনেকগুলো দফতরের দায়িত্বে আছেন। তাই হয়তো সময় দিতে পারছেন না। তবে এ জন্য আমাদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” ইতিমধ্যে জেলার বেশ কিছু এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্লক প্রশাসনের ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে। ফলে, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। দু’পক্ষের সমন্বয়ের অভাবে বেশ কিছু কাজ পড়ে থাকছে বলেও অভিযোগ। গত দেড় বছরে পাঁচ বার জেলায় এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিডিওদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি। তবে বৈঠকে ডাক পাননি জেলা পরিষদের প্রতিনিধিরা। জেলায় ইন্দিরা আবাস যোজনার প্রকল্পে বরাদ্দের মাত্র ২২ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি টাকা পড়েই রয়েছে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে জেলায় প্রায় ২৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। মানুষ কাজ করেও টাকা পাচ্ছেন না। এই প্রকল্পের সঙ্গে জেলা পরিষদের কোনও সম্পর্ক নেই। তবু অনেক জায়গায় মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। বলা হচ্ছে, জেলা পরিষদই না কি টাকা দিতে পারছে না। আমার ঠিকানা প্রকল্পে গত আর্থিক বছরে জেলায় প্রায় দেড় হাজার বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে স্রেফ প্রাপকদের নামের তালিকা জমা দিতে না পারার জন্য প্রকল্পের কাজ সময়ের মধ্যে করা যায়নি বলে জানিয়েছে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের এই সব অভিযোগ নিয়ে জেলাশাসক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |
|
|
|
|
|