রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • হায়দরাবাদ |
দুপুর বারোটার উপ্পল। পাশাপাশি দু’টো নেট টাঙানো। ব্যাট হাতে একটায় ঢুকে পড়েছেন রস টেলর। অন্যটায় ঢুকব-ঢুকব করছেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। একটু দূরে গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে হায়দরাবাদের পিচ কিউরেটর ওয়াই এল চন্দ্রশেখর।
কিউরেটর বিরক্ত কেন, আন্দাজ করা যায়। টেস্ট ম্যাচে ‘ফুলস্টপ’ পড়েছে চার দিনে, তার পরেও অতিথি টিম টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা প্র্যাক্টিস চালালে কোন মাঠ-পরিচালকের ভাল লাগে? কিন্তু টেলরদের উপায়ও নেই। হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা সকাল থেকে ব্যতিব্যস্ত নেট বোলার খুঁজতে। স্পিনার চাই। এবং কিউয়িদের স্পিনের ক্লাসে দেখা গেল, সে রকম দশ-বারো জন হাজির। অশ্বিনকে সামলানোর চেষ্টা আর কী।
সোজা কথায়, হায়দরাবাদ টেস্টের সমাপ্তি ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জোড়া চিন্তা ঢুকে পড়েছে ইনিংস হারের দাবড়ানি খাওয়া নিউজিল্যান্ড-শিবিরে। চিন্তা নম্বর এক, অবশ্যই অশ্বিন ও তাঁর স্পিনার দোসর ওঝা। আর দুই, ‘ডিআরএস’ নিয়ে উদ্ভুত অবাঞ্ছিত বিতর্ক।
বেঙ্গালুরু টেস্ট শুরু হতে বাকি চার দিন। ধোনি-সহ টিম ইন্ডিয়ার কাউকে এ দিন উপ্পল স্টেডিয়াম চত্বরে দেখা যায়নি। দেখা পাওয়ার কথাও নয়। বরং সোমবার গোটা দিনটা তাঁরা হোটেল-বন্দি থেকে মঙ্গলবার দুপুর-দুপুর পৌঁছচ্ছেন বেঙ্গালুরু। এবং এই জলভাত প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে ধোনির ‘ইয়াঙ্গিস্তান’-এর মেজাজটা কেমন?
এক কথায়, ফুরফুরে। সিরিজের শেষ টেস্ট এখনও বাকি। কিন্তু হায়দরাবাদের নায়ক রবিচন্দ্রন অশ্বিনের তাতেই সদর্প ঘোষণা, “০-৮ বিপর্যয় অতীত।” গত কালের পারফরম্যান্সের পর আইসিসি বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে ২৫ নম্বরে উঠে এসেছেন এই অফ স্পিনার। যা তাঁর কেরিয়ারের সেরা। অশ্বিন বলছেন, “বিশ্বের সব টিমের ক্ষেত্রেই এমন জিনিস ঘটেছে। কিন্তু ও সব নিয়ে ভাবলে চলে না। নতুন মরসুমের শুরুটা ভাল হল। বাকিটাও ভাল করতে হবে।” বিরাট কোহলি আবার ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। মানে, নিজের মেজাজ নিয়ে। এ দিন এক টিভি চ্যানেলকে বলে দিলেন, “ছোটবেলা থেকেই আমার চট করে মাথাটা গরম হয়ে যায়। মাঠে গালিগালাজও করে ফেলি। মেজাজটা নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।” সচিন তেন্ডুলকর, যিনি নতুন র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশ টেস্ট ব্যাটসম্যানের তালিকা থেকে নেমে এগারোয়, তাঁর মধ্যে বিরাটকে খুঁজে পান। যা শুনে রীতিমতো বিনয় বিরাটের গলায়। বলে ফেললেন, “কী বলছেন? কোথায় সচিন, কোথায় আমি! ওঁকে সামনে রেখেই তো এগোচ্ছি।”
কিউয়িদের এত বিনয়ের জায়গা নেই। অশ্বিনের স্পিনের ফাঁসে পড়ে কিউয়ি অধিনায়ক নিজেই অন্ধকারে পথ হাতড়াচ্ছেন। হায়দরাবাদের দু’ইনিংসে টেলরের রান মাত্র ২ আর ৭! তার মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে আউটের রিপ্লে সম্ভবত তিনি নিজেও আর কোনও দিন দেখতে চাইবেন না। টেলর বলছেন, “বেঙ্গালুরুতে ভাল কিছু করতে হলে, অশ্বিন-ওঝার ওষুধ খুঁজে বার করতে হবে।” কিন্তু কী ভাবে, জানেন না। নিউজিল্যান্ড থেকে আসা সাংবাদিকুলের আবার তীব্র রাগ, কেন শুধু ভারতের দাবি মেনে ‘ডিআরএস’ চালু করছে না আইসিসি? প্রথম টেস্টে ব্যর্থ কিউয়ি ক্রিকেটারদের নাম ফেলে আম্পায়ারের ভুলভ্রান্তির ফর্দ দেওয়া হচ্ছে। চেতেশ্বর পূজারা নাকি ১০৯ রানেই কট বিহাইন্ড ছিলেন। ব্রেন্ডন ম্যাকালামের এলবিডব্লিউ হাস্যকর। গুপ্টিলও নাকি আম্পয়ার স্টিভ ডেভিসের ‘অন্যায়’ শিকার। সব মিলিয়ে পাঁচটা সিদ্ধান্ত বিপক্ষে গিয়েছে। ‘ডিআরএস’ চালু থাকলে যা হত না। টিম ম্যানেজার ট্যাপিন এলারি যা শুনে বিরক্ত গলায় বললেন, “ঠিক আছে। কিন্তু চার দিনের মধ্যে ইনিংসে হারার পরে আমরা কী কোনও কিছু বলার জায়গায় আছি এ সব নিয়ে?” বোঝা যাচ্ছে, অশ্বিন-পাজলের উত্তর তাঁদের কাছে এই মুহূর্তে অনেক বেশি বাঞ্ছনীয়। তা ছাড়া ‘ডিআরএস’ বিতর্কের নিষ্পত্তি এখনই হওয়ারও নয়।
কী মানে দাঁড়ায় এর? ভিভিএস-কাঁটা কি বেঙ্গালুরুতেও ধোনির সঙ্গে যাচ্ছে? |