পুকুর কাটা হোক বা প্রত্যন্ত গ্রামে কাঁচা রাস্তা তৈরির কাজ। অনুমোদন নিতে হবে ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই। ওয়েবসাইটে কাজের মঞ্জুরির তথ্য না দিলে সেই কাজে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হবে না। জাতীয় কর্মসংস্থান প্রকল্প তথা ১০০ দিনের কাজে এমনই নিয়ম চালু করেছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী একশো দিনের কাজে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দিতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওকে। গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির তরফে কাজের তালিকা তৈরি করা হলেও সেই তালিকা বা প্রকল্প বিডিও অনুমোদন না করলে জেলা থেকে অর্থ বরাদ্দ হয় না। এ ক্ষেত্রে জলপাইগুড়ি জেলার নতুন নিয়মে বিডিওকে কোনও কাজের অনুমোদন দিতে হলে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই দিতে হবে।
গত জুলাই মাস থেকে জারি হওয়া নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি একশো দিনের প্রকল্পে আর চিরাচরিত সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সরকারি নথিতে আধিকারিকের সই করে বা সিল লাগিয়ে প্রকল্পের কাজের অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়। নতুন নিয়মে, প্রকল্প কবে শুরু হবে, কত টাকার প্রকল্প, কত দিনের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে হবে সব তথ্য থাকবে ওয়েবসাইটে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে সেই প্রকল্পকে চিহ্নিত করে নিজের থেকেই সংশ্লিষ্ট বিডিওকে চিঠি পাঠিয়ে প্রকল্প শেষ হতে কেন দেরি হচ্ছে তার উত্তর জানতে চাওয়া হবে। এমনই প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে ওয়েবসাইটটি।
কেন এই নিয়ম তৈরি করা হল?
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনতেই এই নিয়ম পরিবর্তন। জেলার ১৩টি ব্লক মিলিয়ে প্রতি বছর এই প্রকল্পে গড়পরতা সাত থেকে আট হাজার কাজ হয়। প্রশাসনের ব্যাখ্যায় কাজের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সব কাজে সমান ভাবে নজরদারি করা সম্ভব হতো না। সে কারণে একদিকে যেমন কোনও কাজ শুরু হওয়ার পরে সেটি শেষ হল কিনা তার বিস্তারিত তথ্য যেমন সঠিক সময়ে জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছতো না। তেমনিই আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হলেও আদৌও সেই কাজ শুরু হয়েছে কিনা তার খবরও জেলা থেকে রাখা সম্ভব ছিল না বলে প্রশাসনের একাংশ আধিকারিক জানিয়েছেন।
অভিযোগ, যথাযথ নজরদারির অভাবে বিগত বছরগুলিতে একাধিক ‘ভুয়ো’ কাজ তালিকায় ঢুকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। যে কাজে মজুরি প্রদান করা হলেও পরবর্তীতে কাজটি শুরুই হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। জলপাইগুড়ির জেলা শাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন,“একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বেশি করে স্বচ্ছতা আনতে যাওয়া যেমন নতুন নিয়ন চালু করার একটি উদ্দেশ্য পাশাপাশি প্রকল্পের কাজকে সঠিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এর প্রধান কারণ।”
নতুন নিয়মে কি ভাবে কাজ হচ্ছে? একশো দিনের কাজে জাতীয় এবং রাজ্য স্তরে পৃথক ওয়েবসাইট রয়েছে। তেমনিই এই প্রকল্পে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনও নিজেদের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। গত জুলাই মাস থেকে জেলার প্রতিটি ব্লকের বিডিওকে সেই ওয়েবসাইট খুলে নতুন কাজের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য লিখতে হচ্ছে, এবং তার পরে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই কাজের মঞ্জুরির নিদের্শ প্রিন্ট হয়ে বিডিওর হাতে চলে আসছে। জেলার এক বিডিওর কথায়, “নতুন নিয়মে কাজের সুবিধে হয়েছে। একদিকে যেমন জেলায় ঘনঘন রিপোর্ট পাঠানোর ঝক্কি কমেছে, কারণ ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই প্রতিটি কাজের খুটিনাটি জেলা দেখে নিতে পারছে। ফলত সময় বেঁচেছে। ”
জেলায় প্রকল্পের নোডাল আধিকারিক সমীরণ মন্ডল বলেন, “জলপাইড়ি জেলাতেই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। রাজ্যে এই নিয়ম যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে।” |