চোরাপথে পাচার হওয়া গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস ভরাটের অবৈধ কারবারের সঙ্গে কোনও গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর জড়িত রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিল ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ। গত রবিবার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার সময় আগুন লেগে উমরপুরের ৫টি দোকান ভস্মীভূত হলে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। ঘটনার পর সোমবার তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইন্ডিয়ান অয়েল এল-পি-জি শাখার চিফ এরিয়া ম্যানেজার বিমল কুমার মাথুর। তিনি বলেন “এই ধরনের ঘটনা উদ্বেগজনক।” ডেপুটি এরিয়া ম্যানেজার অলীক দে জানিয়েছেন, “লোকালয়ের মধ্যে এই ধরনের ব্যবসা চলতে থাকলে তা থেকে আরও বড় বিপদের সম্ভাবনা থেকে যায়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ইন্ডিয়ান অয়েলের সমস্ত গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
রবিবার উমরপুরে অগ্নিদগ্ধ এলাকা থেকে একাধিক সিলেন্ডার আটক করে পুলিশ। পুলিশের সন্দেহ গ্যাস ভর্তি থাকার কারণেই বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ভয়াবহ আকার নেয়। অবৈধ গ্যাসের কারবারে জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু রবিবারের এই ঘটনার পরও এই অবৈধ ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি জঙ্গিপুর এলাকায়। জঙ্গিপুর পুরসভার কংগ্রেসের কাউন্সিলর বিকাশ নন্দের অভিযোগ, “রঘুনাথগঞ্জ শহরের বাগানবাড়ি থেকে ফুলতলা পর্যন্ত অন্তত ৮ টি জায়গায় এই ভাবে গ্যাস ভরাটের অবৈধ কারবার চলছে। উমরপুরেও চলছে ৬টি এলাকায়। চলছে বালিঘাটা ও জঙ্গিপুর শহরের সেতুর আশেপাশে। কিছুদিন আগে একই ভাবে গাস ভরার সময় বিস্ফোরণ ঘটে বালিঘাটাতেও। ঘটনায় ২টি শিশু আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”
কিন্তু কী ভাবে রান্নার গ্যাস-সহ সিলিন্ডার চলে যাচ্ছে পাচারককারীদের হাতে? স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্যাসের দোকান থেকে বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ঠিক একই ভাবে বিভিন্ন ক্যাটারিং সংস্থাগুলিও গ্যাস পাচ্ছে যত খুশি। গৃহবধূ হাসি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গ্যাস বুক করার পর তা পেতে গড়িয়ে যাচ্ছে এক মাস সময়। এই সময়ের জন্য ২-৩ কিলোগ্রাম গ্যাস বোঝাই ছোট সিলিন্ডার কিনে আনতে হচ্ছে বাইরের বাজার থেকে। সেখানে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কিলোগ্রাম দরে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। এসব ছোট সিলিন্ডারে চা, টিফিন তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। জ্বালানো হচ্ছে আলোও।” গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর অম্বিকা সিংহ অবশ্য বলছেন, “অবৈধ গ্যাসের ব্যবসা কারা কী ভাবে চালাচ্ছে, কোথা থেকে সিলিন্ডার পাচ্ছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত পুলিশের।”
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এসডিও এনাউর রহমানও। তাঁর কথায়, “ যে করেই হোক এই ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। সক্রিয় হতে হবে পুলিশকেও।” পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “অবৈধ বিপজ্জনক ব্যবসা রুখতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উমরপুরের ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে। আর কোথায় কোথায় এই ব্যবসা চলছে তার খোঁজ শুরু করা হয়েছে।” |