মনমোহন মধ্যমণি, ওবামাকে বার্তা দিল তেহরান
পস্থিত ছিলেন ১২০টি দেশের রাষ্ট্রনায়ক। তা সত্ত্বেও আজ নির্জোট দেশগুলির (ন্যাম) মূল বক্তৃতা মঞ্চে উপস্থিত থাকলেন মাত্র ছ’জন। আর এই বিশিষ্ট ‘সংখ্যালঘু’দের মধ্যে গোটা দিনই মধ্যমণি হয়ে রইলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
ছবির মত সুন্দর শহর তেহরান। দিগন্তে পাহাড়ের সিল্যুয়েট, উপরন্তু গালিচার জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি। জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি, তাই তুলনামূলক ভাবে যথেষ্ট ‘নির্জন’ও। তা সত্ত্বেও শহরের ‘বুকে’ নয়, বজ্রআঁটুনি নিরাপত্তায় কনভেনশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে মাটির নীচে! সমস্ত রাষ্ট্রনায়ককেই তাই ‘পাতালপ্রবেশ’ করতে হচ্ছে! সেই পাতালে সম্মেলন কক্ষের গ্যালারিতে বসে পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি-সহ প্রায় সমস্ত দেশের নেতারা। জারদারি পুত্র বিলাবলকে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন সব কিছু। কিন্তু মনমোহন উপরের মঞ্চে স্থায়ী ভাবে আসীন। তাঁর সঙ্গী পাঁচ জন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের অধ্যক্ষ, মিশর এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং ইরানের ধর্মগুরু আয়াতুল্লা খামেনেই।
স্বভাবতই গুঞ্জন, কেন এই ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেওয়া হল ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে? ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের সরকারি যুক্তি, ১৯৬১ সালে ‘ন্যাম’ তৈরিতে প্রধান ভূমিকা ছিল ভারত এবং যুগোস্লাভিয়ার (যথাক্রমে জওহরলাল নেহরু এবং মার্শাল টিটোর)। তাই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবেই এই সম্মান। যুগোশ্লোভিয়া ভেঙে দু’টুকরো হয়ে তৈরি হয়েছে সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো। তাই তাকে এই সম্মান দেওয়ার সুযোগ নেই।
তবে ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, তেহরানের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে নির্দিষ্ট কৌশল। এমনিতেই এ বার ‘ন্যাম’-এর মঞ্চকে মার্কিন বিরোধিতার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আহমেদিনেজাদ। এই বিশাল আন্তর্জাতিক সমাবেশে ইরানকে তুলে ধরা হচ্ছে ‘মার্কিন সন্ত্রাসে’ পীড়িত দেশ হিসেবে। দু’বছর আগে আক্রান্ত ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের গাড়ির ধ্বংসাবশেষ (তেহরানের দাবি, সেই আক্রমণের পিছনে ছিল ইজরায়েল ও আমেরিকা) পর্যন্ত কনভেনশন সেন্টারের কাছে প্রদর্শনীর ঢঙে রাখা হয়েছে। বহু কূটনীতিকই সেখানে ভিড় করছেন, ছবিও তোলা হচ্ছে।
এই অবস্থায় আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক তথা পরমাণু চুক্তিতে আবদ্ধ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পাশে ‘দেখানোটা’ তেহরানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার কূটনীতিতে যে ইরান নিঃসঙ্গ নয়, তা প্রমাণ করতে মরিয়া আহমেদিনেজাদ। তাই নির্জোট সম্মেলন শুরুর ঠিক আগে চাবাহার বন্দরে ভারতকে লগ্নির আমন্ত্রণও জানিয়েছিল তেহরান।
তবু মৈত্রীর মঞ্চে সুর কেটে গেল মিশরের ‘কথায়’। সৌজন্যে, সিরিয়া পরিস্থিতি। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর এই প্রথম মিশরের কোনও প্রেসিডেন্ট এসেছেন ইরানে। ১৯৭৯-এ ইজরায়েলের সঙ্গে মিশর ক্যাম্প ডেভিড-চুক্তি সই করার পর থেকে এত দিন ইরানের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ ছিল। এ বার গোল বাধল মিশরের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসির বক্তৃতায়। তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের উচিত সিরিয়ার রক্তপিপাসু শাসকের বিরুদ্ধে সে দেশের সাধারণ মানুষের সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।” বলেন, বাশার আল আসাদের সরকার সিরিয়া-শাসনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।
এর পরেই সভাকক্ষ ছেড়ে চলে যান সিরিয়ার প্রতিনিধিরা। জানিয়ে দেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ চান না তাঁরা। আল জাজিরা চ্যানেলের সম্প্রচারে সেই দৃশ্য ছড়িয়ে যায় বিশ্বময়। অস্বস্তিতে পড়ে যায় ইরান। গত কালই এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, বিদ্রোহীদের পুরোপুরি কাবু করা সময়ের অপেক্ষা। সিরিয়ার সেনাকে ‘লুকিয়ে সাহায্য করা’ নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েই মিশরের বিষোদ্গার ইরান কী ভাবে নেয়, উঠছে সেই প্রশ্নও।
গোড়াতেই বলতে ওঠা মনমোহন সিংহ অবশ্য বিতর্কে যেতে চাননি। বরং সিরিয়া প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য যথেষ্ট অভিবাদন কুড়িয়েছে। ভারতের সনাতন অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেছেন, যে কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সে দেশের সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে হবে। তাই সিরিয়ায় অন্য কোনও দেশের হস্তক্ষেপ চায় না দিল্লি। মনমোহনের মতে, এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে আটক বিশ্বকে নতুন দিশা দেখাতে পারে নির্জোট দেশগুলিই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.