বিদ্যুতের বিল দেওয়া নিয়ে বন দফতর ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের মধ্যে চাপানউতোর চলছে। সে জন্য প্রায় ৮ বছর ধরে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাস সংলগ্ন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একাধিক পথবাতি অকেজো হয়ে রয়েছে। প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর ঘন অন্ধকারের জেরে পক্ষিনিবাস সংলগ্ন জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যার পর ওই এলাকাটি দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা পক্ষিনিবাসের গেট থেকে কুলিক সেতু পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার জাতীয় সড়কের ধারের বিভিন্ন এলাকায় সাট্টা, জুয়া ও মদের আসর বসাচ্ছে বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও মাঝেমধ্যেই ওই এলাকায় পথচারীদের কাছ থেকে সাইকেল, মোবাইল ও টাকা ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে বলেও বাসিন্দাদের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বার বার সমস্যার কথা বন দফতর, জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অথচ পথবাতিগুলি জ্বালানোর ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সেই কারণে দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় সম্প্রতি দুষ্কৃতীরা বেশির ভাগ পথবাতির লোহার খুঁটি থেকে লাইট, হোল্ডার ও কাঁচযুক্ত কেস খুলে নিয়ে পালিয়েছে। অবিলম্বে ওই এলাকায় পথবাতি জ্বালানোর ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাসিন্দারা নিরাপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় সড়ক অবরোধ করার হুমকি দিয়েছেন। উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের বিদ্যুত কর্মাধ্যক্ষ পূর্ণেন্দু দে বলেন, “বিদ্যুতের বিল দেওয়া নিয়ে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ও বন দফতরের কর্তাদের বিরোধের জেরেই পথবাতিগুলি গুলি দীর্ঘদিন অকেজো থাকার পর বিকল হয়ে গিয়েছে। আমরা সমস্যার সমাধানে বন দফতর ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সমস্যার সমাধান হলে ভালো কথা। তা না হলে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষই ওই এলাকায় একাধিক সৌরচালিত পথবাতি লাগানোর ব্যবস্থা করবেন।” স্থানীয় বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ দূর্গেশ ঘোষ জানান, একটা ছোট্ট পঞ্চায়েতের পক্ষে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা বিদ্যুতের বিল মেটানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “এলাকাটি আমাদের পঞ্চাতের অধীনে। তবে পক্ষিনিবাস সংলগ্ন অসংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় বন দফতরেরই পথবাতির বিল দেওয়া উচিত। তবে সত্যিই ওই পথবাতিগুলির বিল পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দেওয়ার কথা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” বন দফতরের এক কর্তা জানান, বিষয়টি ডিএফও অপূর্ব সেন দেখছেন। তিনি ছুটিতে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৯ বছর আগে জেলা পরিষদ, বন দফতর ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচে পক্ষিনিবাসের মূল গেট সংলগ্ন এলাকা থেকে কুলিক সেতুর মুখ পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ধারে ১০ টি অত্যাধুনিক সোডিয়াম ভেপার পথবাতি লাগানো হয়। কিন্তু কয়েকমাস ওই লাইট জ্বলার পর কোন পক্ষ বিদ্যুতের বিলের টাকা দেবে তা নিয়ে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বন দফতরের চাপানউতোর শুরু হয়। কোন পক্ষই বিলের টাকা দিতে রাজি না হওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। এদিকে দীর্ঘ কয়েকমাস বিল বকেয়া থাকায় এরপর বিদ্যুত বন্টন কোম্পানী পথবাতির বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপি নেতা দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, “বাসিন্দারা গত কয়েক বছর ধরে বার বার সমস্যার কথা প্রশাসনিক কর্তাদের জানিয়েছেন। পথবাতিগুলি জ্বালানোর ব্যপারে কেউ উদ্যোগী হননি। অবিলম্বে সমস্যার সমাধান না হলে তাই নিরাপত্তার স্বার্থে বাসিন্দারা অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় সড়ক অবরোধ করতে বাধ্য হবেন।” |