ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে আসছিল লোকটা। ‘পাগলের’ মতো চিৎকার করছিল, “সিংহ... ওখানে একটা সিংহ।” ‘পাগলই বটে’ লোকটা বলে কী! শহর না হোক, শহরতলি তো বটে। লন্ডন থেকে এসেক্স আর কত দূর, এখানে সিংহ! প্রথমে এমনই ভেবেছিলেন বছর চল্লিশের রিচ বেকার। যদিও ঘোর কাটল কয়েক মিনিটের মধ্যেই।
গত ২৪ ঘণ্টায় এমনই ঘটনার ‘সাক্ষী’ হল এসেক্স। সিংহ নিধনে ছুটে এল পুলিশ। আকাশে নজরদারি কপ্টার। টান টান উত্তেজনা। বাড়ির দরজায় খিল দিয়ে লুকিয়ে গোটা শহর।
রবিবার তখন ঘড়ির কাঁটায় সন্ধে সাতটা। দুই ছেলেকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন রোমফোর্ডের ভ্যান চালক রিচ। বললেন, “উল্টো দিক ছুটে আসা লোকটাকে দেখে অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল না। ওঁর চোখমুখ থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছিল ভয়।” এ সময় হঠাৎই ধূসর রঙের কেশরওয়ালা জন্তুটাকে দেখতে পান তিনি। মাঠের মধ্যে ‘সদর্পে’ ঘুরে বেড়াচ্ছে। বললেন, “আমি এক লক্ষ ভাগ নিশ্চিত। ওটা সিংহই। বিশাল চেহারা, বাদামি রং, কেশরও দেখেছি।” বলে চললেন রিচ, “ছেলেদের হাত শক্ত করে ধরে গাড়ির দিকে ছুট লাগাই। ওরাও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল।” এর মধ্যেই পশুরাজের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে ফেলে এক দল লোক। খবর যায় পুলিশের কাছে। টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে এসেক্সে ‘লায়ন’। এ দিকে শহরের যেখানে ঘটনার ঘনঘটা, তার একেবারে কাছেই চে কেভিনের বাড়ি। |
এই ছবিই ছড়িয়ে পড়েছে টুইটারে |
তিনি বলেন, “স্ত্রীর সঙ্গে বসার ঘরে ছিলাম। দশটা নাগাদ হঠাৎই কেমন যেন একটা আওয়াজ শুনলাম। অনেকটা যেন সিংহের গর্জন। কিন্তু বিশ্বাস হয়নি। স্ত্রীকে এক বার জিজ্ঞাসাও করেছিলাম।” আজ প্রাতর্ভ্রমণে বেড়িয়ে রাস্তায় প্রচুর পুলিশ দেখতে পান কেভিন। তখনও তিনি ভাবতে পারেননি আসামি একটি সিংহ।
খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে এসেছিল পুলিশ। আসে ঘুমপাড়ানি গুলিও। হেলিকপ্টারে করে শুরু হয় জোর তল্লাশি। কিন্তু যাকে নিয়ে এত শোরগোল, তিনি কই? এলেনই বা কোথা থেকে?
প্রথমে সবাই মনে করেছিলেন সার্কাস থেকে পালিয়েছে বোধহয়। কাছেই গ্রেট ব্রিটিশ সার্কাসের ছাউনিও রয়েছে। কিন্তু পরে সে সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যায়। সার্কাসের তরফে জানানো হয়, তাদের কোনও সিংহই নেই। তা ছাড়া, তাদের কোনও জন্তুও খোয়া যায়নি। তবে? এ বার খোঁজ পড়ে চিড়িয়াখানায়। বাতিল হয়ে যায় সে সম্ভাবনাও। এর পরে আর একটি কারণই পড়ে থাকে। কারও ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়েছে সিংহটি। কিন্তু ব্রিটেনে এমন হাতেগোনা কয়েক জনই রয়েছেন, যাঁদের কাছ থেকেও ‘নিরুদ্দেশ’ সম্পর্কে কোনও অভিযোগ নেই।
এ দিকে, খানাতল্লাশি সত্ত্বেও এসেক্সের ভিভিআইপি অতিথির সন্ধান পেল না পুলিশ। পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, “ওটা নিশ্চই বনবিড়াল ছিল। স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু অনেক খুঁজেও তো কিছু পেলাম না।” টুইটারে ছবি দেখে একই কথা বলছেন কলচেস্টার চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর অ্যান্টনি ট্রোপেনো। তাঁর কথায়, “ছবিতে মাঠের মধ্যে একটা জন্তু দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এতটাই অস্পষ্ট যে পরিষ্কার করে কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছে না।” কিছুটা আশ্বস্ত স্থানীয় বাসিন্দা সত্যিই হয়তো বাঘ-সিংহ কিছুই নয়। হয়তো ওটা ‘বাঘের মাসি’। তবে ধূসর রঙের কেশরওয়ালা সেই পশুর গল্পে এখনও বিভোর এসেক্সবাসী। |