এ যেন বেঁচে থাকা অবস্থাতেই ‘অঙ্গদান’। কিন্তু লোকসানের বোঝা কমাতে সেই অপ্রিয় সিদ্ধান্তই নিতে হচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়াকে।
মূলত আমেরিকা-কানাডায় পরিষেবা দেওয়ার জন্য ছ’বছর আগে পাঁচটি বিশাল মাপের বোয়িং-৭৭৭ বিমান কিনেছিল এয়ার ইন্ডিয়া। কিন্তু সেগুলি চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ এবং জ্বালানির দাম আকাশ ছুঁয়ে ফেলায় লোকসানের বহর লাফিয়ে বাড়তে থাকে। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, বিমানগুলি বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া গতি নেই। কিন্তু বিক্রি করতে চাইলেই তো হল না, নেবে কে?
দু’-দু’বার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় বিক্রির জন্য। একটি রুশ বিমান-সংস্থা গোড়াতে উৎসাহ দেখালেও পরে জানায়, আট হাজার কোটি টাকা দাম মেটানোর ক্ষমতা তাদের নেই। পিছিয়ে যায় এয়ার কানাডাও। অগত্যা এয়ার-ইন্ডিয়া কতৃর্পক্ষ বলছেন, উপায় একটাই। এই বিমানের ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ’ খুলে অন্য বিমানে ব্যবহার করা। তাতে যদি লোকসানের বহর কিছু কমে! |
এয়ার ইন্ডিয়ার এক শীর্ষ কর্তা আজ জানান, দিল্লি থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো রুটে নন-স্টপ উড়তে পারে বোয়িং-এর এই ৭৭৭ বিমান। কিন্তু আর্থিক মন্দার ধাক্কায় এই রুটে যাত্রী কমতে শুরু করেছে। বিমান কেনার আগে জ্বালানির দাম যা ছিল, এখন সেটি তিন গুণেরও বেশি বেড়ে গিয়েছে। ফলে বিমান পাঁচটি না উড়িয়ে বসিয়ে রাখলেও লোকসানের হাত থেকে রেহাই মেলে। এই কারণেই এগুলি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু কোনও ক্রেতাই মিলছে না। ওই বিমান-কর্তা জানান, সুতরাং বিমানগুলি অন্য ভাবে কাজে লাগানোর কথা ভাবতে হচ্ছে। শুনতে খারাপ লাগলেও এর যন্ত্রাংশ খুলে অন্য বিমানে লাগিয়ে ব্যবহার করা ছাড়া উপায় থাকছে না। তাতে নতুন যন্ত্রাংশ কেনার খরচটুকু বাঁচানো যেতে পারে। ওই কর্তা স্বীকার করেন, “বিমানগুলি কেনার আগে এর ব্যবহার সম্পর্কে ঠিকমতো সমীক্ষাও করা হয়নি।”
আন্তর্জাতিক রুটে লোকসানের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহও। তাঁর কথায়, “প্রায় সব আন্তর্জাতিক রুটেই লোকসান হয় এয়ার ইন্ডিয়ার। গত তিন বছরে এর পরিমাণ প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সব থেকে বেশি লোকসান হচ্ছে আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপেই। এই জন্যই কর্তৃপক্ষ এখন আন্তর্জাতিক রুটগুলির খোলনলচে বদলাতে নেমেছে।” প্রাক্তন বিমানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডির অভিযোগ, “এয়ার ইন্ডিয়ার বেহাল দশার জন্য সরকারই দায়ী।” সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তও সম্প্রতি বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহকে চিঠি লিখে প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি লাভজনক ভাবে বোয়িং-৭৭৭ বিমানগুলি চালানো না যায়, তা হলে সরকার ও এয়ার ইন্ডিয়া সেগুলি কিনল কেন?” |