শিলান্যাসের পরেও বাধা প্রশাসনিক ত্রুটি |
আজও সেতু পায়নি জয়পুর |
নুরুল আবসার • জয়পুর |
সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হাতে নেওয়া হয়েছিল ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে। ওই বছরই ঘটা করে হয়েছিল উদ্বোধন। তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। ২০০৮ সালে হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচন এবং ২০১১ সালে হয়ে গেছে আর একটা বিধানসভা নির্বাচন। ঘাড়ের উপরে এসে গিয়েছে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন। কিন্তু হাওড়ার আমতা ২ ব্লকের কুলিয়াঘাটে মুণ্ডেশ্বরী উপরে সেতু তৈরির পরিকল্পনা যে তিমিরে ছিল রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে।
জেলার ‘দ্বীপ’ এলাকা নামে পরিচিত আমতা ২ ব্লকের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে এর ফলে এখনো দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুটি তৈরি করার কথা জেলা পরিষদের। তারা কী করছে? জানা গিয়েছে তারা ৩ বার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে। দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপনও দিয়েছে ৩ বার। |
|
সেতু না হওয়ায় এ ভাবেই চলছে যাতায়াত। ছবি: সুব্রত জানা। |
সেতু তৈরির জন্য শুধুমাত্র বাসিন্দারাই যে বিভিন্ন মহলে আবেদন-নিবেদন করেছেন তাই নয়, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা মুন্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ দিয়ে ঘেরা। স্থলপথে এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সঙ্গে মূল ভূখন্ডের যোগাযোগ নেই। নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাও নৌকা সবসময় চলে না! পুলিশের বক্তব্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ার কারণে এই এলাকাটি এক সময় সমাজবিরোধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ভাটোরা গ্রামে জয়পুর থানার অধীনে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্তকেন্দ্র তৈরি করতে হয়। ২০১০ সালের শেষে তদন্তকেন্দ্রটি উদ্বোধন করতে এসে জেলা ও রাজ্য পুলিশের কর্তারা জানান, মূল ভূখন্ডের সঙ্গে স্থলপথে যোগাযোগ না থাকলে শুধু একটি তদন্তকেন্দ্র দিয়ে অপরাধমূলক কাজ বন্ধ করা যাবে না।
শুধু আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার সমস্যাই নয়, ভাটোরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেও নির্ভর করেন কয়েক হাজার গ্রামবাসী। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, যাতায়াতের পথ দুর্গম হওয়ায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক আসতে চান না। সম্প্রতি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০ শয্যার নতুন অর্ম্তবিভাগ চালু করা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী না আসার কারণে অর্ম্তবিভাগটি চালু করা যাচ্ছে না। এছাড়া গ্রামের রাস্তাঘাট তৈরির উপকরণ নদীপথে আনার কারণে এই খাতে সরকারের খরচও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। |
ত্রুটির তিনকাহন |
২০০৭ সালে প্রকল্প রিপোর্ট পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠায় জেলা পরিষদ। রিপোর্ট ‘ত্রুটিপূণর্’ বলে খারিজ হয়। সংশোধিত রিপোর্ট অনুমোদন করে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। |
তিন বার বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর একটি ঠিকা সংস্থা যে অর্থ বরাদ্দ করে তার
পরিমাণ নাবার্ডের বরাদ্দকৃত অর্থের তুলনায় অনেক বেশি। |
ফের প্রকল্প রিপোর্ট সংশোধন করে জেলা পরিষদ। যা আপাতত
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অনুমোদনের অপেক্ষায়। |
|
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, ২০০৭ সালে সেতু তৈরির জন্য ৫ কোটি টাকার প্রকল্প করে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রকল্পটি ত্রুটিপূর্ণ এই অভিযোগে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর প্রকল্পটি ফেরত পাঠায়। পরবর্তীকালে ফের ৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প করে পাঠানো হয়। সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর প্রকল্পটিকে পাঠায় নাবার্ডে। নাবার্ড এই প্রকল্পে টাকা দিতে রাজিও হয়। কিন্তু তারপরেও সমস্যা মেটেনি।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, নাবার্ডের অনুমতি পাওয়ার পর তারা ৩ বার দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপনও দেয়। প্রথম ২ বার কোনও ঠিকা সংস্থা আগ্রহ না দেখালেও শেষে একটি ঠিকা সংস্থা দরপত্র দেয়। কিন্তু সেখানে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় তার পরিমাণ নাবার্ডের বরাদ্দকৃত অর্থের তুলনায় অনেক বেশি। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রকল্পটি পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে। ১০ কোটি টাকার এই সংশোধিত প্রকল্পটি আবার পাঠানো হয়েছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর জানিয়েছে, প্রকল্পটি খতিয়ে দেখার কাজ চলছে।” আপাতত এই আশাটুকুই সম্বল ‘দ্বীপ’ এলাকার বাসিন্দাদের। |
|