পাশাপাশি দু’টি মাটির বাড়ি। এক ঘরে বাবা-মা। অন্য ঘরে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে শুয়েছিলেন রঞ্জিত বাগদি। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের হিংজুড়ি গ্রামে রবিবার রাত ১২টা নাগাদ গ্রামে ঢুকে পড়েছিল হাতির পালের গোদা এক বিশাল দাঁতাল। মাটির দেওয়াল ধসে পড়ার আওয়াজ পেয়ে ধড়মড় করে উঠে পড়েন রঞ্জিতের বাবা তারাপদ বাগদি। কুপির আলোয় দেওয়ালের বাইরে দেখেন, হাতির বিরাট শুঁড় টানছে চালের বস্তা। চুপি চুপি স্ত্রীকে জাগিয়ে দরজা খুলে দে ছুট।
ভূমিকম্পের মতো বাড়ি দুলছে দেখে ততক্ষণে জেগে গিয়েছেন রঞ্জিতও। স্ত্রী পদ্মাকে জড়িয়ে প্রতিবেশীদের উদ্দেশে রঞ্জিত ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে আর্ত চিৎকার শুরু করেন। গ্রামে সার্চ লাইট নেই, হাতি তাড়ানোর হুলা-মশালও নেই। তবু হাতে হ্যারিকেন-লন্ঠন নিয়ে হইচই করতে করতে বেরিয়ে পড়লেন জনা তিরিশেক গ্রামবাসী। উদ্ধার করলেন তারাপদবাবুর ছেলে-বউমাকে। তিন ঘণ্টার চেষ্টায় গ্রাম থেকে ওই দাঁতালকেও খেদালেন। তারাপদবাবুর বাড়ি অবশ্য ধুলিসাৎ। সোমবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, দু’টি ভাঙা বাড়ির সামনে আশ্রয়হীন পুরো পরিবার। |
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
দুপুরেও উনুনে রান্না চড়েনি। রান্নার জিনিসপত্র হাতির পায়ের চাপে তোবড়ানো। বস্তা ভর্তি চালের এক মুঠোও নেই। কাঁদতে-কাঁদতে পেশায় দিনমজুর তারাপদবাবু বললেন, “বহু কষ্টে এক বস্তা চাল জমিয়েছিলাম। সব শেষ। মাথার ছাউনিটুকুও উধাও। ভরা বর্ষায় থাকব কোথায়?” তাঁর ক্ষোভ, “বন কর্মীরা শুধু দেখেই গেলেন। হাতে তো কিছুই দিলেন না।” প্রতিবেশী কার্তিক মহন্ত, উদয় বাগদিরা বলেন, “হাতিটা সরতেই চাইছিল না। তেড়ে আসছিল। বহু চেষ্টায় ভয় পাইয়ে সরিয়ে রঞ্জিত আর ওর বউকে বাঁচাতে পেরেছি।” হাতিটি গ্রাম থেকে ফেরার পথে আরও দুই গ্রামবাসীর বাড়ি ভাঙচুর করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, “জঙ্গল ছেড়ে হাতিরা লোকালয়ে ঢুকছে। ক্ষয়ক্ষতি করছে। বন দফতরের কোনও হেলদোল নেই। ডেকেও তাদের পাওয়া যায় না।”
ঘটনার কথা স্বীকার করে বন দফতরের রাধানগর রেঞ্জের আধিকারিক শতদল মাহাতো বলেন, “ময়ূরঝর্নার ২৫টি হাতির একটি দল ওই এলাকায় রয়েছে। ওদের দলপতি গ্রামটিতে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। আমি বিট অফিসারকে রিপোর্ট দিতে বলেছি। ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।” বিডিও (বিষ্ণুপুর ব্লক) সুদীপ্ত সাঁতরা জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। ব্লকের ত্রাণ দফতর সাহায্য করবে। একই রাতে বিষ্ণুপুর ব্লকের মড়ার গ্রামে এক প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ীর মুদির দোকান এবং আরও দুই বাসিন্দার বাড়িও ভাঙচুর করেছে এক দাঁতাল। |