ঠিকাদারদের কাছে দু’বার দর পত্র চাওয়া হলেও প্রতিবার মাত্র একজন অংশগ্রহণ করেছেন। ফলে কাজ হয়নি। একাধিক ঠিকাদার ওই কাজের দরপত্র জমা না-দেওয়ায় এবার বীরপাড়া থেকে লঙ্কাপাড়া পর্যন্ত বেহাল হয়ে পড়া রাস্তা সংস্কারের কাজ কী ভাবে হবে সেই প্রশ্নে ফাঁপড়ে পড়েছে পূর্ত দফতর। ওই বিষয়ে চূনান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিষয়টি মহাকরণে পাঠানো হয়েছে। তাতে জানতে চাওয়া হয়েছে, একমাত্র আবেদনকারীকে কাজের বরাদ দেওয়া হবে না নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে? পূর্ত দফতরের জলপাইগুড়ির সুপারিনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সুদেশ নন্দী বলেন, “ঠিকাদারদের কাছ থেকে দুবার দর পত্র চাওয়া হয়। প্রতিবার এক জন ঠিকাদারই দরপত্র জমা দিয়েছেন। তাই বিষয়টি রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।” জলপাইগুড়ি থেকে প্রায় এক মাস আগে মহাকরণে ফাইলটি পাঠানো হয়েছে। কোন সিদ্ধান্তের কথা জলপাইগুড়ি পূর্ত দফতরে এখনও এসে পৌঁছয়নি। এদিকে, দিনের পর দিন রাস্তার হাল আরও বেহাল হয়ে পড়ায় মানুষের ভোগান্তি ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে। ৭ টি চা বাগানের রেশন ও উৎপাদিত চা নিলাম কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া থেকে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের এলাকা জুড়ে ক্ষোভের পারদ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় এক দশক আগে রাস্তাটি পূর্ণাঙ্গ রূপে সংস্কার হয়। এর পরে রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়লে গর্ত বুজিয়ে পিচের প্রলেপ দেওয়ার কাজ হচ্ছিল। বছর খানেক আগে সে ধরণের কাজ হলেও লঙ্কাপাড়া রোডের ১৮ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে খানা খন্দে ভরে যায়। বাসিন্দাদের ক্ষোভ বাড়তে শুরুই করায় বেহাল সড়ক সংস্কারের জন্য রুরাল ইনফ্রা স্ট্যাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাণ্ড সাড়ে ৮ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা পূর্ত দফতরকে বরাদ্দ করে। সে জন্য ৭ এবং ৩১ জুলাই পর পর দু দফায় দরপত্র চাওয়া হয়। ঘটনাচক্রে, দুবারই একজন ঠিকাদার ওই কাজ করতে আগ্রহ দেখান। দুবার টেণ্ডার হবার পর যে হেতু একাধিক ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নেন নি সে কারণে বিষয়টি এখন কলকাতার মুখ্য বাস্তুকার ও সচিবের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন স্থানীয় পূর্ত কর্তারা। জলপাইগুড়ি পূর্ত দফতরের সুপারেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “ই টেণ্ডার চালু হবার পর ঠিকাদাররা সে ভাবে উসাহ দেখাচ্ছেন না।” ঠিকাদার সংগঠন সূত্রের খবর, রাস্তা সংস্কারের জন্য দরপত্রে যত টাকা উল্লেখ ছিল, তা দিয়ে রাস্তা সারাই হলেও বেশি দিন তা টিঁকবে না। প্রতিদিন ডলোমাইট বোঝাই প্রায় ৪০০ গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে। তার উপর পাশে পাহাড়ি নদী রয়েছে। তিন বছরের মধ্যে রাস্তা ভাঙলে ওই ঠিকাদারকে নিজের টাকা খরচ করে তা মেরামতি করতে হবে। তা ছাড়া এলাকার কিছু সমাজ বিরোধী ঠিকাদারদের কাছে ভয় দেখিয়ে তোলা আদায় করছে বলে সংগঠনের সদস্যদের একাংশের অভিযোগ। জলপাইগুড়ি কনট্রাকটার্স কোঅপারেটিভ ফোরাম-এর আহ্বায়ক প্রসূন বাগচী বলেন, “হাত ভাঙলে প্লাস্টারের জায়গায় যদি ব্যান্ডেজ করলে যা হবে, ওই রাস্তা কম টাকায় সারালে তেমনই হবে। ক্ষতির ভয়ে একজন বাদে কেউ টেণ্ডার জমা করেননি। নতুন করে নকশা করে বরাদ্দ না বাড়ালে কেউ আগ্রহ দেখাবে না।” সুপারেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার অবশ্য এ দাবি মানতে চাননি। তাঁর কথায়, “যথেষ্ট ভাল ভাবে নকশা করা হয়েছে তাতে দীর্ঘদিন রাস্তা ভাল থাকবে।” এদিকে, রাস্তার কাজ শুরু হতে দেরি হওয়ায় বীরপাড়া জুড়ে ক্ষোভের পারদ ক্রমশ চড়ছে। দু দফায় পথ অবরোধ করেছেন। বাসিন্দারা দ্রুত কাজ শুরু না হলে বড় ধরণের আন্দোলনে নামার ফের হুমকি দিয়েছেন তারা। মাদারিহাটের আর এস পি বিধায়ক কুমারী কুজুর বলেন, “কাজ শুরু হবার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সমস্যা হবে। মানুষ প্রতিদিন তাদের দুর্ভোগের কথা বলছেন। খোঁজ নিচ্ছি।” |