মেয়রের ঘোষণার চার দিন পার। হাল ফেরেনি সাফাই ও নিকাশি ব্যবস্থার। এমনই অভিযোগ আসানসোল পুর এলাকার বাসিন্দাদের। অবিলম্বে নিকাশি ও জঞ্জাল সাফাইয়ের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত আসানসোলে সাত জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তাঁরা সকলেই পুর এলাকায় বাসিন্দা। যদিও মেয়র দাবি করেছেন, নিকাশি ও জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ নিয়মিতই চলছে।
আসানসোলে ডেঙ্গি আক্রান্তদের সকলেই পুরসভা এলাকার বাসিন্দা। পুরনো মহকুমা হাসপাতাল, ময়দাকল, দিলদারনগর, দামড়া কোলিয়ারি, উত্তর ধাদকা, আপকার গার্ডেন ও মহীশিলা তিন নম্বর এলাকার বাসিন্দা তাঁরা। রোগীর সন্ধান মেলার পরেই নড়েচড়ে বসে মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন। পুরসভা-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকও হয়। প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয়, এলাকায় নিয়মিত নিকাশি ব্যবস্থা করতে হবে। জঞ্জাল সাফাই করতে হবে। মশা মারার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে এলাকার নাগরিকদেরও সচেতন করতে হবে। বৈঠক শেষে আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, শহরের নিকশি ব্যবস্থা ও জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজে কোনও ত্রুটি থাকবে না। বিভিন্ন অঞ্চলে মশার কীটনাশকও প্রয়োগ হবে। তিনি অভয় দেন, ডেঙ্গির সন্ধান মেলায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। |
কিন্তু চার দিন পেরিয়ে গেলেও এলাকার সাফাই ও নিকাশির হাল ফেরেনি। এমনকী যে সব এলাকায় ডেঙ্গি প্রকোপ বেশি, সেখানেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ। রবিবার সকালে দিলদার নগরে গিয়ে দেখা গিয়েছে, একাধিক বাড়ির মধ্যেই জঞ্জালের স্তূপ। বহু কাল সাফাই হয়নি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চারদিক জলমগ্ন। পোকামাকড়, মশা, মাছির উপদ্রবও বেশি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুফিউদ্দিনের কথায়, “শেষ কবে সাফাই হয়েছিল মনে পড়ছে না।” অপর এক বাসিন্দা মহম্মদ রাজু বলেন, “বর্ষা যত দিন চলবে, তত দিন এই জমা জল ডিঙিয়েই যাতায়াত করতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, “পুরসভাকে বলে কোনও লাভ হয় না। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই থাকতে বাধ্য হই।” প্রায় একই ছবি দেখা গিয়েছে মহীশিলা তিন নম্বর এলাকায়। নর্দমার নোংরা জল উপচে পড়ছে রাস্তায়। অনেক জায়গায় বোঝার উপায় নেই নর্দমা আছে কি না। স্থানীয় বাসিন্দা বাপ্পা দে-র কথায়, “নর্দমার জল পেরিয়েই আমাদের ঘরে ঢুকতে হয়।” অপর এক বাসিন্দা কার্ত্তিক রায়ের অভিযোগ, “বুনো ঝোপঝাড়ে ঢেকে গিয়েছে এলাকা। সাফাই হচ্ছে না।” বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, এলাকায় নিয়মিত মশার কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে না। |
ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে ডামড়া এলাকায়। সেখানেও পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। স্থানীয় বসিন্দা রাজীব ঘোষের কথায়, “সাফাই ও নিকাশি নিয়মিত হলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে মুক্তি মিলত।” আসানসোলের আপকার গার্ডেন এলকার বাসিন্দারা জানান, মাস তিনেক আগেও এলাকায় মশা মারার কামান দিয়ে কীটনাশক যুক্ত ধোঁয়া ছড়ানো হত। অভিযোগ, এখন আর সে সব দেখা যায় না।
ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর দেখা মিললেও পুরসভা এলাকায় সাফাই ও নিকাশি হচ্ছে না বলে অভিযোগ প্রাক্তন মেয়র তথা বিরোধী নেতা সিপিএমের তাপস রায়েরও। তাপসবাবুর অভিযোগ, “আমরা সাফাই ও নিকাশির বিষয়ে অনেক বার মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কোনও লাভ হয়নি।” তিনি দাবি করেন, ডেঙ্গির প্রতিষেধক হিসেবে আসানসোলের বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য পুর কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আগামী বোর্ড সভায় মেয়রের কাছে তাঁরা জানতে চাইবেন। সন্তোষজনক উত্তর না মিললে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন বলে হুমকিও দেন তাপসবাবু।
আসানসোল পুরসভার সাফাই ও নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ ছিলেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের বিনয় সরকার। প্রায় দেড় বছর আগে তাঁর মৃত্যু হলে দফতরটির দায়িত্ব নেন মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের অভিযোগ, এর পর থেকেই শহরের সাফাই ও নিকাশি বেহাল হতে শুরু করে। যদিও মেয়র এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা দাবি, বিরোধীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। শহরে সাফাই ও নিকাশির অবস্থা বেশ ভালই।
|