গ্রামের মানুষের কাছে ‘কংগ্রেস ঘাস’ বা ‘গাজর ঘাস’ নামে পরিচিত পার্থেনিয়ামই কৃষিজমিতে উৎপাদন কমানোর ক্ষেত্রে অন্যতম দায়ী। জমিতে এই আগাছার ক্রমাগত বংশবৃদ্ধিতে চিন্তিত পরিবেশ সচেতন মানুষ। পরিবেশের উপর পার্থেনিয়ামের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি কীর্ণাহারের শিবচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি সচেতনতা শিবির হয়ে গেল। ছাত্র, শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের নিয়ে গত রবিবার হয়ে যাওয়া ওই শিবিরের আয়োজক ছিল কেন্দ্র সরকারের সর্বভারতীয় সম্বন্বিত আগাছা দমন গবেষণা কার্যক্রমের বিশ্বভারতী কেন্দ্র।
এ দিন সংশ্লিষ্ট বিশ্বভারতী কেন্দ্রের মূল তদন্তকারী আধিকারিক তথা পল্লিশিক্ষাভবনের অধ্যাপক বুদ্ধদেব দুয়ারি বলেন, “আমরা কৃষক, চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ সবাইকে পার্থেনিয়াম আগাছা দমনের দাবি জানাচ্ছি। কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর এই আগাছার প্রভাব ক্ষতিকারক। তাই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা প্রতিষেধকমূলক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও উদ্যোগী হয়েছি।” বুদ্ধদেববাবুর দাবি, গবেষণায় জানা গিয়েছে, মানুষের হাঁপানি ও চর্মরোগের মূল উৎস হল এই ক্ষতিকারক আগাছা। এ ছাড়া অ্যালার্জিপ্রবণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই আগাছা ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। পশুদের বিভিন্ন চর্মরোগেরও মূল কারণও পার্থেনিয়ামই বলে তিনি জানালেন।
কিন্তু কী ভাবে রোখা যায় এই পার্থেনিয়াম?
বুদ্ধদেববাবু জানালেন, একমাত্র ‘মেক্সিকান বিটল’ (জাইগ্রোগামা বাইকোলোরাটা) নামক পোকাই শুধুমাত্র পার্থেনিয়াম খায়। তাই পার্থেনিয়াম প্রভাবিত এলাকায় ওই পোকা ছেড়ে দিলে লাভ হয়। তিনি বলেন, “গাঁদা, কালো তুলসি প্রভৃতির চারা ছড়িয়ে দিলেও লাভ পাওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতী এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। আমরা রাজ্যের কৃষি দপ্তরের সঙ্গেও এই বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করেছি।” এ প্রসঙ্গে বোলপুরের সহ কৃষি অধিকর্তা অরিন্দম চক্রবর্তী বলেন, “আলোচনা হয়েছে। সুনিদিষ্ট প্রস্তাব পেলে আরও আলোচনা করা হবে।” অন্য দিকে, ইতিমধ্যেই ‘প্রান্তিক ওয়েস্ট আবাসিক ফোরাম’ নামে একটি স্থানীয় সংগঠন পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বোলপুর মহকুমা শাসক, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জেলাশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এলাকায় পার্থেনিয়াম বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। এলাকার কৃষিজীবী সংগঠনের সভাপতি প্রবীর রায়ের দাবি, পার্থেনিয়ামের কারণে ফসলের উৎপাদন এবং খাদ্যশস্যের গুণগত মান দুই-ই কমছে। |