দুবরাজপুরে ব্যবসায়ী খুন, আটক তিন
হাতে-পায়ে গুলি করলে ছেলেটা বাঁচত
ভোরে ট্রেন ধরতে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন এক ব্যবসায়ী। তাদেরই ছোড়া গুলিতে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ব্যবসায়ীর ভাই। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দুবরাজপুর ব্লক অফিসের কাছাকাছি ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার তদন্তে একে একে পুলিশের কর্তারা দুবরাজপুরে আসেন। পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবস্মিতা দাসের পরে দুপুরে আসেন ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) বাসব তালুকদার।
ডিআইজি বলেন, “তদন্তে যেটুকু তথ্য মিলেছে, তাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকা টাকা ভর্তি অ্যাটাচি ছিনতাই করার জন্য দুষ্কৃতীরা তাঁদের পথ আটকে ছিল। কিন্তু টাকা ভর্তি অ্যাটাচি নিয়ে ধস্তাধস্তির মাঝেই দুষ্কৃতীরা বড় ভাইয়ের মাথায় গুলি করে এবং গুলিতে ছোট ভাইকে জখম করে টাকা নিয়ে পালায় তারা।” ডিইজি আরও বলেন, “ইতিমধ্যেই ওই ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে রাজনগর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ তিন যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তাদের জেরা করা হচ্ছে। আশা করি শীঘ্রই ঘটনার কিনারা হবে।”
পড়ে রয়েছে ব্যবসায়ীর নিথর দেহ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় হার্ডওয়্যারের ব্যবসায়ী দুবরাজপুরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃণালকান্তি ওঝা (৪৫) ওরফে রামু এ দিন ভোরে কলকাতা যাবেন বলে একটি মোটরবাইকে করে দুবরাজপুর স্টেশনে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন মৃণালবাবুর ভাই চম্পক ওঝা এবং দোকানের এক কর্মচারী লাল্টু নায়ক। তাঁদের সঙ্গে ছিল নগদ টাকা ভর্তি অ্যাটাচি। বাইকটি চালাচ্ছিলেন নিহতের ভাই চম্পকবাবু। বাড়ি থেকে দু-তিনশো মিটার দূরের রাস্তায় লক্ষ্মীসায়ের নামে একটি পুকুরের কাছে তিন দুষ্কৃতী এক টুকরো বাঁশ দিয়ে তাঁদের পথ আটকায়। বাইক থেকে সকলে নেমে পড়লে টাকা ভর্তি অ্যাটাচি কেড়ে চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। সহজে টাকা দিতে চাননি মৃণালবাবু। সেই সময় একটি বোমা ফাটায় দুষ্কৃতীরা। ভয় পেয়ে লাল্টু নায়ক নামে দোকানের ওই কর্মী ছুটে পালিয়ে যান। এর পরেই মৃণালবাবুর মাথায় গুলি করে এক দুষ্কৃতী। মারা যাওয়ার আগেই ভাইয়ের দিকে অ্যাটাচি ছুড়ে দিয়েছিলেন দাদা। তখন দুষ্কৃতীরা চম্পকবাবুর উপরে আক্রমণ করে।
এ দিকে, ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক কাটেনি লাল্টু নায়কের। কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “বোমা ফাটার পর আমি ছুটে কিছুটা দূরে পালিয়ে গিয়েছিলাম। একটু পরেই আবার ওখানে যাই। ততক্ষণে রামুদাকে ওরা মেরে ফেলেছে। বুড়োদা (চম্পকদা) পেটে হাত চেপে মটিতে বসে বললেন, সবাইকে ডাক। তখন আমি ছুটে পাড়ার দিকে আসি।”
ঘটনাস্থলে জনতার ভিড়।
খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে আসেন। চম্পকবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পুলিশকে খবর দেন তাঁরা।
চম্পকবাবু বর্তমানে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর পেটে ও শরীরের আরও দু’জায়গায় গুলি লেগেছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্ত্রপ্রচার করে তাঁর শরীর থেকে গুলি বের করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর আবস্থা স্থিতিশীল। তদন্তে নামে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে দু’টি বোমা ও কয়েকটি কার্তুজের ফাঁকা খোল।
এদিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মৃতদেহকে ঘিরে প্রচুর মানুষের ভিড়। দাঁড় করানো বাইকের পাশে পড়ে থাকা মৃণালবাবুর দেহটির উপর তখনও পড়ে বাঁশের টুকরোটি। পায়ের চটি জোড়া একটু দূরে পড়ে রয়েছে। আর মাথার নীচ থেকে রক্ত গড়িয়ে এসে বেশ খানিকটা রাস্তায় জমেছে।
দুই ছেলের এই আবস্থায় শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার। কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না নিহতের স্ত্রী শম্পাদেবী। মা দুলালী ওঝা বললেন, “একেবারে শেষ করে দিল আমার ছেলেটাকে। টাকাটাই তো ওদের চাওয়া ছিল। গুলিটা পায়ে বা হাতে করতে পারত। তা হলে ছেলেটা বেঁচে যেত!”
ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.