বিদ্যুৎ বিক্রির সব টাকা ঘরে এলে সংস্থা চালাতে কারও কাছে হাত পাততে হত না ডিভিসি-কে। কিন্তু সেই টাকা তো মিলছেই না, উল্টে তাকেই প্রাপ্য হিসেবে দেখিয়ে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এখন লোকসানে পড়ল লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।
সংস্থা সূত্রে খবর, বিগত বছরগুলিতে লাভ করা সত্ত্বেও ২০১০-’১১ অর্থবর্ষের শেষে ১২০ কোটি টাকার বেশি নিট লোকসান করেছে ডি ভি সি। ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে লোকসান আরও বাড়বে বলেই সংস্থা কর্তাদের ধারণা (আর্থিক ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি)।
লাভজনক সংস্থার এই হাল হল কেন?
ডিভিসি-র অভিযোগ, ২০০১ থেকে ঝাড়খণ্ড বিদ্যুৎ পর্ষদের কাছে পাওনা টাকা জমতে-জমতে সুদে-আসলে ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিক্রি করে পর্ষদের কাছে এখন যে ১৪০-১৪৫ কোটির বিল হচ্ছে, তারও অর্ধেকের বেশি টাকা মেটানো হচ্ছে না। ফলে বকেয়া বেড়েই চলেছে। |
অর্থবর্ষ নিট মুনাফা
(কোটি টাকায়) |
২০০৬-০৭ |
১,২৩৮ |
২০০৮-০৯ |
৮৮৬ |
২০১০-১১ |
-১২০ |
সূত্র: ডিভিসি |
|
ডিভিসি-র এক কর্তা বলেন, “ঝাড়খণ্ডের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ পর্ষদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিতে। যা কার্যত অসম্ভব।” এই বকেয়ার জন্য সংস্থা চালাতে ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে ডিভিসি-কে বাজার থেকে চড়া সুদে ১,১০০ কোটি ঋণ নিতে হয় বলে ওই কর্তার দাবি। সঙ্গে রয়েছে কর্মীদের বকেয়া পেনশন ও গ্র্যাচুইটি মেটানোর দায়ও। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচের জল দিতে গিয়েও লোকসান বেড়েছে। সব মিলিয়ে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে গিয়েই সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য এখন ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ।
সংস্থা যে লোকসানে পড়েছে, তা মেনেছেন ডিভিসি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন। তিনি বলেন, “২০১০-’১১ অর্থবর্ষেই স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাবদ ৩৫০ কোটি টাকা সুদ দিয়েছি। ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে তা খানিকটা বাড়তে পারে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রককে আর্থিক অবস্থার কথা জানানো হয়েছে।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, গত বছর ডিভিসি ১,৭২৮ কোটি টাকা ঝাড়খণ্ড বিদ্যুৎ পর্ষদের থেকে উদ্ধার করে দিতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের কাছে আর্জি জানিয়েছিল। বিদ্যুৎ মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গেও কথা বলে। কোনও ভাবে কেন্দ্রীয় তহবিলে ঝাড়খণ্ডের পাওনা থেকে কেটে নিয়ে ওই টাকা উদ্ধার করা যায় কি না, সে বিষয়ে উভয় মন্ত্রকে আলোচনাও হয়। তবে অর্থ মন্ত্রক কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের পরামর্শ নিতে বলেছে। বিষয়টি এখন আইন মন্ত্রকের ঘরেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বলে ডিভিসি কর্তারা জানিয়েছেন।
অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ড রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের চেয়ারম্যান এস এন বর্মা অবশ্য আগেই জানান, বকেয়া বিল বাবদ ডিভিসি ঠিকঠাক হিসেবই দিতে পারেনি। তাঁর মন্তব্য, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ বকেয়া পাওনার দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও নির্দিষ্ট হিসেব পেশ করতে পারেননি। তাই টাকা বকেয়া রয়েছে দাবি করলে ঝাড়খণ্ড বিদ্যুৎ পর্ষদের কিছু করার নেই। |