নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
কৌশলে অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি এড়িয়ে গেল তৃণমূল।
কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সোমবার খড়্গপুর পুরসভায় বোর্ড মিটিং ডাকা হয়েছিল। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে বামফ্রন্টের ৪ জন কাউন্সিলর এই প্রক্রিয়ায় যোগ দেননি। মিটিংয়ের শুরুতে সভাপতি নির্বাচন হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দলীয় কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের নাম সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। অন্য দিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে উপপুরপ্রধান তুষার চৌধুরীর নাম সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। সভাকক্ষে উপস্থিত ৩১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৬ জন কংগ্রেসের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। তৃণমূলের প্রস্তাবে সায় দেন দলের ১৫ জন কাউন্সিলর। এরপর অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই তৃণমূল কাউন্সিলররা একযোগে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। |
কিন্তু কেন? যাঁর নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এসেছে, সেই তৃণমূল পুরপ্রধান জহরলাল পাল বলেন, “নিয়ম বহির্ভূত ভাবে সভাপতি নির্বাচন হয়েছে। সাধারণত, পুরপ্রধানের পরিবর্তে উপপুরপ্রধানই সভাপতি হন। সভা পরিচালনা করেন। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।” তাঁর বক্তব্য, “আমরা সভা মুলতুবি রাখার আবেদনও জানিয়েছি ইও’র (এক্সিকিউটিভ অফিসার) কাছে। এই সভা অবৈধ।” প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডের অবশ্য বক্তব্য, “ইও’র উপস্থিতিতে সভা হয়েছে। পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই ওদের (তৃণমূলের) কাউন্সিলরেরা সভাকক্ষ ত্যাগ করেছেন।” তাঁর কথায়, “অনাস্থা ভোটে আমরাই জিতেছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর আমাদের পাশে রয়েছেন। ১৫ দিনের মধ্যে পুরপ্রধান নির্বাচন হবে। আশা করি, ওই নির্বাচনেও আমরা জিতব।” সভা শেষে পুরসভার ইও বাসুদেব পাল বলেন, “সভাপতি নির্বাচনে চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের পক্ষে ১৬ জন কাউন্সিলরের সমর্থন ছিল। এরপর যা যা হয়েছে, তা লিখিত ভাবেই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। কর্তৃপক্ষ যা নির্দেশ দেবেন, সেই মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।” অনাস্থা প্রস্তাব কী পাশ হয়ে গেল? ইও’র বক্তব্য, “আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” কোনও মন্তব্য করতে চাননি খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদত্ত চৌধুরীও।
গত ১৪ অগস্ট তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, তৃণমূলের বোর্ড দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সোমবার খড়্গপুর পুরসভায় বোর্ড মিটিং ডাকা হয়েছিল। খড়্গপুর শহরে ৩৫ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। এর মধ্যে তৃণমূলের ১৫ জন, কংগ্রেসের ১৪ জন, সিপিআইয়ের ৩ জন, সিপিএমের ১ জন, নির্দল ১ জন ও বিজেপি’র ১ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। নির্দল কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মা প্রকাশ্যে কংগ্রেসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি অনাস্থা প্রস্তাবে সইও করেছিলেন। ফ্রন্টের ৪ জন ও বিজেপি’র ১ জন কাউন্সিলর কী অবস্থান নেন, তা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই জল্পনা চলছিল রেলশহরে। ফ্রন্ট নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছিলেন, দলীয় কাউন্সিলরেরা কংগ্রেস-তৃণমূল কোনও পক্ষই অবলম্বন করবেন না। সেই মতো সভার প্রক্রিয়াতেই যোগ দেননি ফ্রন্টের ৪ জন কাউন্সিলর। তবে একমাত্র বিজেপি কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী প্রকাশ্যে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সভার সভাপতি নির্বাচনে বিজেপি’র অবস্থান স্পষ্ট হতেই তৃণমূল বুঝে যায়, তাদের পক্ষে সভায় উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরের সমর্থন নেই। এরপরই দলীয় কাউন্সিলরেরা একযোগে সভাকক্ষ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ দিন সভাপতি হিসেবে চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের নাম প্রস্তাব করেছিলেন নির্দল কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মা। অন্য দিকে, তুষার চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর জয়া পাল।
কংগ্রেসের দাবি, সভাপতির উপস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাবের সমর্থনে সওয়াল করেছেন ১৬ জন কাউন্সিলর। ফলে, অনাস্থা প্রস্তাব পাশও হয়ে গিয়েছে। অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, সভাপতি নির্বাচনই যখন অবৈধ, তখন সভাপতির উপস্থিতিতে এ ভাবে কোনও প্রস্তাবের সমর্থনে সওয়াল করা যায় না। তবে তৃণমূলেরই এক কাউন্সিলর বলেন, “সভাপতি নির্বাচন বৈধ কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পুর-দফতর। তবে আমরা এ দিন দলের ঐক্যবদ্ধ চেরাহাটা তুলে ধরতে পেরেছি। ইদানীং শহর জুড়ে প্রচার চলছিল, আমাদের মধ্যে নাকি মতবিরোধ রয়েছে। এটা যে অপপ্রচার, তা অন্তত স্পষ্ট হয়েছে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পুর-দফতর যদি এই সভাকে বৈধতা দেয়, তাহলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুরপ্রধান নির্বাচনের জন্য ফের বোর্ড মিটিং হবে। তৃণমূল পুরবোর্ড ধরে রাখতে পারবে কি না, তখনই তা স্পষ্ট হবে। |