মশা মারতে এ বার ঢাক বাজাবে বিধাননগর পুরসভা!
মশার সঙ্গে ঢাকের সম্পর্ক কী? ঢাকের শব্দে কি মশা পালায়? যেমন পালায় মশা মারার ধূপ কিংবা তেলে?
না, ঢাকের বাদ্যির সঙ্গে মশার কোনও সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে মানুষের।
কী ভাবে? বিধাননগর পুরসভা সূত্রে খবর, এত দিন অটোয় চেপে মাইকে করে প্রচার চলছিল সল্টলেক জুড়ে। কিন্তু তাতে মানুষকে টানা যাচ্ছে না। তাই সচেতনতার প্রচারে বদল আনতে বিধাননগর পুরসভা রাস্তায় নামাচ্ছে ঢাকিদের। পুজোর আর বেশি দেরি নেই। এই সময়ে সল্টলেকবাসী যাতে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে না পড়েন, তাই ঢাককেই প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
এক পুরকর্তা জানাচ্ছেন, ঢাকে প্রচার করার স্লোগান স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে চেয়ে নেওয়া হবে। আগে যেমন ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে জমিদারের নির্দেশ প্রচার করা হত, সেই পুরনো ব্যবস্থাকেই ফিরিয়ে আনা হবে এখনকার সল্টলেকে। সোমবার বিধাননগরের পুর-ভবনে ডেঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের সঙ্গে পুর-প্রশাসনের বৈঠক হয়। সেখানেও প্রচারের উপরে জোর দেওয়া হয়। ঢাক পিটিয়ে কী কী প্রচার করা হবে, তার একটা প্রাথমিক রূপরেখাও তৈরি হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। |
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সল্টলেকে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ফুলদানিতে ফুল থাকে। ফুলদানির জল নিয়মিত না বদলালে সেখানে ডেঙ্গির মশা ডিম পাড়ে। উপনগরীর প্রায় প্রতিটি বাড়ির বারান্দাতেই ফুলের টব রয়েছে। টবের জল নিয়মিত না ফেললে সেখানেও ডিম পাড়তে পারে মশা।
সল্টলেকের আবাসনগুলিতে এবং সংযোজিত এলাকায় মানুষের প্রবণতা রয়েছে ঘরে জল মজুত রাখার। সেই জল নিয়মিত ফেলা না হলে সেগুলিও মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। অধিকাংশ সল্টলেকবাসীই শোয়ার সময়ে মশারি টাঙান না। ঢাকের বোলে ওই বিষয়গুলি সম্পর্কেই মানুষকে অবহিত করার চেষ্টা হবে। ঢাক বাজিয়ে লোক জড়ো করে দেখানো হবে পথনাটিকা, ম্যাজিক শো। তার জন্য ছ’টি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গি এবং অন্য জ্বরে আক্রান্তেরা সবাই যাতে চিকিৎসা পান, তার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রসূতি এবং শিশুদের জন্য বিধাননগর পুরসভার মাতৃসদনে খোলা হচ্ছে ‘ফিভার সেন্টার’। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ দল সেখানে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেবে। রক্তপরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও থাকবে।
পাশাপাশি, প্রতিটি ব্লকে ঘুরবে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। দু’জন করে মোট পঞ্চাশটি দল গড়া হবে। ওই অ্যাকশন ফোর্স বিভিন্ন বসতি এলাকা, সরকারি আবাসন ও অফিসপাড়া পরিদর্শন করবে। জমা জল, ঝোপ-জঙ্গল ও জমে থাকা আবর্জনার অবস্থা খতিয়ে দেখবে এই দল। পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসার মলয় মুখোপাধ্যায় জানান, যেখানে জমা জল সরানো কিংবা সাফাইয়ের কাজ হয়নি, সেখানে প্রথমে নোটিস দেওয়া হবে। পরে পুর-আইন মোতাবেক জরিমানা ধার্য করা হবে। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশের ভিত্তিতে ডেঙ্গি প্রতিরোধে আমরা সর্বতো ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি।” |