|
|
|
|
অসমে এক মাস অবরোধ, বনধ বন্ধের নির্দেশ গগৈয়ের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
এক দিকে পরপর বন্ধ, অন্য দিকে সাম্প্রতিক হিংসা। এই দুইয়ের ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়া রাজ্যের ভাবমূর্তি ও অর্থনীতিকে তুলে ধরতে এ বারে কড়া পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করল তরুণ গগৈয়ের সরকার। আজ মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে আগামী এক মাসের জন্য কোনও রকম বন্ধ, অবরোধ বরদাস্ত করবে না তাঁর সরকার। তরুণ গগৈ এ দিন বলেন, “কোন দল কী ভাবল, তাতে কিছু যায় আসে না। মানুষ আমার সঙ্গে আছেন।”
মুখ্যমন্ত্রীর মতোই হিংসার আতঙ্ক কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া অসমবাসীও। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল ১ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুগামী যে বিশেষ ট্রেন চালাবে, তার বেশির ভাগ আসন ইতিমধ্যেই ভরে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “কর্নাটক সরকার ও রাজ্য সরকারের কথায় ভরসা করে কর্মস্থলে ফিরছেন মানুষ। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়।”
বন্ধ সম্পর্কে তরুণ গগৈয়ের এ দিনের ঘোষণা প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জি ডি ত্রিপাঠি জানান, ২০১০ সালে গৌহাটি হাইকোর্টের রায় অনুসারেই সরকার এই ঘোষণা করেছে। কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত? গগৈ জানান, এ বছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে অগস্টের ৩০ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যে ২৩ বার বন্ধ ডাকা হয়েছে! জেলা বন্ধ হয়েছে ৪৮টি। ৬৫ বার পথ অবরোধ হয়েছে। রেলপথে অবরোধ হয়েছে ১৩ বার। মুখ্যমন্ত্রীর আক্ষেপ, “এমনিতেই বেকার সমস্যা, অনুন্নয়নের সমস্যায় জেরবার রাজ্য। তার মধ্যে এমন বন্ধ ডাকার হিড়িক চলতে থাকলে রাজ্যের অর্থনীতি তলানিতে ঠেকবে।”
গত ২৮ অগস্ট, আমসু-র ডাকা বন্ধে ৭ জন সাংবাদিক-সহ বহু মানুষ জখম হন। ঘটনার জেরে আগামী তিন মাস, আমসু-র সব কর্মসূচি বয়কট করেছেন অসমের সাংবাদিকরা। গগৈ ঘটনার সমালোচনা করেও বলেন, “কোনও একটি সংগঠনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমসু, বিজেপি, বজরং দল সবাই এক নৌকার যাত্রী!” গগৈয়ের বক্তব্য, অশুভ শক্তিগুলি এক দিকে রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে চাইছে, অন্য দিকে কর্মনাশা বন্ধ ডেকে অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে চাইছে।
বড়োল্যান্ড স্বায়ত্বশাসিত পরিষদের তরফে আজ সব সার্কল অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, এলাকায় জমির পাট্টা থাকা ও না থাকা পরিবারগুলির তালিকা বানিয়ে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে। ৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে সেই তালিকা নিয়ে আলোচনা হবে। কোকরাঝাড়ে চলতে থাকা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে জেলাশাসক জয়ন্ত নারলিকর জানান, পাট্টা থাকা পরিবারগুলিকেই পুনর্বাসনে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আজকের হিসাব অনুযায়ী, ২১৩টি শিবিরে ২৪,২১৪ জন বড়ো ও ২,১১,১৩৯ জন সংখ্যালঘু এখনও রয়েছেন। তবে প্রশাসনের চিন্তা বাড়াচ্ছেন ধুবুরির কিছু ত্রাণ শিবিরের মানুষ। হাতে জমির দলিল, পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁরা গ্রামে ফিরতে অস্বীকার করছেন। তাঁদের প্রশ্ন, “পুলিশ বা সেনা মাসখানেক পাহারা দেবে। তার পর আমাদের জীবন বাঁচাবে কে?” পুলিশ সূত্রে খবর, ২৫ অগস্টের হামলার পরে আতঙ্কে বেদলাংমারি ও ফকিরাগ্রাম থেকে বহু মানুষ গত কাল রাতে প্রাণভয়ে বিলাসিপাড়ায় চলে এসেছেন।
রাজ্যের অবস্থা যাতে অসমের মতো না হয়, সেই জন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে বাংলাদেশি ও মায়ানমারের অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার কাজ শুরু করলেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ। আজ এক নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার দাবিতে রাজ্যে ১৮ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়। বন্ধের মধ্যেই থৌবালের লিলং ও ইম্ফলের হাট্টা এলাকায় আচমকা অভিযান চালায় পুলিশ। তখনই মোট ২৪ জন বাংলাদেশি ও ১৯ জন মায়ানমারের নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়। তাদের ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রাজ্যের সব থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|