ক্রিকেট কূটনীতির পরে উপমহাদেশে এ বার জনপ্রিয় হচ্ছে ধর্ম-কূটনীতি।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি নিজে ছেলে বিলাবলকে নিয়ে ভারতে এসেছিলেন অজমের শরিফে যাবেন বলে। এ বার তিনি নভেম্বরে গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে পাকিস্তানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। বলেন, সেই উৎসবের সময় মনমোহন পাকিস্তানে গেলে দু’দেশের মধ্যে যৌথ ধর্মীয় সদ্ভাবনার বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। মনমোহনের জন্মভিটে ও পার পঞ্জাবে। নভেম্বরে সফরের সুযোগে তিনি সেখানেও ঘুরে আসতে পারবেন।
এই সফরে যেতে মনমোহনের আপত্তি নেই। এ দিন তেহরানে নির্জোট সম্মেলনের ফাঁকে দু’জনের যে বৈঠক হয়, সেখানে আমন্ত্রণের প্রত্যত্তুরে জারদারিকে প্রধানমন্ত্রী জানান, নভেম্বরে তিনি পাকিস্তান যেতে আগ্রহী। ইসলামাবাদের সঙ্গে ‘সমস্ত বিষয়ে’ আলোচনা করতেও তিনি একই ভাবে উৎসাহী। কিন্তু তাঁর সফরের আগে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস সামলাতে হাতেকলমে কিছু করে দেখাতে হবে পাকিস্তানকে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, পাক নেতৃত্ব তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, এ ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ করার চেষ্টা করা হবে। পরে বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই জানান, ভারত চাইছে, মুম্বই সন্ত্রাস নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিক পাকিস্তান। এর থেকে বড় আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ আর কিছুই হতে পারে না। |
তেহরানে পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
রয়েছেন পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার এবং জারদারি-পুত্র বিলাবলও। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই |
সার্বিক ভাবে আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই বার্তাই জারদারিকে দিতে চেয়েছেন যে, তিন বছর আগে শর্ম অল শেখ-এ এই নির্জোট সম্মেলনেই দ্বিপাক্ষিক গতিমুখ তৈরি করা হয়েছিল। সেই পথ থেকে এখনও পর্যন্ত সরেনি নয়াদিল্লি। সন্ত্রাস দমন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বাড়ানোটাও লক্ষ্য মনমোহন সিংহ সরকারের।
কিন্তু মনমোহন এ-ও বলেছেন, মুম্বই সন্ত্রাস সংক্রান্ত যে সমস্ত নথি ও প্রমাণ দেওয়া হয়েছে ইসলামাবাদকে, তার কোনও ইতিবাচক উত্তর এখনও আসেনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এখনও নেয়নি পাক আদালত। বরং দিল্লি যে সব প্রমাণ দিচ্ছে, তাকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। বিচারকরা বদলে যাচ্ছেন, কিন্তু মামলা শেষ হচ্ছে না।
গত কালই ২৬/১১-র একমাত্র জীবিত জঙ্গি আজমল কাসভের ফাঁসির রায় বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘এই সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র যে পাকিস্তানের মাটিতেই হয়েছিল, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত বললেও কম বলা হয়।’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসমে সাম্প্রতিক হাঙ্গামায় ‘ইন্ধন’ জোগানোর অভিযোগও রয়েছে। এমনকী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে অসমে হাঙ্গামার গুজব ছড়িয়ে গোটা উত্তর পুর্বাঞ্চলের মানুষকে আতঙ্কিত করেছে পাকিস্তানই। এমন পরিস্থিতিতে আজ দু’দেশ বৈঠকে বসে। বস্তুত, বৈঠকে অসমের প্রসঙ্গও উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা দু’দেশের স্বাভাবিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির পক্ষে প্রতিবন্ধক হতে পারে।
মনমোহন সিংহ মনে করেন, আলোচনার রাস্তা খোলা রাখা উচিত। তাই ২০০৮-এর নভেম্বরে নভেম্বরে মুম্বই হামলার পরে দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই সেই দরজা আবার খোলে। গত বছর বিন লাদেন হত্যার পর পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কেও যথেষ্ট পরিবর্তন আসে। আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলি সম্মিলিত ভাবে বারবার জানিয়েছে, এই ঘটনার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদীদের মদত এবং আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা চোখের সামনে চলে এসেছে।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইসালামাবাদের উপরে চাপ বাড়াতে চাইছে দিল্লি। যাতে জারদারিরা ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস দমনে এক কদম হলেও পা বাড়ান। সেই পথ ধরেই আজকের বৈঠকে একই সঙ্গে নরম এবং গরম কূটনীতির আশ্রয় নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। |